সেদিন ‘খলনায়ক/নায়ক’ বনেছিলেন সুয়ারেজ

সবশেষ চেলসি বনাম ম্যানসিটি ম্যাচে ফার্নানদিনহোকে হাত দিয়ে গোল বাঁচাতে দেখে স্মৃতির মানসপটে এক দশক আগের একটা বিখ্যাত ম্যাচের চিত্র ভেসে ওঠলো। ২০১০ ফুটবল বিশ্বকাপের শেষ চার নিশ্চিত করার সে ম্যাচে মাঠে লড়ছিল ঘানা ও উরুগুয়ে।

উত্তেজনার বারুদে ঠাসা জোহানেসবার্গের সেই ম্যাচে হাফ টাইমের বাঁশি বাজার আগমুহূর্তে সুলে মুনতারির গোলে এগিয়ে যায় ঘানা। বিরতি থেকে এসেই দশ মিনিটের মধ্যে সে গোল পরিশোধ করে উরুগুয়ে। ফ্রি-কিক থেকে গোল করেন স্ট্রাইকার দিয়েগো ফোরলান। তারপর নির্ধারিত সময় শেষে ম্যাচটি অমীমাংসিত থাকায় খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।

পুরো ম্যাচের মতো অতিরিক্ত ত্রিশ মিনিটেও উভয় দলের একে অন্যের রক্ষণভাগে মুহুর্মুহু আক্রমণ অব্যাহত থাকে। কিন্তু জালের ঠিকানা খুঁজে পাচ্ছিল না কেউই। এমতাবস্থায় অতিরিক্ত সময়ের ঠিক শেষ মিনিটে এসে ম্যাচটি নাটকীয়তায় মোড় নেয়। এক্ষেত্রে ‘খলনায়ক’ রূপে আবির্ভূত হন লুই সুয়ারেজ।

 

ঘানার স্ট্রাইকার ডোমিনিক আদিয়াহর শট গোললাইন থেকে অবৈধভাবে হাত দিয়ে রুখে দেন তিনি। সুয়ারেজ না আটকালে সেটা নিশ্চিত গোল। তৎক্ষনাৎ লাল কার্ড দেখে কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ত্যাগ করেন এই স্ট্রাইকার। তবে, উরুগুয়ের জন্য সেটাই ছিল ‘নায়কোচিত’ একটা কাজ।

বিনিময়ে ঘানা পেয়ে যায় প্যানাল্টি। প্রথম কোন আফ্রিকান দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের সেমিতে ওঠার সুযোগ তখন তাদের সামনে। যদিও সে সুযোগ হেলায় হারিয়ে বসেন ঘানাইয়ান স্ট্রাইকার আসামোয়াহ জিয়ান। স্পটকিক থেকে তাঁর জোরালো শট প্রতিহত হয় গোলবারে।

অতিরিক্ত ত্রিশ মিনিটেও অমীমাংসিত থাকায় খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। প্রথম দুই শটে গোলের দেখা পায় উভয় দল। কিন্তু তৃতীয় শটে এসে উরুগুয়ে গোল পেলেও বিপত্তি বাধে ঘানার৷ বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে অধিনায়ক জন মেনসাহর শট রুখে দেন উরুগুইয়ান গোলরক্ষক ফার্নান্দো মুসলেরা।

তারপর চতুর্থ শটে দু’ দলই গোল বঞ্চিত হওয়ায় খেলা চলে যায় পঞ্চম শটে। উরুগুয়ের সেমিফাইনাল টিকেট নিশ্চিত করার দায়িত্ব তখন সেবিস্তিয়ান আব্রেউর কাঁধে। হতাশ করেননি আব্রেউ। ঠাণ্ডা মাথার বুদ্ধিদীপ্ত শটে গোলরক্ষক রিচার্ড কিংস্টনকে বোকা বানিয়ে গোল আদায় করে নেন তিনি।

সঙ্গে সঙ্গে কান্নায় ভেঙে পড়েন ঘানার ফুটবলাররা। শোকে মুষড়ে পড়েন সকার সিটির অর্ধেকের বেশি আসন দখল করা ‘দ্য ব্ল্যাকস্টার’ সমর্থকরা। অন্যদিকে ফুটবল বিশ্বে অনেকের চোখে খলনায়ক বনে যাওয়া সুয়ারেজ হয়ে যান আকাশী-নীলদের নায়ক৷ মূলত তাঁর সেই হ্যান্ডবলের ওপর ভিত্তি করেই যে খাদের কিনারা থেকে বেঁচে ফেরেন লা সেলেস্তেরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link