সেটা ছিল আমার দেখা শচীন টেন্ডুলকারের সেরা ইনিংস। নেট রান রেটের হিসেবে নিউজিল্যান্ডকে ছাড়িয়ে ফাইনালে ওঠার জন্য ভারতের দরকার ছিলো ৪৬ ওভারে ২৩৭ রান করার প্রয়োজন ছিলো। টেন্ডুলকারের এই ইনিংসের কারণে ভারত সহজেই ম্যাচ জিতে যায়। আর সেজন্যই তো ইনিংসটা ছিল খুব স্পেশাল।
এই ইনিংসের কিছু শট ছিল শ্বাসরুদ্ধকর রকমের অতিমানবীয়। আমার মনে আছে তিনি (শচীন) আস্তে আস্তে একটি জুটি গড়ে তুলছিলো। তাঁর মাইন্ডসেটে একটা ব্যাপার পরিস্কার বুঝতে পারছিলাম, তিনি একাই ম্যাচ জিতিয়ে দিবেন এবং দলকে ফাইনালে তুলবেন।
মাঝখানের কিছু সময় তিনি একটু ধীর গতিতে দেখেশুনে খেলছিলেন। কিন্তু, বিরতির পর তিনি যেভাবে ফিরে এসেছেন তা সত্যিই মুগ্ধ করার মত। ফিরে এসেও তিনি দুর্দান্ত সব শট খেলছিলেন।
শচীন তখনই বিশাল ব্যাপার ছিলেন, ছিলেন বিরাট একটা ব্যাপার। কিন্তু এই ইনিংস তাঁকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিল। এই ইনিংস খেলার পর তিনি ফাইনালে আবারো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৩৪ রানের একটি ইনিংস খেলেন।
আমার মনে হয় এই ইনিংসটি স্পেশাল। কারণ তিনি যে বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে এই ইনিংস খেলেছেন তা সত্যিই বিস্ময়কর। এখনকার অস্ট্রেলিয়ান বোলিং আক্রমণের তুলনায় ঐ সময়ের বোলিং অনেক বেশি ভয়ংকর ছিলো। শেন ওয়ার্ণ,ডেমিয়েন ফ্লেমিং এবং টম মুডিদের বিপক্ষে যেসব ইনিংস খেলেছিলেন তা ভুলে যাওয়া খুব। টনি গ্রেইগ ধারাভাষ্যে বসে বারবার বলেছিলেন, ‘বিশেষ কিছু ঘটতে যাচ্ছে।’
তখন আমার বয়স ছিল মাত্র নয় বছর। তখন আমি মাত্রই টিভিতে ক্রিকেট খেলা দেখা শুরু করেছিলাম। এর আগের বছরই মাত্র বাংলাদেশ আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জিতেছিলো। ওই সময়ে আমি এবং আমার বন্ধুদের কাছে ক্রিকেট দেখা ছিলো বিশেষ কিছু। আমার মনে করতে পারি – আমি কিভাবে সনাথ জয়াসুরিয়ার ফ্যান হয়েছিলাম। আমি চেষ্টা করতাম টিভিতে সব ম্যাচ দেখার। কিন্তু, শচীনের ওই ইনিংস মনে রাখার মত একটি ইনিংস ছিলো।
চট্টগ্রামে বাড়ির ছাদে বসে বাসার সবার সাথে বসে খেলা দেখছিলাম। ভাগ্যক্রমে কেউ একজন ছাদে টিভি নিয়ে এসেছিলো। তখন আমি সত্যিই খুব ছোট ছিলাম। আর তখন আমি কেবলমাত্র ক্রিকেট খেলা শুরু করেছিলাম, বোঝা শুরু করেছিলাম। টেন্ডুলকারের ওই ইনিংসের সময় আমি টিভির সামনে ছিলাম। আমার মনে হয় আমি এখনো মাঝে মাঝে ইউটিউবে টেন্ডুলকারের ওই ইনিংস দেখি। এখনও মুগ্ধ হই।
_______________
১৯৯৮ সালে শারজাহতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৪৩ রানের একটি দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন ক্রিকেট গ্রেট শচীন টেন্ডুলকার। সেদিন শচীন রীতিমত রান রেটের সাথে পাল্লা দিয়ে লড়েছিলেন। ইতিহাসের পাতায় তাই ইনিংসটা আলাদা জায়গা করে নিয়েছে। ক্রিকেট লিখিয়েদের কাছে সেই ইনিংসটা মরুঝড় নামে পরিচিত।
বাংলাদেশের তামিম ইকবাল প্রায় ২২ বছর আগের সেই ঘটনার স্মরণ করছেন। তামিমের সেই স্মৃতিচারণা প্রকাশিত হয়েছে ক্রিকেটমান্থলিতে।