দশ উইকেট কখনো কাঁদায়, কখনো বা বানায় নায়ক

সেবার যে চায়ের নগরী তাকে করেছিল হতাশ। শুধু তাকেই নয়। গোটা দলকে হতাশ করেছিল সিলেট সেবার। বছর পাঁচেক আগে সিলেটের ময়দানে গড়িয়েছিল টেস্ট ম্যাচ।

ওয়ানডে দলে সুযোগ মেলে না তার। সাদা বলে থেকেছেন সবসময় ব্রাত্য হয়ে। তাইতো আক্ষেপের সুরেই এড়িয়ে গিয়েছেন রঙিন পোশাক গায়ে জড়াতে না পারার আক্ষেপ। তবে লাল বল হাতে তাইজুল ইসলাম যে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা। ‘রেডচেরি’ হাতে তিনি ভীষণ ভয়ংকর।

এই যেমন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিলেটের টেস্ট। এই টেস্টে তো তিনি শিকার করেছেন ১০টি উইকেট। নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় দফা এক ম্যাচে দশ উইকেট পেলেন তিনি। প্রথম দফা অবশ্য দশ উইকেট শিকার থেকে গেছে মূল্যহীন।

সেবার যে চায়ের নগরী তাকে করেছিল হতাশ। শুধু তাকেই নয়। গোটা দলকে হতাশ করেছিল সিলেট সেবার। বছর পাঁচেক আগে সিলেটের ময়দানে গড়িয়েছিল টেস্ট ম্যাচ। শেন উলিয়ামসের একক নৈপুন্যে মাটিচাপা পড়েছিল তাইজুলের অনবদ্য বোলিং পারফরমেন্স। ১৫১ রানের ব্যবধানেই হেরেছিল বাংলাদেশ সে দফা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।

অথচ বছরের চাকার পঞ্চম ঘূর্ণন শেষে তাইজুল আজ জয়ের নায়ক। তার বোলিং পারফরমেন্সেই যে এসেছে জয়। তাও আবার সমপরিমাণ ব্যবধানে। ১৫০ রানের ব্যবধানে হারানো গিয়েছে নিউজিল্যান্ডের পূর্ণ শক্তির দলকে। সেই জয়ের পথে প্রথম ইনিংসে চারটি উইকেট শিকার করেছিলেন তাইজুল।

দ্বিতীয় ইনিংসে তো জয়কে ত্বরান্বিত করেছেন তাইজুল। গুণে গুণে ছয় খানা উইকেট শিকার করেছেন তিনি। শেষ উইকেট শেষে যেন নিজের ভেতরের অনুভূতিটা বোঝাতে চাইলেন না। ইশ সোদি সিলি পয়েন্টে ক্যাচ দেওয়ার পর নিশ্চুপ ভঙ্গিমায় তিনি ফিরছিলেন আম্পায়ারের দিকে। তবে পথিমধ্যে তার ভেতরে থাকা আক্রোশ বেড়িয়ে এলো প্রচণ্ড চিৎকারে রুপ নিয়ে।

একরাশ আক্ষেপের দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হালকা করে নিলেন ফুসফুস। সিলেটের স্নিগ্ধ হাওয়াতে লড়াই করবার নতুন রসদ জুগিয়ে নিলেন তাইজুল ইসলাম। এখনও তো লম্বা একটা পথ পাড়ি দিতে হবে তাকে। সময় যে একেবারেই ফুরিয়ে যায়নি। সাদা পোশাকের এক কিংবদন্তি হওয়াটা যে এখনও বাকি।

তিনি প্রতিটা মুহূর্ত সেই শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের জন্যে যেন মাঠে নামেন। তাইতো বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটারও দু’দফা তার শিকারে পরিণত হয়েছেন। কেন উইলিয়ামসনকে দুই দফা আউট করেছেন তিনি একই টেস্টে। তার ফাঁদ যেন দূর্ভেদ্য। তিনি অবশ্য অকপটে শিকার করেন খুব বেশিকিছু তিনি করেন না বাইশ গজে। স্রেফ একটা জায়গায় ক্রমাগত বল করে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

আর সেই ‘সুইটস্পট’ থেকেই বৈচিত্র‍্য আদায় করে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তাইতো টম লাথাম, ড্যারিল মিশেলদের মত ব্যাটারদের খাবি খেতে হয় তাইজুলের বা-হাতের ঘূর্ণিতে। বাংলাদেশের পক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি তিনি। ১৮৭টি উইকেট নিয়েছেন তিনি। তাতে ক্যারিয়ারের ১২ তম ফাইফারটিও যুক্ত হয়ে গেছে তার নামের পাশে।

লাল বলটাকেই আপন করে নিয়েছেন যেন তিনি। এই বলটাই যে তাকে নিজ সত্ত্বা প্রমাণের সুযোগ করে দেয় সবচেয়ে বেশি। বাহারী রঙের চাকচিক্যকে দূরে ঠেলে দিয়ে তিনি যেন থেকে যাচ্ছেন বড্ড সাদামাটা। সেটা তার দূর্ভাগ্য কিংবা অন্য কিছু।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...