চার পাণ্ডবের গন্তব্য

‘পঞ্চপাণ্ডব’ - এই টার্মটা সম্ভবত বাংলাদেশ ক্রিকেটে একই সাথে খুবই আলোচিত ও সমালোচিত। সেই পাঁচজন মানে মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এর মধ্যে মাশরাফি বিন মুর্তজা কাগজে-কলমে অবসর না নিলেও, আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার তাঁর একরকম শেষই হয়ে গেছে। রইলো বাকি চারঁ। বাকি চারজনের গন্তব্য কি হতে চলেছে? চারদিকে নানারকম গুঞ্জন ও ফিঁসফাস। চলুন, এই সময়ে এসে তাঁদের সম্ভাব্য পরিণতিটা ভেবে দেখা যাক।

‘পঞ্চপাণ্ডব’ – এই টার্মটা সম্ভবত বাংলাদেশ ক্রিকেটে একই সাথে খুবই আলোচিত ও সমালোচিত। সেই পাঁচজন মানে মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এর মধ্যে মাশরাফি বিন মুর্তজা কাগজে-কলমে অবসর না নিলেও, আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার তাঁর একরকম শেষই হয়ে গেছে।

রইলো বাকি চারঁ। বাকি চারজনের গন্তব্য কি হতে চলেছে? চারদিকে নানারকম গুঞ্জন ও ফিঁসফাস। চলুন, এই সময়ে এসে তাঁদের সম্ভাব্য পরিণতিটা ভেবে দেখা যাক।

  • সাকিব আল হাসান

চারজনের মধ্যে এখনও যেকোনো ফরম্যাটেই হয়তো সবচেয়ে বড় পারফরমার সাকিব আল হাসান। তবে, সমস্যা হল তিনি প্রায়ই টেস্টে খেলতে অনীহা জানান। ক’দিন আগেই দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের টেস্ট দল থেকে সরে দাঁড়াতে চেয়েছেন। এখানেই শেষ নয়, সদ্য খবর হল তিনি টেস্ট থেকে ছয় মাসের জন্য ছুটি চেয়েছেন।

মানে, ছয় মাস পর আবারও টেস্ট দলে ফেরার আশাটা বাঁচিয়ে রেখেছেন। কিন্তু, একটা দেশের টেস্ট দলের পরিকল্পনা এভাবে হতে পারে না। সাকিব বড় পারফরমার, হয়তো কিছু ক্ষেত্রে অপরিহার্য্যও। কিন্তু, এক সাথে এত নৌকায় পা রাখাটা তো সম্ভব নয়।

সাকিবের বার্তাটা পরিস্কার। তিনি মন দিতে চান টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে, ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে নিজের ক্যারিয়ারটা লম্বা করতে চান আরো। সেদিক থেকে তাঁর উচিৎ, টেস্টকে চিরতরে বিদায় জানানো। তাতে, তাঁর টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারটা লম্বা হবে, ওয়ানডেতেও আরো কার্য্যকর হবেন। হয়তো আরো কয়েকটা মৌসুম ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগেও (আইপিএল) নিয়মিত দল পাবেন। সাদা বলের ক্রিকেটে সাকিবকে তখন পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারবে বাংলাদেশ।

হ্যাঁ, সাকিবকে সেক্ষেত্রে অবশ্যই সাদা পোশাকে মিস করবে বাংলাদেশ দল। সেই বাস্তবতা মানতেই হবে। কারণ, সাকিবকে কখনো পাওয়া যাবে, কখনও পাওয়া যাবে না – এটা মাথায় নিয়ে দল কোনো পরিকল্পনা সাজানো সম্ভব নয়। আর বিশেষ করে খেলোয়াড়টা যখন সাকিব, তখন সেটা প্রায় অসম্ভব। ফলে, বিকল্প খুঁজতে হবে।

  • তামিম ইকবাল

তামিম টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটটা ছাড়তেই চেয়েছিলেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) হস্তক্ষেপে সেটা পূর্ণতা পায়নি। তাই, আপাতত তিনি মাস ছয়েকের জন্য ক্রিকেটের সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত ফরম্যাট থেকে দূরে আছেন। হয়তো এই ফরম্যাটে তিনি আর ফিরবেনই না।

সমস্যা হল, তামিম ইকবালের বয়স এখন প্রায় ৩৩। আগের মত রিফ্লেক্স সব সময় পান না। ছোট খাটো টেকনিক্যাল ত্রুটিগুলো অনেক বড় হয়ে দেখা যায়। এজন্যই টানা তিনবার ফজল হক ফারুকীর মত রুকি বোলারের হাতে পরাস্থ হন।

আসলে, তামিমের আরো আগেই অন্তত একটা ফরম্যাটকে বিদায় বলা উচিৎ ছিল। সেটা করতে পারলে হয়তো টেস্ট ক্যারিয়ারটা আরো বেশ খানিকটা লম্বা হত তাঁর। এখনও চাইলে সেটা সম্ভব। সেক্ষেত্রে সাদা বলের ক্রিকেটটা ছাড়তে হবে তামিমকে।

