কতটা পথ পেরোলে তবে পথিক হওয়া যায়? নীরব ভর্ৎসনা কিংবা সমাপ্তির শঙ্কা—সব কিছুকে সঙ্গী করে যেন এক ফুৎকারে উড়িয়ে দিলেন সবটাই। তামিম ইকবাল বুঝিয়ে দিলেন তিনি বাইশ গজে পথিক হননি, এতদিন ক্ষণস্থায়ী পায়চারি করেছিলেন মাত্র। অবশেষে বন্দর নগরীতে দেখা মিলল চেনা ছন্দের তামিমকে।
বিপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান, সর্বোচ্চ ফিফটি, দেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ছক্কা— সব কিছুরই রেকর্ড চট্টগ্রামের ছেলেটার দখলে। কিন্তু ক্রিকেটাঙ্গনে তাঁকে নিয়ে অস্থিরতা গত প্রায় একটা বছর জুড়েই। এ সময়কালে অবশ্য ব্যাট হাতে নেই কোনো বড় ইনিংস। স্বীকৃত ক্রিকেটে সর্বশেষ পঞ্চাশ খুঁজতে ফিরে যেতে হবে গত বছরের ১৪ মে-তে।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সে ম্যাচে ৬৯ রানের ইনিংস খেলার পর অবশেষে ৯ মাস বাদে আবারো ফিফটির দেখা পেলেন তামিম ইকবাল। চট্টগ্রামে নিজের ঘরের মাটিতে এ ওপেনার খেললেন ৪৫ বলে ৭১ রানের ঝলমলে একটি ইনিংস। দুর্দান্ত ঢাকার বিপক্ষে যে ইনিংস খেলার পথে তিনি হাঁকিয়েছেন ৭ টা চারের পাশাপাশি ৪ টা ছক্কা।
আর এই ৪ ছক্কার মাধ্যমেই তিনি পৌঁছে গিয়েছেন নতুন এক কীর্তিতে। বিপিএলে দেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে ‘১০০’ ছক্কার লড়াইয়ে এতদিন তামিম, মুশফিক আর ইমরুলের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই চলছিল। তবে সবাইকে ছাপিয়ে তামিমই প্রথম দেশি ব্যাটার হিসেবে স্পর্শ করলেন ১০০ ছক্কার কীর্তি।
এবারের বিপিএলেই দু’বার চল্লিশ পেরিয়েছিলেন তামিম। কিন্তু দারুণ শুরুর সমাপ্তিটা ঠিক দুর্দান্ত হয়ে উঠছিল না। অথচ গড়পড়তা ইনিংস দিয়েই সেরা ৫ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় ঠিক রেখেছিলেন তিনি। অবশ্য ঢাকার বিপক্ষে ৭১ রানের ইনিংস খেলে এখন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ব্যাটারদের তালিকার চূড়ায় বসেছেন তামিম।
শুরুতে মন্থর গতিতে ব্যাটিং নিয়ে তামিমকে নিয়ে অভিযোগ কিংবা সমালোচনা অন্ত নেই। ঢাকার বিপক্ষে এ দিন শুরুটাও এমনই করেছিলেন তামিম। প্রথম ১৩ বলে নামের পাশে কেবল ৬ রান। এমতাবস্থায় দলের রানরেটও পড়ে গিয়েছিল ৬ এর নিচে। তবে এরপরেই নিজের রক্ষণাত্মক খোলস ছাড়িয়ে আক্রমণাত্বক রূপে আবির্ভূত হন তামিম।
আরাফাত সানির করা ৫ বলের ব্যাবধানে ২ চার আর ২ ছক্কায় ২০ রান তুলে নেন তিনি। এরপর শেন উইলিয়ামসকেও হাঁকান টানা ২ বলে ছক্কাও চার। মূলত এরপর থেকেই তামিমের তাণ্ডবের সামনে টিকতে পারেনি ঢাকার বোলাররা। ব্যক্তিগত ইনিংসের ৩৪তম বলে ব্যক্তিগত অর্ধশতক পূরণ করেন এ ওপেনার।
ফিফটি পূরণের পরও তাণ্ডব চালিয়ে যান তামিম। আগের ইনিংসগুলো বড় করতে না পারার আক্ষেপটা পুষিয়ে দেন এ ইনিংস দিয়েই। একটা সময় মনে হচ্ছিল সেঞ্চুরিও পেয়ে যাবেন অনায়াসেই। তবে আলাউদ্দিন বাবুর বল তুলে মারতে গিয়ে ব্যক্তিগত ৭১ রানে ধরা দেন এ ব্যাটার। অবশ্য ততক্ষণে বড় রানের ভিত্তি পেয়ে গেছে তামিমের ফরচুন বরিশাল।
২৭৬ দিন পর ফিফটির ছোঁয়া। জাতীয় দলে তামিমের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনও রয়েছে ধোঁয়াশা। তবে এখন অবধি বিপিএলে সর্বোচ্চ রান করা ব্যাটার তো তিনিই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট না হোক, তামিমের ক্রিকেট ক্যারিয়ার নিশ্চয় এখনই সমাপ্তির পথে হাঁটছে না। বরং এই ইনিংস জুড়ে ছিল অভিজ্ঞতা আর সক্ষমতা ছোঁয়া।