৩০ জুলাই, ২০০৯ সাল। বার্মিংহামের এক রোদ ঝলমলে সকালে টস করতে নেমেছেন দুই অধিনায়ক। খানিক বাদেই যে শুরু হবে অ্যাশেজের তৃতীয় টেস্ট। তো টস হয়ে গেল। অ্যান্ড্রু স্ট্রাউসের বিপক্ষে টসে জিতে ব্যাটিং নিলেন সফরকারী দলের অধিনায়ক রিকি পন্টিং। কিন্তু টসের পর ওয়ার্ম আপ করার সময় ঘটে গেল এক অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা।
প্লেয়িং ইলেভেনে থাকা উইকেটরক্ষক ব্র্যাড হাডিন আঙুলে মারাত্মক চোট পেলেন। বাঁ হাতের অনামিকায় ধরা পড়ল ফ্র্যাকচার। কিপিং তো দূরের কথা, তাঁর পক্ষে এই ম্যাচে আর মাঠেই নামা সম্ভব না!
এখন কী করা যায়? এদিকে টস হয়ে গেছে, টিম শিটে ব্র্যাড হাডিনের নাম অলরেডি উঠে গেছে। কোনভাবে একটা পরিবর্তন আনা যায় কি? কিন্তু তার জন্য তো প্রতিপক্ষ অধিনায়ক ও ম্যাচ রেফারির অনুমতি লাগবে। আর এরকম ঘটনা টেস্ট ক্রিকেটের ১৩৮ বছরের ইতিহাসে তখন অবধি একবারও ঘটে নি!
অস্ট্রেলিয়া দলের ম্যানেজার স্টিভ বার্নার্ড ছুটে গেলন ইংলিশ ড্রেসিংরুমে। দলের কোচ অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারকে বোঝালেন পুরো বিষয়টা। খেলোয়াড় পাল্টানোর অনুমতি চেয়ে বিনীত অনুরোধ জানালেন। ফ্লাওয়ার তাতে মৌখিকভাবে সম্মতি দিলেও পুরো ব্যাপারটা ছেড়ে দিলেন অধিনায়ক স্ট্রাউসের হাতে। এবং তারপর সেটাই ঘটল যা টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে আগে কখনো ঘটে নি!
একবার শুনেই রাজি হয়ে গেলেন ব্রিটিশ অধিনায়ক স্ট্রাউস; গড়লেন ক্রিকেট মাঠে স্পোর্টসম্যানশিপের এক অনন্য নজির। ক্রিকেটটা যে আসলেই ভদ্রলোকের খেলা সেটা মনে করিয়ে দিলেন আরও একবার।
বিপক্ষ দলের অধিনায়কের পূর্ণ সম্মতি থাকায় ম্যাচ রেফারি জেফ ক্রোও আর আপত্তি করলেন না। টস হয়ে যাবার পরেও তাই একাদশে পরিবর্তন আনা সম্ভব হল, ব্র্যাড হাডিনের বদলি হিসেবে অভিষেক হয়ে গেল উইকেটরক্ষক গ্রাহাম ম্যানু’র।
মজার ব্যাপার হল, গ্রাহাম ম্যানুর টেস্ট ক্যারিয়ার ওই এক ম্যাচেই সীমাবদ্ধ। ওটাই ছিল তাঁর জীবনের প্রথম ও শেষ টেস্ট ম্যাচ। তা কত রান করেছিলেন ম্যানু? প্রথম ইনিংসে ৮ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ছিলেন ১৩ রানে। ম্যাচের ফলাফল ছিল ড্র। প্রথম টেস্টটাই ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট হয়ে রইলো গ্রাহাম মানুর।
আরেকটা ইন্টারেস্টিং তথ্য জেনে রাখুন, ১৯৮৮ সালে ইয়ান হিলির অভিষেকের পর থেকে তখনও অব্দি অস্ট্রেলিয়ার হয়ে মাত্র চার জন উইকেটরক্ষক সুযোগ পেয়েছেন টেস্টে। তাঁরা হলেন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, ফিল এমেরি (ইনিও এক ম্যাচের বিস্ময়), ব্র্যাড হাডিন এবং অবশ্যই গ্রাহাম ম্যানু।
অ্যান্ড্রু স্ট্রাউসের এই খেলোয়াড়সুলভ জেশ্চার খেলাধূৎুলার জগতে নি:সন্দেহে একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। স্ট্রাউসের জায়গায় অন্য কেউ থাকলে এমনটা করতেন কিনা সেই প্রশ্নটা কিন্তু থেকেই যায়।
টেস্ট আর না খেললেও আগে পরে মিলিয়ে চারটা ওয়ানডে খেলেন ম্যানু। তাতে মাত্র এক ইনিংস ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে ছয় বলে করেন সাত রান। গড়পরতা রকমের ব্যাটসম্যান ছিলেন। ১০৩ টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেললেও তাতে মাত্র ২৫-এর ওপর গড় নিয়ে করেন চার হাজারের ওপর না। ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে গেছেন ২০১২ সাল অবধি। মাত্র ৩৩ বছর বয়সেই ক্যারিয়ারের ইতি টেনেছেন।