ছোট্ট কাঁধে বিরাট দায়িত্ব
প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়াটা অবশ্যই বাভুমার জন্য বিরাট ব্যাপার। তবে মাত্র কিছু ম্যাচ খেলা বাভুমাকে অধিনায়কত্বর ভার দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট কতটা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটার প্রমাণ হবে আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই। তবে বাভুমার উপর যে এখন গুরুদায়িত্ব এতে তার ব্যক্তিগত পার্ফরমেন্সে কোনো প্রভাব পড়ে কিনা সেটিই দেখার বিষয়।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ অধিনায়ক হিসেবে রঙিন পোশাকে নেতৃত্ব দিবেন দলকে। সম্প্রতি ঘরোয়া ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হওয়া লায়ন্সের অধিনায়ক ছিলেন তিনি, এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকান টেস্ট দলের সহ-অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকা জাতীয় দলের জার্সি গায়ে আগামি দুই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও পরবর্তী ওয়ানডে বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দিবেন তিনি।
হ্যাঁ, সদ্য রঙিন পোশাকে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলের দায়িত্ব পাওয়া প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ খেলোয়াড় টেম্বা বাভুমার কথাই বলছি।
২০১৮ সালে শিয়া কলিশি প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ খেলোয়াড় হিসেবে অধিনায়কত্ব করেন দক্ষিণ আফ্রিকা রাগবি ইউনিয়ন দলে। ২০১৯ সালে বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দেন শিয়া কলিশি। শিয়া কলিশির পর ২য় কৃষ্ণাঙ্গ ও ক্রিকেটে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে অধিনায়কের দায়িত্ব পেলেন বাভুমা। কৃষ্ণাঙ্গ জাতির জন্য এটা অবশ্যই বড় একটি অর্জন।
১৭ মে ১৯৯০, কুইন্সল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন বাভুমা। নিউল্যান্ডসের সাউথ আফ্রিকান কলেজ জুনিয়র স্কুলে তিনি পড়াশোনা করেন। এছাড়া স্যান্ডটনের সেন্ট ডেভিডস ম্যারিস্ট ইনান্দা হাইস্কুলে তিনি পড়াশোনা করেন।
এরপর ২০০৮ সালে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ইস্টার্ন প্রভিন্সের বিপক্ষে অভিষেক ঘটে বাভুমা । খেলায় তিনি মাত্র চার রান করে তিনি আউট হন। ২০১০-১১ মৌসুমে ঘরোয়া ক্রিকেটে লায়ন্সের হয়ে অভিষেক হয় তার।
সুপারস্পোর্টস সিরিজের প্রথম সিজনে ৬০+ গড়ে চার ম্যাচে করেন ২৪২ রান। এর মধ্যে নাইটসের বিরুদ্ধে করেন অপরাজিত ১২৪* রান! ঐ খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার জিতেন। পরের মৌসুমে ৫৩ গড়ে করেন ৬৩৭ রান! ২০১২-১৩ মৌসুমে সেরা ৫জনের রান তালিকায় ছিলেন বাভুমা।
ঘরোয়া ক্রিকেটে দূর্দান্ত পার্ফরমেন্স করে জায়গা করে নেন দক্ষিণ আফ্রিকা জাতীয় দলে। ২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সাদা পোশাকে অভিষেক হয় বাভুমার। ৫ জানুয়ারি ২০১৬, প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ক্রিকেটার হিসেবে সাদা পোশাকে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে শতক গড়েন বাভুমা। এরপরই একই বছর ২০১৬ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডেতে অভিষেক হয় বাভুমার, আর অভিষেকেই শতক গড়েন তিনি!
ব্যাটের সাথে সাথে মাঝেমধ্যে টুকটাক হাত ঘোরাতেও জানেন বাভুমা! অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২০১৬ সালে প্রথম টেস্ট উইকেট লাভ করেন তিনি। ২০১৭ সালের মে মাসে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটের বার্ষিক এওয়ার্ডসে ক্রিকেটে দক্ষতার জন্য পুরষ্কার পান তিনি। আগস্ট ২০১৯ সালে ভারতের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডে ডাক পান বাভুমা। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সালে ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয় তাঁর।
সাদা পোশাকে দীর্ঘ সময় কাটালেও রঙিন পোশাকে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে মোটে ম্যাচ খেলেছেন ১৪টি! ৪৪ টেস্টে ৩২ গড়ে ২০৯৭ রান, আছে ১ শতক ও ১৫ অর্ধশতক। অপরদিকে, ৬ ওয়ানডেতে ৫৫ গড়ে ৩৩৫ রান! আছে ১ টি করে শতক ও অর্ধশতক।
৮ টি-টোয়েন্টি তে ৩৫ গড়ে ২৪৯ রান, সর্বোচ্চ ৪৯। সাদা পোশাকে দীর্ঘ সময় কাটালেও ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে খেলা স্বল্প সময়ের পরিসংখ্যান বেশ ভালো অবস্থানেই আছে, তবে রঙিন পোশাকে মাত্র ১৪ ম্যাচ খেলা বাভুমাকে আগামী দু’টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সাথে ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের দায়িত্ব দিয়ে বেশ চ্যালেঞ্জিং সিদ্ধান্তই নিয়েছেন বটে ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকা। দুই ফরম্যাটে নিজের জায়গা পাঁকা করতে যতটা সময় লাগে তাঁর আগেই পেয়ে গেছেন লম্বা সময়ের জন্য অধিনায়কের দায়িত্ব।
প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়াটা অবশ্যই বাভুমার জন্য বিরাট ব্যাপার। তবে মাত্র কিছু ম্যাচ খেলা বাভুমাকে অধিনায়কত্বর ভার দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট কতটা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটার প্রমাণ হবে আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই। তবে বাভুমার উপর যে এখন গুরুদায়িত্ব এতে তার ব্যক্তিগত পার্ফরমেন্সে কোনো প্রভাব পড়ে কিনা সেটিই দেখার বিষয়।