বাবরের সেঞ্চুরিই ম্যাচ হারের কারণ

টি টোয়েন্টিতে সেঞ্চুরির দেখা পাওয়া যেকোনো ব্যাটসম্যানের জন্যেই পরম আরাধ্যের। সেখানে ৬৫ বলে ১১৫ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলার পরও সমালোচনার শিকার হচ্ছেন বাবর আজম। ১৭৭ স্ট্রাইকরেটে রান করা সত্ত্বেও বাবরের ব্যাট করার ধরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সাবেক ক্রিকেটাররা। 

বাবরের ব্যাটিং তান্ডবের সুবাদেই পিএসএলের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্সের বিপক্ষে ২৪১ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করায় পেশোয়ার জালমি। আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব এই লক্ষ্যটাই রীতিমতো হেসেখেলে পার করেছে কোয়েটা।

পেশোয়ারের বোলারদের পাড়ার বোলারে পরিণত করে দশ বল আগেই ম্যাচ জিতে নিয়েছে তাঁরা। জেসন রয় বাবরের চাইতে দুই বল কম খেললেও ত্রিশ রান বেশি তুলেছেন। 

ম্যাচশেষে তাই ধারাভাষ্যকরা সাইমন ডুল সমালোচনা করেছেন বাবর আজমের। তিনি বলেন, ‘শেষের দিকে তাঁদের আরো বেশি চালিয়ে খেলা উচিত ছিল। দ্রুতগতিতে রান উঠলেও রানের গতি আরো বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিতে হতো কারণে তাঁদের হাতে উইকেট ছিল। ডাগ আউটে মারকুটে কয়েকজন ব্যাটসম্যান ছিল তাঁদের। সেঞ্চুরি করা অবশ্যই দারুণ, পরিসংখ্যানও চমৎকার দেখাচ্ছে, কিন্তু দলের জয়টাই সবার আগে প্রাধান্য পাওয়া উচিত।’

সাইমন ডুল মারকুটে ব্যাটসম্যান বলতে মূলত মোহাম্মদ হারিস এবং হাসিবুল্লাহ খানকে বুঝিয়েছেন যারা কিনা ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলতে দ্বিধা করেন না। এছাড়া ছিলেন অলরাউন্ডার আমের জামাল, যার ক্যারিয়ার স্ট্রাইক রেট ১৮০। নিজের মুখোমুখি হওয়া প্রতি তিন বলে একটি বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন তিনি। 

সেঞ্চুরি স্পর্শ করার পরের পাঁচ বলে বাবর তুলেছেন ১৬ রান। কিন্তু তাঁর আগের সময়টাতে তিনি বেশ ধীরে খেলেছেন। ৮০ থেকে ১০০ রানে পৌঁছুতে তিনি খরচ করেছেন ১৬ বল। এই সময়টাতে তিনটি ফুলটস ডেলিভারিতে বাউন্ডারি হাঁকানোর চেষ্টা করার বদলে সিংগেল নিয়েই সন্তুষ্ট থেকেছেন বাবর।

১৫ ওভার শেষে দুই দলের পরিস্থিতিটা একই রকম ছিল, পেশোয়ারের ১৭৭ রানের জবাবে কোয়েটা তুলেছিল ১৮১ রান। সেখান থেকে কোয়েটা ম্যাচ জিতে নেয় ১০ বল বাকি থাকতেই। 

তবে ম্যাচে আরো ঘটনা ঘটেছে, একটিমাত্র ভুলের কারণে ম্যাচ হারার ঘটনা খুবই কম। জেসন রয়ের ক্যাচ পড়েছে ২৪ রানের মাথায়, পেশোয়ারের বোলার এবং ফিল্ডাররা দেদারসে রান উপহার দিয়েছেন প্রতিপক্ষকে।

তাছাড়া ব্যাটিং নির্ভর পিচে পরে ব্যাট করা দল সবসময়েই সুবিধা পেয়ে থাকে কারণ তাঁদের সামনে লক্ষ্যটা জানা থাকে। অন্যদিকে আগে ব্যাট করা দল জানে না তাঁদের জন্য নিরাপদ লক্ষ্যটা কত রানের। তবে বাবরের ইনিংসটা কোনোভাবেই ম্যাচজয়ী ইনিংস ছিল না। 

বাবরের ১২৮ স্ট্রাইকরেট এবং ৪৩ গড়ই জানান দেয় তিনি মূলত অ্যাংকর হিসেবে খেলতেই বেশি পছন্দ করেন। শুরু থেকেই মারমুখী ব্যাটিং করার চাইতে তিনি বরং ক্রিজে থিতু হতে বেশি পছন্দ করেন।

ৎওয়ানডে ক্রিকেটে এই ধরনের অ্যাংকরের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ হলেও টি টোয়েন্টিতে তেমনটা নয়। সাত ব্যাটসম্যানের দলে কেউ বিশ বলের বেশি খেলে ফেললেই তাঁকে অ্যাংকরের রোলটা নিতে হয়। 

তবে কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য অ্যাংকরের ভূমিকাটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ধরুন আপনি ১৬০ রানের আশেপাশে কোনো লক্ষ্য তাড়া করছেন। সেক্ষেত্রে অ্যাংকর একপাশ আগলে রেখে দলকে জয়ের পথেই রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু দল যদি বড় লক্ষ্য তাড়া করে কিংবা ব্যাটিং নির্ভর পিচে আগে ব্যাট করে সেক্ষেত্রে অ্যাংকরের ভূমিকাটা হয়ে দাঁড়ায় অতি নগণ্য।

বাবর নিজের ফিফটিতে পৌঁছুতে বল খেলেছেন ৩২টি, পরের পঞ্চাশ রান রানে পৌঁছেছেন ২৮ বলেই। আপাতদৃষ্টিতে দুর্দান্ত মনে হলেও দুই দলের বাকি ওপেনারদের স্ট্রাইকরেট দেখলেই পার্থক্যটা স্পষ্ট হয়ে যাবে।

সায়্যিম আইয়ুব ৭৪ রান করেন ২১৮ স্ট্রাইকরেটে, জেসন রয় করেন ২৩০ স্ট্রাইকরেটে অপরাজিত ১৪৫ রান এবং মার্টিন গাপটিল খেলেন আট বলে ২১ রানের ঝড়ো ক্যামিও। 

পিচের পরিস্থিতি বিবেচনায় এদিন নিদেনপক্ষে ২০০ কিংবা ২১০ স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করা প্রয়োজন ছিল যেকোনো ব্যাটসম্যানের। অথচ বাবর ব্যাট করেছেন ১৭৭ স্ট্রাইকরেটে। তাছাড়া বাবরের এমন ব্যাটিংয়ের যৌক্তিকতা থাকতো যদি পেশোয়ার নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতো।

অথচ তেমনটা ঘটেনি, গোটা ইনিংস শেষে তাঁরা উইকেট হারিয়েছে মোতে দুইটি। এছাড়া পাওয়ারপ্লের সুবিধাও নিতে পারেননি এই তারকা। ইনিংসের প্রথমার্ধ শেষে তাঁর সতীর্থ সায়্যিম আইয়ুব যেখানে করেছেন ২৬ বলে ৫২ রান, সেখানে ৫১ রান করতে বাবর বল খেলেছেন ৩৩টি। 

কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্স নিজেদের ঘরের মাঠের সুবিধা কাজে লাগিয়েছে। অন্যদিকে বাবরের প্রচেষ্টা যেন বুকে শেল হয়ে আঘাত হেনেছে পেশোয়ার ভক্তদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link