জার্মান ফুটবলে এক বঙ্গ সন্তান

ইউরোপিয়ান ক্লাবের সমর্থকের অভাব কলকাতায় নেই।

রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনার তো রীতিমতো পতাকা ওড়ে শহরে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, চেলসি, বায়ার্ন মিউনিখের সমর্থকও কম নয়। আজকাল ম্যানচেস্টার সিটি বা পিএসজিরও সমর্থন আছে। তাই বলে বায়ার লেভারকুসেন বা ওয়ার্ডার ব্রেমেন!

বিশ্বাস করুন, দমদমে গেলে আপনি দু চার জন লেভারকুসেন, ব্রেমেন তো বটেই, স্টুটগার্ড বা বোকাম সমর্থকও খুজে পেতে পারেন।

কিন্তু দমদমের সাথে জার্মান কানেকশনটা কী?

আছে। আছে। আর এই কানেকশনটাই আমাদের গল্পের বিষয়। এই কানেকশনটা হলেন রবিন দত্ত। জার্মানির এক বঙ্গ সন্তান রবিন দত্ত। জার্মান ফুটবলের মোটামুটি নামকরা কোচ রবিন দত্ত।

এমনিতে রবিন দত্ত খুব বড় কোনো সফল কোচ নন। বরং বড় ক্লাবের দায়িত্ব নিয়ে ভরাডুবির জন্যই আলোচিত তিনি। কিন্তু আমাদের কাছে রবিন দত্তর একটু বাড়তি গুরুত্ব আছে। কারণ, তিনি ইউরোপের কোনো শীর্ষ লিগে কোচিং করানো একমাত্র বঙ্গ সন্তান।

রবিন দত্তর জন্ম অবশ্য দমদমে নয়। তার জন্ম কোলনে। বাবা জার্মানিতে এসেছিলেন ষাটের দশকের শুরুতে; কলকাতার দমদম থেকে। কোলনে এসে এক জার্মান নারীর সাথে বিয়ে এবং রবিন দত্তর জন্ম। রবিন ছোটবেলা থেকেই ফুটবলার হয়ে উঠতে চেয়েছিলেন। তার স্বপ্ন ছিলো জার্মান জাতীয় দলে খেলা। কিন্তু ফরোয়ার্ড রবিন পারেননি একজন লোথার ম্যাথিউস হয়ে উঠতে।

জার্মান লিগের পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম ডিভিশনে ঘোরাঘুরি করেই তার ক্যারিয়ার কেটেছে। নিজের ভবিষ্যত বুঝতে পেরে অল্প বয়সেই খেলা ছেড়ে কোচিংয়ে নাম লেখান। আর এখানে সাফল্যটা কম মেলেনি।

নিজের সাবেক ক্লাব টিএসজি লিওনবার্গের দায়িত্ব নিয়ে কোচিং জগতে প্রবেশ করেন। এরপর এরকম আরও একটি ছোট ক্লাবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ছোট ছোট দলে বেশ কিছু সাফল্য পাওয়ায় তাকে দলে ভিড়িয়ে ফেলে স্টুটগার্টার কিকার্স। এরপর সেকেন্ড ডিভিশনের দল এসসি ফ্রেইবার্গের দায়িত্ব নিয়ে তাদের রেলিগেশন ঠেকিয়ে দেন। আর এই কান্ডই তাকে লেভারকুসেনের রাডারে নিয়ে আসে।

২০১১ সালে আগের বারের বুন্দেসলিগা রানার্সআপ লেভারকুসেনের কোচ নিযুক্ত হন রবিন। দায়িত্ব নিয়ে বলেন, তিনি আগেরবারের চেয়ে ভালো কিছু করতে চান। সেটা হয়ে ওঠেনি। লিগে তো ভালো কিছু হয়ই নি। বরং চ্যাম্পিয়নস লিগে বার্সেলোনার বিপক্ষে ৭-১ গোলে হার হজম করতে হয়েছিলো। সেখানেই শেষ হয়ে যায় রবিনের লেভারকুসেন অধ্যায়।

এরপর রবিন জার্মান ফুটবল ফেডারেশনের স্পোর্টিং ডিরেক্টর হিসেবে নিয়োগ পান। সেই চাকরি ছেড়ে ২০১৩ সালে তিনি ব্রেমেনের দায়িত্ব নেন। এখানেও এক বছরের বেশী থাকতে পারেননি। এরপর রবিন স্টুটগার্ডের বোর্ড পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান। আর সর্বশেষ বোকাম নামে একটা ক্লাবে কাজ করেছেন।

রবিনের ক্যারিয়ারটাকে বঙ্গ সন্তানের দৃষ্টিতে দেখলে যথেষ্ঠ সমৃদ্ধ মনে হবে। কারণ এই অবধি এই উপমহাদেশের বংশোদ্ভুত কেউ এর আগে পৌছাতে পারেননি। তবে সামগ্রিক বিচারে ক্যারিয়ারটা হতাশার।

রবিন অবশ্য তার বাঙ্গালী পরিচয়টাকে ভুলে যাননি। তিনি এখনও সপ্তাহে একদিন বাসায় বাংলার খাবার রান্না করেন। বাবা যতদিন বেচে ছিলেন, বাসায় নিয়মিতই বাংলা খাবার রান্না হতো। একটা সময় নিয়মিতই দমদমে আসতেন রবিন। সর্বশেষ এসেছিলেন প্রায় ৩০ বছর আগে।

এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আবার ভারতের ফিরে আসার সম্ভাবনা তিনি উড়িয়ে দেন না। বিশেষ করে এখানে একটা অ্যাকাডেমি খোলা বা একটা ক্লাবের দায়িত্ব নেওয়ার খুব সম্ভাবনা আছে। রবিন বলছিলেন, ‘কী হবে তো জানি নাম। আজকাল ক্লাবগুলোতে শুধু কোচ হায়ার ও ফায়ার হয়। একটা সময় হয়তো কলকাতায় ফিরে যাবো।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link