এটা তামিমবিদ্বেষী মন্তব্য মনে হলেও, আখেড়ে সেটা বাংলাদেশের জন্য ভাল হবে। কারণ, টেস্টে এখনও তিনি বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান। শুধু এই ফরম্যাটেই মনোযোগী হলে চাইলে আরো চার বছর সাদা পোশাকে তিনি সার্ভিস দিতে পারবেন বাংলাদেশকে। হ্যাঁ, তামিম ওয়ানডে খেলা চালিয়ে গেলে হয়তো, আবারও সেঞ্চুরি করবেন। সেটা তাঁর কোয়ালিটির জন্য। কিন্তু, আগের মত ধারাবাহিক হতে পারবেন না।

  • মুশফিকুর রহিম

মুশফিকুর রহিমের ক্ষেত্রে হিসাবটা খুব পরিস্কার। ওয়ানডে আর টেস্ট ক্রিকেটটা তাঁর চালিয়ে যাওয়া উচিৎ। আর পরিসংখ্যন বলে এই সময়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে তিনি অন্যতম সেরাদের একজন। টেস্টেও সেই অবস্থান থেকে তিনি খুব বেশি পিছিয়ে নেই।

সংকটটা হল টি-টোয়েন্টিতে। টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংয়ের মেজাজটা মুশফিক ক্যারিয়ার জুড়েই খুব কম সময় বুঝতে পেরেছেন। ফলে, অনেকবারই দল বিপদে পড়েছে। তাই, টি-টোয়েন্টি থেকে মুশফিকের সরে দাঁড়ানো দরকার।

মুশফিকের সবচেয়ে বড় শক্তি হল তিনি পাশবিক পরিশ্রম করতে পারেন। আর সেটা করেই তিনি একজন সাদামাটা ব্যাটসম্যান থেকে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানে পরিণত হতে পেরেছেন।

এই পরিশ্রমের ধারাবাহিকতা থাকলে, মুশফিক বাকি দুই ফরম্যাটে মানে ওয়ানডে আর টেস্টে খেলাটা চালিয়ে যেতে পারবেন। তার বয়সও প্রায় ৩৫ ছুঁইছুঁই, তবে মুশফিক পরিশ্রম দিয়ে ফিটনেসে বয়সের ছাপ পড়তে দিচ্ছেন কম। যেটা মোহাম্মদ হাফিজ বা শোয়েব মালিকের ক্ষেত্রে হয়েছে। তবে, কোনো ফরম্যাটেই আর কখনোই উইকেটের পেছনে দাঁড়ানো উচিৎ না মুশফিকের। সেটা তাঁকে চাপ দিয়ে হলেও করা উচিৎ টিম ম্যানেজমেন্টের।

  • মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংসটা খেলেই টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন। নি:সন্দেহে সাহসী একটা সিদ্ধান্ত। আর ওই জায়গাটাতে এখন তরুণদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যারা সুযোগ পেতে পারেন।

একই কথা ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। রিয়াদ এখন সাদা বলের ক্রিকেটেও নিজের নামের প্রতি একদমই সুবিচার করতে পারছেন না। আসলে পারবেনই বা কি করে, বয়সটা যে ৩৬। তাঁর ব্যাটিং রিফ্লেক্স নষ্ট হয়ে গেছে, হ্যান্ড আই কম্বিনেশন নেই বললেই চলে। স্ট্রাইক রোটেট করতে পারেন না ঠিক মত। এমনকি এমন ম্যাচ খুঁজে পাওয়া কঠিন, যেখানে রিয়াদ ফিল্ডিংয়ে বড় কোনো ভুল করছেন না। অথচ, তিনিই নাকি টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক, যেটা তারুণ্যের খেলা। প্রতিনিয়ত নিজের সাথে পাল্লা দেওয়ার খেলা।

রিয়াদ এক সময় ফিনিশার ছিলেন, প্রয়োজনে ইনিংস বিল্ড আপও করতে পারতেন। সেটা এখন আর পারছেন না। ক্রিকেট পারফরমিং আর্ট।  এর বাস্তবতাটাই এমন। এখানে কোনো কিছুই স্থায়ী নয়। যত দিন এগোবে, ততই সেরা সময়টা অতীত হতে থাকবে। একটা সময় ওই একই আর্টই করতে গেলে সেটা খুব কুৎসিৎ দেখাবে, যেটা এখন রিয়াদের ক্ষেত্রে হচ্ছে।

মাশরাফি বিন মুর্তজার ক্যারিয়ারের শেষটা সুখকর হয়নি। আগে যার দলে থাকা, অধিনায়কত্ব করা নিয়ে কোনো প্রশ্নই ওঠেনি – সেই মাশরাফিকে নিয়ে প্রশ্ন ওঠে ২০১৯ সালের বিশ্বকাপের পর। সেই প্রশ্নটা আজকাল রিয়াদকে নিয়েও উঠছে। রিয়াদের উচিৎ সময় থাকতেই কিংবদন্তি হিসেবে বিদায় নিয়ে ফেলা।

সময়ের ধর্মই বদলে যাওয়া। চাইলেও তাই সময়ের নিয়তি পাল্টে ফেলা যাবে না। সেটা এই চার পাণ্ডবকেও বুঝতে হবে। বুঝতে হবে বোর্ডকেও। দুই পক্ষ যত দ্রুত বুঝে ফেলতে পারবেন – ততই সেটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য মঙ্গলজনক হবে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...