শরিফুলের সেই ছয় বল

শেষ দুই ওভারে খুলনা টাইগার্সের জয়ের জন্য প্রয়োজন ২৪ রান। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এই রান হরহামেশা চেজ হয়। তাও বলা যেতে পারে বিপিএলে এই কাজও কঠিন। তবে খুলনার জন্য কাজটা সত্যিই সহজ ছিল। কেননা ক্রিজে ছিলেন আন্দ্রে ফ্লেচার। তবে তারচেয়েও ভয়ংকর রূপে ছিলেন আমাদের ইয়াসির রাব্বি।

আজ একটা ধ্বংসাত্মক মনোভাব নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন এই ব্যাটসম্যান। ১৮ ওভারের খেলা শেষে ইয়াসির তখন ২১ বলে ৩৯ রান করে অপরাজিত। আগের ওভারেই সারা টুর্নামেন্টে ডেথ ওভারে দারুণ বল করা মৃত্যুঞ্জয়কে ২ টি ছয় ও ১ টি চার মেরেছেন। আর আরেকপ্রান্তে সাথে আছেন আগের ম্যাচের নায়ক আন্দ্রে ফ্লেচার।

আর ডেথ ওভারে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় ভরসার নাম এমন একটা ওভার কাটানোর পর বাকি বোলারদের উপর তখন পাহারসম চাপ। সেই চাপ নিয়েই ১৯ তম ওভারে বল করতে এলেন শরিফুল ইসলাম। এর আগে ঢাকার বিপক্ষে বন্ধু মৃত্যুঞ্জয়কে নিয়ে ম্যাচ জিতিয়েছিলেন। আজ বন্ধু ব্যর্থ হয়েছেন। তবে শরিফুল ইসলাম হাল ছাড়েননি।

অবশ্য ১৯ তম ওভারের শুরুটা ভালো হয়নি। বাইশ গজে থাকা ইয়াসির আলী রাব্বিও যে ছিলেন ধ্বংসাত্মক মনোভাব নিয়ে। ফুল টস বলটাকে এক্সট্রা কাভারের উপর দিয়ে পাঠালেন বিশাল এক ছক্কার জন্য। তবে এর পরের ৫ বল শরিফুল তাঁর খেল দেখালেন। একুশ বয়সী এই পেসারের সাথে মস্তিষ্কের খেলায় হেরে গেলেন ইয়াসির রাব্বি, আন্দ্রে ফ্লেচার ও খুলনা টাইগার্স।

দ্বিতীয় বলটা ডেথ ওভারের সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র, ওয়াইড ইয়োর্কার। স্বাভাবিকভাবেই ব্যাটে বলে এক করতে পারেননি ইয়াসির রাব্বি। এবারো ইয়াসিরের শরীর থেকে দূরে তবে এবার ব্যাট বল লাগিয়েছেন ইয়াসির। হাওয়ায় উঠা বলটাকে দারুণ ভাবে লুফে নিয়েছেন বেনি হাওয়েল। ইয়াসির আউট হয়ে ফিরলেন। তবে বাইশ গজে তখনো ছিলেন আন্দ্রে ফ্লেচার, প্যাভিলিয়ন থেকে হেঁটে আসছিলেন থিসারা পেরেরা।

আর পেরেরা, ফ্লেচারদের আটকানোর জন্য শরিফুল তাঁর পকেটে লুকিয়ে রেখেছিলেন আরো তিনটি গোলা। আবারো ওয়াইডার ফুল টস বলটায় কোনক্রমে এক রান বের করলেন ফ্লেচার। পেরেরাকেও একই ফাঁদে। একেবারে ওয়াইড ইয়োর্কারের কাছাকাছি একটা বল। এবারো পেরেরা শুধু এক রানের জন্যই খেলতে পারতেন।

শেষ ৭ বলে খুলনার জয়ের জন্য এখন প্রয়োজন ১৬ রান। খেলার মোড় ইতোমধ্যেই ঘুরিয়ে ফেলেছেন এই পেসার। তবে সেখানেই দায়িত্বটা সারলেন না। এবার আর ইয়োর্কারের কাছাকাছি কিছু না। অফ স্ট্রাম্পের অনেকটা বাইরে একেবারে পাক্কা ইয়োর্কার। ফ্লেচারের তাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কিই বা করার ছিল। ডট বল দিয়ে শেষ করলেন শরিফুল।

প্রথম বলে ইয়াসিরের কাছে ছয় খাওয়ার পরেও যেভাবে ফিরে এসেছেন তাঁর জন্য প্রয়োজন অদম্য সাহস আর আত্মবিশ্বাস। এই দুটি জিনিস এই পেসারের আছে তা সবারই জানা। তবে এত চাপ নিয়ে এমন বোলিং করার জন্য অভিজ্ঞতাও প্রয়োজন হয়। সেটি শরিফুলের হয়তো খুব বেশি ছিল না। তবে ক্রিকেট তাঁকে ফিরিয়ে দেয়নি, পারফর্মারকে ঠিকই চিনে নিয়েছে।

ওদিকে শেষ ওভারে ১৬ রান দরকার হলেও মিরাজ ছাড়া সবাই নিজেদের কোটা শেষ করে ফেলেছিলেন। ফলে শেষ ওভারে মিরাজের কাজটাও সহজ ছিল না। স্পিনার হয়ে ১৬ রান ডিফেন্ড করাটা সহজ কাজ নয়। সেটাও মিরাজ করেছেন দারুণ ভাবে।

সবচেয়ে লক্ষণীয় ব্যাপার ছিল মিরাজের ফিল্ড প্লেসমেন্ট। লং অনের ফিল্ডারকে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন কাউ কর্নারে। প্রথম তিনটা বলই গিয়েছিল ওই ফিল্ডারের কাছে। অথচ এই মিরাজকেই অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছিল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link