শত আঘাতের বিনিময়ে পাওয়া ১৪ কোটি রুপি

বাবা লোকেন্দ্রসিং চাহার ছিলেন বলেই তিনি আজকের দীপক চাহার হতে পেরেছেন। কিংবা কোচ নাভেন্দু ত্যাগী, যিনি ১২ বছর বয়সী দীপককে ক্রিকেটের দুনিয়ার নিয়ে এসেছিলেন। সেদিনের সেই ক্ষুদে চাহার আজ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) বিগ মানি সুপারস্টার।

এবারের আসরের নিলামে ১৪ কোটি রুপিতে পেসার দীপক চাহারকে দলে ভেড়ায় চেন্নাই সুপার কিংস। এবারের আসরের নিলামে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হন চাহার। ২০১৮ সালে মাত্র ৮০ লাখ রুপিতে চাহারকে কিনে নেয় চেন্নাই। চার বছরে নিজের সামর্থ্যের সেরাটা দিয়ে চাহার বনে গেছেন আইপিএলের অন্যতম ‘বিগ মানি স্টার’ হিসেবে।

১২ বছর বয়সী চাহারের প্রতিভা দেখতে পান তাঁর বাবা লোকেন্দ্রসিং ও কোচ নাভেন্দু ত্যাগী। বাবার সহযোগিতায় এতোদূর আসা চাহারের। ক্রিকেটার হবার শখ ছিলো শুরু থেকেই। বাবার সাপোর্ট আর নিজের পরিশ্রমে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে পূরণ করেছেন নিজের স্বপ্ন।

রাজস্থানের কোচ নভেন্দ্রু ত্যাগি বলেন,  ‘সে খুব উদ্যমী একজন। চাহার খুব ডিসিপ্লিনড হওয়ার বড় কারণ তাঁর বাবা ভারত বিমান বাহিনীতে কাজ করতেন। তাঁর বাবা তাঁকে অনেক সাপোর্ট করেছে, উৎসাহ দিয়েছে।’

বাবার বাইকে পেছনে চড়ে প্রতিদিন ১১০ কি.মি ভ্রমণ করতেন চাহার। সুরতগড় থেকে হনুমাগড়ে দীর্ঘ পথ বাবার বাইকে পাড়ি দিয়ে অনুশীলন করতে যেতেন এই পেসার। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিজের প্রথম ম্যাচেই লক্ষ্য ঠিক করেছিলেন জাতীয় দলে খেলার। অভিষেকেই শিকার করেন মাত্র ১০ রানে ৮ উইকেট!

ওই ম্যাচের পর চাহার বলেন, ‘আমার মনে আছে তারক স্যার (কোচ তারক সিনহা) বলেছিলো লাইন-লেন্থ ঠিক রেখে বল করতে। আমি সেটাই মাথায় রেখেছি। প্রথম উইকেটটাই আমাকে বুস্ট করেছে। একটা আউটস্যুইং এজ হয়ে কিপারের কাছে ক্যাচ যায়। এরপর আরো তিনটা উইকেট পেয়েছিলাম ইনস্যুইংয়ে।’

মাত্র ১৫ বছর বয়সে বোলিং বিশেষজ্ঞ এরিক সিমন্সের ইচ্ছেতে রাজস্থান দলের সাথে ইংল্যান্ড সফরে যায় চাহার। তবে এর এক বছর পর রাজস্থানের ২০ সদস্যের স্কোয়াডেও জায়গা হয়নি এই পেসারের! কারণ দলের কোচ গ্রেগ চ্যাপেল চাহারকে কখনো ভালো বোলার হিসেবে বিবেচনা করতেন না। চাহারকে ফিটনেস আর গতি নিয়ে কাজ করতেও বলা হলো! ভিতরে ভিতরে কষ্ট পেলেও প্রকাশ করেননি চাহার। অবশ্য ছেলের প্রতি বাবার পূর্ণ বিশ্বাস ছিল।

ত্যাগি বলেন, ‘চ্যাপেলের কথামতো চাহার তাঁর ফিটনেস নিয়ে কাজ করে। শুধু গতিই নয়, স্যুইং নিয়েও অনেক পরিশ্রম করে সে। আমরা ঋষিকেশে ফিটনেস এবং অনুশীলন ক্যাম্প করেছিলাম, সেখানেই সে উন্নতি করেছে। বল স্যুইং করানোর ব্যাপারটা তাঁর মধ্যে জন্মগত ভাবেই ছিলো। সে মোবাইল থেকে দূরে থাকতো! ৯ টায় ঘুমাতে যেতো এবং খুব সকালে উঠতো।’

ছেলেকে পাশে থেকে পূর্ণ সমর্থন দিতে বিমান বাহিনীর চাকুরি ছেড়ে দেন চাহারের বাবা। ত্যাগি বলেন, ‘এটা খুবই কঠিন সিদ্ধান্ত ছিলো, কারণ পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ার একটা সম্ভাবনা ছিলো। চাহার তখনো সেভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি, তবে বাবার আশা ছিলো ছেলে পারবে। এরপর গতি থেকে মনোযোগ সরিয়ে স্যুইংয়ের প্রতি আরো বেশি মনোযোগী হন চাহার।’

ত্যাগি চিন্তা করেছিলেন চাহারের ব্যাটিংয়েও উন্নতির প্রয়োজন। পরিবার আগ্রায় স্থায়ী হবার পর ফ্লাডলাইটের আলোয় সন্ধ্যায় চাহারকে নিয়ে ব্যাটিংয়ের কাজ শুরু করেন এই কোচ। ত্যাগি বলেন, ‘চাহার নেটে সাধারণ ব্যাটারদের চেয়েও বেশি ব্যাটিং করতেন।’

রঞ্জি ট্রফিতে নিজের প্রথম দিনেই আইপিএল খেলার ইচ্ছে পোষণ করেছিলেন চাহার। এর ৬ বছর পর আইপিএলে প্রথমবার রাইজিং পুনে সুপারজায়ান্টসের হয়ে অভিষিক্ত হন তিনি। আর সেখান থেকেই চলতি আইপিএলের আগে নিলামে ১৪ কোটি রুপিতে বিক্রি হয়েছেন চেন্নাই সুপার কিংসে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link