দেশ নাকি আইপিএল!

মোটা অংকের টাকা, হ্যাঁ যদি আপনি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) পক্ষে কথা বলতে চান তবে টাকার অংকটাই সবার আগে বলতে হয়। বিশ ওভারের এই ফ্রাঞ্চাইজি ভিত্তিক টুর্নামেন্টে কয়েকদিন খেললেই যে পরিমান পারিশ্রমিক পাওয়া যায় তা হয়তো সারাবছর আন্তর্জাতিক সিরিজ খেলেও পান না অনেক ক্রিকেটার। তাই হয়তো যেকোনো আন্তজার্তিক সিরিজের চেয়ে আইপিএলের কদরই বেশি অধিকাংশ ক্রিকেটারের কাছে। দিন দিন সেই কদরের নিদর্শন যেন বেড়ে চলছে।

ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট নাকি দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক সিরিজ; প্রায় প্রতি বছরই এমন এক পরিস্থিতিতে পড়তে হয় অনেক ক্রিকেটারদের। আর আইপিএল সব ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের মধ্যে সবচেয়ে জমকালো অবশ্যই, আর তাই তার আবেদনও সবচেয়ে বেশি খেলোয়াড়দের মাঝে।

প্রায়ই বিভিন্ন খেলোয়াড়দের দেখা যায় নিজ দেশের সিরিজ উপেক্ষা করে আইপিএলে যোগ দিতে। তার পিছনে সবচেয়ে বড় যুক্তি পারিশ্রমিক; এছাড়াও ছোট ফরম্যাটের এই খেলায় পরিশ্রমও হয় কম। পাশাপাশি ঝলমলে পরিবেশ, বিনোদন আর রং বেরংয়ের অভিজ্ঞতা তো আছেই।

ক্রিকেটের আবেগটা বাংলাদেশে একটু বেশিই। তাই প্রায় প্রতিবছরই সাকিব আল হাসান ও মুস্তাফিজুুর রহমানের আইপিএলে খেলা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। কিছুদিন আগেও সাকিবের দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ এড়িয়ে আইপিএল খেলতে যাওয়ার সিদ্ধান্তে বেশ সরব ছিল গণমাধ্যম যদিও আইপিএলে দল না পাওয়ায় সেই আলোচনা ধামাচাপা পড়ে গিয়েছিল। এবার দক্ষিণ আফ্রিকার চুক্তিবদ্ধ বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়ই পড়েছেন এমন পরিস্থিতিতে – দেশ নাকি আইপিএল?

দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকা (সিএসএ) অবশ্য আগেই ঘোষণা দিয়েছিলো কোন খেলোয়াড় আইপিএলে যেতে চাইলে বাধা দিবে না বোর্ড। সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা ক্রিকেটারদের হাতেই তুলে দিয়েছিলো দক্ষিণ আফ্রিকা বোর্ড। বলা বাহুল্য, বোর্ড অব কনট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়ার (বিসিসিআই) সাথে চুক্তির কারণে এমন ঘোষনা একপ্রকার অনিচ্ছায় দিতে হয়েছে তাদেরকে।

দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট অধিনায়ক ডিন এলগার এমন পরিস্থিতিকে ‘আনুগত্যের লিটমাস পরীক্ষা’ বলে অভিহিত করেছিলেন। দেশের প্রতি কমিটমেন্ট বনাম ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট, এমন বিতর্কে এবার নিজেদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার খেলোয়াড়রা। বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ খেলার পরেই আইপিএলে দল পাওয়া আফ্রিকান খেলোয়াড়েরা উড়াল দিবে ভারতের উদ্দেশ্যে। আর তাই বাধ্য হয়েই দক্ষিণ আফ্রিকাকে নতুন করে ভাবতে হবে টেস্ট স্কোয়াড নিয়ে।

টেস্ট সিরিজ মিস করা বড় নামগুলোর মধ্যে সবার উপরে আছেন ফাস্ট বোলার কাগিসো রাবাদা। পাঞ্জাব কিংসের এই পেসার ঘরের মাঠের বাউন্সি উইকেটে বাংলাদেশের বিপক্ষে হতে পারতেন আফ্রিকার সবচেয়ে বড় অস্ত্র। তবে বাংলাদেশের জন্য স্বস্তির খবর, এই পেসারকে টেস্ট ম্যাচ দুইটিতে পাচ্ছে না দক্ষিণ আফ্রিকা।

এছাড়াও দিল্লী ক্যাপিটালসের এনরিচ নরকে, লুঙ্গি এনগিডি এবং সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের মার্কো জানসেন খেলবেন না বাংলাদেশের বিপক্ষে। এককথায় বলা যায় দক্ষিণ আফ্রিকার ফ্রন্ট লাইন পেসাররা সবাই টেস্ট সিরিজ বাদ দিয়ে খেলবেন আইপিএল। এছাড়াও ব্যাকআপ ফাস্ট বোলার হেন্ড্রিকস কাউন্টি সিজন খেলতে পাড়ি জমাবেন ইংল্যান্ডে।

ফ্রন্ট লাইন বোলারদের অনুপস্থিতিতে দক্ষিন আফ্রিকা ভরসা রাখতে পারে তুলনামূলক অনভিজ্ঞ লুথো সিম্পালা, লিজার্ড উইলিয়ামসদের উপর। এই দুই পেসারের সাথে কেশব মাহারাজের মত অভিজ্ঞ স্পিনার থাকবেন বাংলাদেশের বিপক্ষে। লুথো সিম্পালা তিনটি টেস্ট খেললেও লিজার্ড উইলিয়ামসের এখনো টেস্ট অভিষেক হয়নি। এছাড়াও স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার জর্জ লিন্ড,ফাস্ট বোলার ডোয়াইন অলিভারকেও বিবেচনা করতে পারেন দক্ষিণ আফ্রিকার নির্বাচক মার্ক বাউচার।

এমন খবর যে বাংলাদেশের জন্য এক প্রকার স্বস্তির তা আলাদা করে বলে দেয়া লাগে না হয়তো। বছরের শুরুতেই দুর্ভেদ্য কিউই দুর্গ জয় করে আসার পরে এমনিতেই তরুণ এক বাংলাদেশ টেস্ট দলের প্রতি প্রত্যাশা বেড়ে গিয়েছিলো সমর্থকদের। এখন খর্বশক্তির দক্ষিন আফ্রিকার বিপক্ষে নিশ্চয়ই প্রত্যাশার পারদ আরেকটু উপরে উঠে যাবে। সমর্থকদের প্রত্যাশার পারদের সাথে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্সের পারদও উপরের দিকেই উঠুক। দক্ষিণ আফ্রিকায় আবারো সৃষ্টি হোক ইতিহাস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link