বলটা পেটানোর জন্য; এটুকু তো আমরাও জানি।
প্রশ্ন হলো, বলটাকে সবচেয়ে ভয়ানকভাবে কে পিটিয়েছেন? স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস? হতে পারেন। আবার কেউ হয়তো লাফ দিয়ে এই যুগে চলে আসতে চাইবেন। বলবেন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, ম্যাথু হেইডেন বা ধরুন এই ক্রিস গেইলের কথা। কিন্তু স্যার জ্যাক হবস বলেছেন, এরা কেউ নন; সর্বকালের সেরা বোলার হন্তারক ছিলেন গিলবার্ট জেসপ।
নামটা আপনাকে অবাক করতে পারে। ক্রিকেট ইতিহাসের নিবিঢ় পাঠক না হলে এই নামটা জানার কথাই নয়। কিন্তু আপনাকে আশ্চর্য করে দিয়ে খোদ রিচি বেনোও বলছেন, ‘ওয়ানডে ক্রিকেটের জন্মের আগেই জন্মেছিলেন সর্বকালের সেরা সীমিত ওভারের ব্যাটসম্যান।’
হ্যাঁ, তিনিই ইংলিশ ক্রিকেটার গিলবার্ট জেসপ; দ্য ক্রাউচার।
মোটামুটি বিশালদেহী মানুষ ছিলেন জেসপ। সেই সাথে উইকেটে বিচিত্র ধরণের কাঁধ উচু করা স্ট্যান্স নিতেন। ফলে লোকে ‘দ্য ক্রাউচার; বলে ডাকতো। মূলত বোলিং অলরাউন্ডার ছিলেন। কিন্তু ক্রিকেট ইতিহাস তাকে মনে রেখেছে মারকাটারি ব্যাটিংয়ের জন্য।
আমরা এমন এক সময়ের কথা বলছি, যখন বোলারদের প্রতি নানা ধরণের বিধি নিষেধ দেওয়া ছিলো না। ওভারে সব কটি বাউন্সার করা যেতো, ফ্রন্ট ফুট নো বল ছিলো না এবং বডি লাইন বোলিং করা যেতো। সেই সময়ে জেসপ ছিলেন বোলারদের জন্য মূর্তিমান এক আতঙ্ক।
গ্লুস্টারশায়ারের হয়ে খেলা প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটের প্রথম বলটাতেই চার মেরেছিলেন। ওটাই জেসপের ক্যারিয়ারের বিজ্ঞাপন ছিলো।
৫৩টি প্রথম শ্রেনীর সেঞ্চুরি করেছেন। এই সময়ে বলের হিসাব তো রাখা হতো না। তবে সময়ের হিসাব থেকে বুঝতে পারবেন, কী গতিতে তিনি রান তুলতেন। হিসাব বলছে, প্রতি ঘন্টায় গড়ে ৮২.৭ রান করে তুলতেন জেসপ।
আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে জেসপের সেরা রূপটা দেখা যায় ১৯০২ সালে। ওভালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ব্যাটিং ধ্বসে পড়েছিলো ইংল্যান্ড। ৪৮ রানে ৫ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর উইকেটে এসেছিলেন তিনি। এই সময় অন্তত একটু সামলে থাকার কথা। কিন্তু কীসের কী! জেসপ উল্টো ত্রাস শুরু করে দিলেন।
৪৩ মিনিটে ফিফটি ও ৭৫ মিনিটে সেঞ্চুরি করে ফেলেন। শেষ পর্যন্ত ৭৭ মিনিটের মাথায় ১০৪ রান করে আউট হন। এর মধ্যে ১৭টি ‘চার’ ছিলো। এখানে একটা কথা উল্লেখ করা দরকার ছিলো। তখন বাউন্ডারি ওপর দিয়ে পড়া আজকের দিনের ছক্কাগুলোও ‘চার’ দেওয়া হতো। তখন ছক্কা হতে গেলে বল স্টেডিয়ামের বাইরে পাঠাতে হতো।
একটি ইংলিশ পত্রিকা জেসপের ওই ইনিংসটির আদ্যোপান্ত খুজে বের করেছিলো। তাতে দেখা যাচ্ছে, তিনি ৭৬ বলে (মতান্তরে ৭৭) সেঞ্চুরি করেছিলেন। সে হিসেবে টেস্ট ইতিহাসের তৃতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরিটা জেসপের। বাকী দুটি ১৯২১ সালের পরে।
জেসপ ক্যারিয়ারের শুরুতে বেশ পরাক্রমশালী পেসার ছিলেন। কাউন্টিতে তার ছাপও রেখেছিলেন। পরে পেসটা কমে এসেছিলো। পরে মূলত ব্যাটিং শক্তিশালী হয়ে উঠেছিলো। ৫ বার ২০০ মিনিটের কম সময়ে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন। তিন বার ১৫০ মিনিটের কাছাকাছি সময়ে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন। এতেই বুঝতে পারার কথা যে, কী আগ্রাসন ছিলো তার ব্যাটে।
ফিল্ডার হিসেবে ছিলেন তুখোড়। কাভার পয়েন্টে ফিল্ডিং করতেন। তাকে ফাকি দেওয়া খুব কঠিন ছিলো। রিচি বেনো যথার্থই বলেছেন, কখনো সীমিত ওভারের ক্রিকেট না খেলা সেরা ওয়ানডে ক্রিকেটার ছিলেন জেসপ।
আর স্যার জ্যাক হবস তার সম্পর্কে বলেছেন, ‘আমার দেখা সন্দেহ ছাড়াই সবচেয়ে ধারাবাহিক দ্রুত রান স্কোরার ছিলেন তিনি। তিনি সত্যিকারের বিগ হিটার ছিলেন। তাকে এমন কোনো বল করা কঠিন ছিলো, যেটাতে তিনি স্কোর করতে পারবেন না। আমি যে, কখনো বোলিং করতাম না, জেসপকে দেখে সে জন্য নিজেকে ভাগ্যবান মনে হতো। তিনি অবশ্যই দর্শকের জন্য অসাধারণ বিনোদনদাতা ছিলেন; আমার বলতে দ্বিধা নেই, ডন ব্র্যাডম্যানের চেয়েও বড় বিনোদনদাতা।’
এরপর আর কথার দরকার আছে বলে মনে হয় না।