ভারতের বিমানে ওঠার তালিকায় ১১ টি নাম প্রায় নিশ্চিত। বাকি চারটি জায়গার মধ্যে সবচেয়ে বেশি চিন্তা যে কয়টি পজিশন নিয়ে তার মধ্যে একটা ব্যাকআপ ওপেনারের জায়গাটা। গত কয়েক বছর ধরে তামিম-লিটন ওপেনিং জুটিটা বেশ পোক্ত হয়েছে বলা চলে।
তিন নম্বরে নিজের জায়গা পাঁকা করে ফেলেছেন নাজমুল হোসেন শান্তও। এখন বিশ্বকাপ স্কোয়াডে এমন একজনকে চাই যিনি কিনা এই তিন ব্যাটারের ইনজুরি কিংবা অন্য কোনো সমস্যার ক্ষেত্রে ব্যাকআপ হবেন।
এই জায়গাটার জন্যে বিবেচনায় আছে বেশ কয়টি নাম। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সবশেষ ম্যাচেই তামিমের সঙ্গী হিসেবে খেলেছেন রনি তালুকদার। সাধারণ চোখে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে বিবেচনার জন্য রনিরই তাই সবচেয়ে এগিয়ে থাকার কথা।
কিন্তু, বিষয়টা হয়েছে পুরো উল্টো বিশ্বকাপ স্কোয়াডে ব্যাকআপ ওপেনারের বিবেচনায় থাকা অন্য সবার চেয়ে পিছিয়েই আছেন রনি। ৩২ বছর বয়সে নিজের ওয়ানডে অভিষেক হবার পর অভিষেকে যাচ্ছেতাই ব্যাটিং করেছেন রনি।
১৪ বলে চার রানের ইনিংসটা রনি খুব দ্রুতই ভুলে যেতে চাইবেন। ১৪ টা বল মোকাবেলা করতেই রনিকে সংগ্রাম করতে হয়েছে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে জাকির হাসানের ইনজুরিতে স্কোয়াডে জায়গা পাওয়াটা রনি সৌভাগ্য হিসেবে দেখতেই পারেন।
টি-টোয়েন্টি দলে পারফর্ম করার সুবাদেই হয়তো ওয়ানডে দলে যুক্ত করা হয়েছিল তাঁকে। তবে তিনি যে দীর্ঘ পরিকল্পনার অংশ নন তা মোটামুটি স্পষ্ট। সামনের আফগানিস্তান সিরিজেই হয়তো ওয়ানডে স্কোয়াড থেকে বাদ পড়তে পারেন এই ওপেনার।
যার ইনজুরিতে রনি ওয়ানডে স্কোয়াডে ঢুকেছিলেন সেই জাকির হাসান বেশ ভালো ভাবেই আছেন বিশ্বকাপ স্কোয়াডের বিবেচনায়। এখনো ওয়ানডে অভিষেক না হলেও জাকির হাসানের ঘরোয়া ক্রিকেটের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স অবহেলা করার উপায় নেই খুব একটা।
টেস্ট অভিষেকে ভারতের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য নিজেকে যোগ্য প্রমাণও করেছেন অনেকটাই। ঘরোয়া ক্রিকেটে গত দুই মৌসুম ধরেই জাকির আছেন দুর্দান্ত ফর্মে।
ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে গত মৌসুমের অসাধারণ পারফরম্যান্সের স্বীকৃতি স্বরূপ আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজে প্রথমবারের মত ওয়ানডে স্কোয়াডে ডাক পান জাকির। তবে ইনজুরির কারণে ছিটকে যেতে হয় দল থেকে। এরপর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যাওয়ে সিরিজও মিস করেছেন ইনজুরিতে।
তবে ইনজুরি থেকে ফেরার ম্যাচেই ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে করেছেন সেঞ্চুরি। এরপর সুপার লিগের বাকি ম্যাচ গুলোতেও দারুণ পারফর্ম করেছেন তিনি। তাই সামনের আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের দলে ডাক পাবার দাবিটা বেশ জোরালো জাকিরের।
এই জায়গাটায় জাকিরের প্রতিদ্বন্দ্বী বলা যায় নাঈম শেখ ও এনামুল হক বিজয়কে। সদ্য শেষ হওয়া ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ ক্রিকেটে রানের বন্যা বইয়ে দিয়েছেন আবাহনীর এই দুই ওপেনার। গত মৌসুমে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে হাজারের বেশি রান করে বিশ্বরেকর্ড করা এনামুল এবারো ধরে রেখেছেন তাঁর অবিশ্বাস্য ফর্ম।
১৬ ম্যাচে ৫৯.৫৭ গড়ে ৮৩৪ রান করে আবারো জাতীয় দলের দরজায় কড়া নাড়ছেন বিজয়। স্ট্রাইকরেট নিয়েও দুর্নাম ঘুচিয়েছেন ৯৭.৩২ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করে। এবার চান্দিকা হাতুরুসিংহের মন গলাতে পারেন কিনা সেটিই দেখার বিষয়।
হাতুরুসিংহের প্রথম মেয়াদে ‘সেলফিশ’ ক্রিকেট খেলার দায়ে কোচের গুডবুকে ছিলেন না বিজয়। তাই ঘরোয়া ক্রিকেটে রান করলেও সবই নির্ভর করছে কোচের ওপর।
অন্যদিকে এবার বিজকেও ছাড়িয়ে গেছেন নাঈম শেখ। বাংলাদেশের জার্সিতে মাত্র দুটো ওয়ানডে খেলা নাঈম এবারের ডিপিএলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ১৬ ম্যাচে ৭১.৬৯ গড়ে ৯৩২ রান করেছেন নাঈম। গত বছর টি-টোয়েন্টি দল থেকে বাদ পড়ার পর এবার ওয়ানডে ক্রিকেটে আবারো দলে ফেরার খুব কাছে নাঈম শেখ।
বিজয় আর নাঈম যে বিশ্বকাপ স্কোয়াডের বিবেচনায় আছেন তা পরিষ্কার করেছেন ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও। জানিয়েছেন ব্যাকআপ ওপেনারের খালি জায়গায় বিজয় কিংবা নাঈমকে বিবেচনা করা হতে পারে।
আর ইনজুরি কাটিয়ে জাকির হাসান দলে ফিরলে লড়াইটা অনেক ত্রিমুখী হবে। তবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে যিনি ডাক পাবেন তিনি পারফর্ম করতে পারলে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে নিজের নামটা চূড়ান্ত করে ফেলবেন তা এক প্রকার নিশ্চিত।
সবকিছু বিবেচনায় জাকির, বিজয়, নাঈম তিনজনেরই সুযোগ আছে ভারতের বিমানে ওঠার। নিজেদের পরিকল্পনায় দৃঢ় থাকলে টিম ম্যানেজমেন্ট হয়তো জাকির হাসানকেই বাজিয়ে দেখতে চাইবে।
আর ঢাকা লিগের ফর্ম বিবেচনা নাঈম-বিজয়দেরও পুরোপুরি হিসেবের বাইরে রাখা যাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই পজিশনে হাতুরুসিংহে কাকে বেছে নেন সেটি দেখার জন্য আর কিছুদিন অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।