‘রকস্টার’ তাসকিন আহমেদ

মন মত কন্ডিশন পেলে তাসকিন কি করতে পারেন – সেটা কারোই অজানা নয়। ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে এই অস্ট্রেলিয়াতেই ঝড় তুলেছিলেন গতির। এবার আরেকটা বিশ্বকাপ। ফরম্যাট বদলে গেলেও তাসকিন আছেন ঠিক তাঁর মতই। গতি আর স্যুইংয়ের বিষ অব্যাহত থাকল এবারও।

তাসকিন মাঠে নামলেন, বল করলেন এবং ইনিংসের প্রথম বলেই উইকেট তুলে নিলেন। ঠিক পরের বলেই প্যাভিলিয়নের পথ দেখালেন আরেক ডাচ ব্যাটসম্যানকে। ছিলেন হ্যাটট্রিকের পথে, যদিও শেষ অবধি হ্যাটট্রিক তুলে নিতে পারেননি। তবে আজকের বোলিং দিয়ে তাসকিন নিশ্চিতভাবে কোটি ভক্তের হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছেন। তাসকিন আহমেদের বোলিং জাদুতে ডাচদের বিপক্ষে টাইগাররা দুর্দান্ত জয় তুলে নিতে সক্ষম হয়েছেন।

বাংলাদেশের দেয়া ১৪৪ রান তাড়া করতে নেমে প্রথম দুই বলেই দুইজন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের খুইয়ে ডাচ শিবির প্রথমেই হোঁচট খায়। তাসকিন আহমেদ আজ এই ফরম্যাটে তাঁর ক্যারিয়ার সেরা স্পেলটি করেছেন। এমনকি ২৫ রান দিয়ে চার উইকেটের দুর্দান্ত স্পেলটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মঞ্চে বাংলাদেশি কোন পেসারের জন্য রোজকার কোনো দৃশ্য নয়।

রীতিমতো আগুন ঝরা বোলিং যাকে বলে তাই করে দেখিয়েছেন তাসকিন আহমেদ। আর তাসকিন সহ বাংলাদেশী বোলারদের তোপে ডাচ ব্যাটিং লাইন আপ হুড়মুড় করে গুড়িয়ে গিয়েছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের বোলারদের চাপে বিশ ওভার শেষে ১৩৫ রানে থামে নেদারল্যান্ডের রানের চাকা। ফলে বাংলাদেশ ৯ রানের অসাধারণ একটি জয় পায়।

সুপার টুয়েলভে ডাচদের বিপক্ষে জয়ের ফলে বাংলাদেশ প্রায় পনেরো বছর পর বিশ্বকাপের মূল পর্বে প্রথমবারের মত জয় পেতে সক্ষম হল। আর এই জয়ে সবচেয়ে বড় অবদানটা পেসার তাসকিন আহমেদের। ম্যাচ সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারটাও তাই গেল তাঁর ঝুলিতে। বাংলাদেশের হয়ে তাসকিন আহমেদ চারটি, হাসান মাহমুদ দুটি এবং সাকিব আল হাসান ও সৌম্য সরকার একটি করে উইকেট শিকার করেছেন।

তাসকিন একটি করে উইকেট তুলছেন আর স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শক উচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা হচ্ছেন। কমেন্ট্রি বক্স থেকে বারবার উচ্চারিত হচ্ছিল তাসকিনের নাম। ইনিংসের শুরুতে পরপর দুইটি উইকেট তুলে নেয়ার পর কমেন্ট্রি বক্স থেকে ভেসে এল, ‘তাসকিন, ইউ বিউটি। এত সাদামাটা টোটাল টার্গেট দিয়ে তোমার কাছ থেকে এমন সূচনাই আশা করছিলাম। ভালো করছ, চালিয়ে যাও।’

আরেক ধারাভাষ্যকার তো ম্যাচের শেষদিকে বলেই বসলেন, ‘প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ তাসকিন আহমেদ। আর কোন ভাল বিকল্প আছে? নাহ, তেমন ভাল কেউ নেই।’

আসলেই তো আজকের ম্যাচটিতে তাসকিন আহমেদের বিকল্প কেউ নেই। তাসকিন আজ দুর্দান্ত ছিলেন। ম্যাচ শেষে ম্যাচসেরার পুরস্কার নিতে যাওয়ার পর নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে তাসকিন বলেন, ‘এই জয় আমাদের জন্য ভাল শুরু এবং তা আমাদের দরকার ছিল। আমরা দল হিসেবে ভাল খেলেছি, আমি দলের অংশ হিসেবে জয়ে অবদান রাখতে পেরে খুশি।’

নিজের প্রথম ওভারে উইকেট পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি আমার মৌলিক বিষয়গুলো ঠিকঠাক রেখেছিলাম। প্রথম ইনিংসে তাঁদের বোলিং খেয়াল করেছি। তাই আমার মনে হয়েছে টেস্টম্যাচ লেন্থ বোলিং করতে হবে। তাই করেছি এবং সফল হয়েছি। বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ডের কাছে ট্রেইনিং এর ফলে আমি এখন বলকে উভয় দিকেই মুভ করতে পারি। সবকিছু মিলিয়ে ভাল বোলিং করতে হবে এটাই ছিল মূল ফোকাস।’

সব মিলিয়ে সুপার টুয়েলভের প্রথম ম্যাচ জয়লাভ করে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মিশনের দারুণ সূচনা করেছে। আসন্ন ম্যাচগুলোতেও তাসকিনের এমন বিধ্বংসী রূপ অটুট থাকুক। ইনজুরিতে জর্জরিত ক্যারিয়ারে অফফর্ম আর ইনফর্মের দোলাচলে এত সহজে হার না মানুক তাসকিন। তাঁর যে দেশকে আরও অনেক দেয়ার আছে। নিজের সেরাটা এই বিশ্বকাপের আসরে উজাড় করে দিক তিনি।

আপাতত টাইগার ভক্তরা আশায় বুক বাঁধছেন যে সামনের ম্যাচগুলোতেও বাংলাদেশ এই জয়ের ধারা অব্যাহত রাখবে এবং বিশ্বকাপের মঞ্চে নিজেদের সামর্থ্য প্রমাণ করবে। আর সেই যাত্রায় ‘রকস্টার’ হয়েই থাকুন তাসকিন!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link