কোন জমিতে ধানের ব্লাস্ট রোগ দেখা গেলে কৃষকের মাথায় হাত পড়বেই। কেননা মাটি থেকে এই রোগ প্রথমে একটি গাছে , এরপর তা ছড়িয়ে পড়তে পারে পুরো জমিতেই। অর্থাৎ কোনভাবে একটা গাছে এই রোগ হলে তা আস্তে আস্তে পুরো ফসল নষ্ট করে দিতে পারে। বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপেও যেন ছড়িয়ে পড়ছে ব্লাস্ট রোগ।
বাংলাদেশের ওপেনিং সংকট ব্যাপারটা অনন্তকাল ধরেই চলছে। সেই সমস্যা সমাধানে নানারকম চেষ্টা করেও এখন পর্যন্ত সফল হওয়া যায়নি। তবে চিন্তার বিষয় হচ্ছে ওপেনারদের সংকটটা ছড়িয়ে যাচ্ছে মিডল অর্ডার ব্যাটারদের মাঝেও। বাংলাদেশ এখন পুরোদস্তুর লোয়ার অর্ডার নির্ভর এক দল।
এবারের বিশ্বকাপে ওপেনিং পজিশনে টানা সুযোগ দেয়া হচ্ছে নাজমুল হোসেন শান্ত ও সৌম্য সরকারকে। নানা পথে হেঁটেই এই দুজনের উপর ভরসা রেখেছে বাংলাদেশ দল। ফলে এই দুজন যেমনই করুক খুব বেশি সমালোচনা করার সুযোগ নেই। কেননা তাঁদের থেকে ভালো অপশন আমরা গত এক বছর ধরে খুজেও পাইনি।
তবে ওপেনিং সংকট ছাপিয়ে এখন বাংলাদেশের বড় দুশ্চিন্তা মিডল অর্ডার নিয়ে। বিশেষ করে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুই নাম লিটন দাস ও সাকিব আল হাসানকে নিয়ে। এই দুজন বাংলাদেশের হয়ে নিয়মিত তিন ও চার নাম্বার পজিশনে খেলছেন। তবে এই দুই পজিশন থেকেও এখন পর্যন্ত আশানরূপ ফল পায়নি বাংলাদেশ।
প্রথন চারজন ব্যাটারকে নিয়েই কমবেশি ভুগতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। যেমন আজ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ করেছে ১৫০ রান। তবে এই স্কোর আরো অনেক বড় হতে পারতো প্রথম চারজন আরেকটু দায়িত্ব নিলে।
শান্ত আজ ৭১ রানের ইনিংস খেলেছেন। এছাড়া বাকি তিন জন লিটন, সাকিব ও সৌম্য মিলে খেলেছেন মোট ৩৭ রান। আর এই তিনজন বল খেলেছেন ৩৪ টি। তাঁদের সম্মিলিত স্ট্রাইক রেট ১০৮.৮২। অর্থাৎ টপ অর্ডারের তিনজন ব্যাটার ৩৪ বল খেলে করেছেন মাত্র ৩৭ রান।
যেখানে লিটন দাস ১২ বল থেকে করেছেন ১৪ রান এবং সাকিব আল হাসান ২০ বল খেলে করেছেন ২৩ রান। সৌম্য দুই বল খেললেও রানের খাতা খুলতে পারেননি। ওদিকে নাজমুল হোসেন শান্তও শুরুতে নিজের কাজটা ঠিকঠাক করতে পারেননি।
ওপেনার হিসেবে পাওয়ার প্লের যথাযথ ব্যবহার করতে পারেননি। এমনকি নিজের অর্ধশতক পূরণ করতে শান্ত খেলেছেন ৪৫ বল। ব্যাটিং করেছেন ১১১.১১ স্ট্রাইকরেটে। তবে পরের দশ বলে নিজের স্ট্রাইকরেট কিছুটা বাড়াতে পেরেছেন শান্ত। শেষ পর্যন্ত ৫৫ বল খেলে তিনি করেছেন ৭১ রান। তবে ইনিংসের প্রায় ৫০ শতাংশ বল খেলা ওপেনারের কাছ থেকে ৭১ রানই কী টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে যথেষ্ট?
সবমিলিয়ে প্রথম চার ব্যাটারের এই সমস্যা পুরো বিশ্বকাপ জুড়েই চলছে। নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে এই চারজন মিলে করেছিলেন মাত্র ৫৫ রান। পরে এই ধাক্কা সামাল দিয়েছিলেন আফিফ হোসেন ধ্রুব ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত।
আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তো ব্যর্থ হয়েছিল পুরো ব্যাটিং লাইন আপই। সেদিনও প্রথম চার ব্যাটার মিলে করেছিলেন ৫৯ রান। লিটন দাস ৩১ বল খেলে করেছিলেন ৩৪ রান। আর আজও সেই অফ ফর্ম ধরে রেখেছেন টপ অর্ডার ব্যাটাররা।
এরপর বাংলাদেশের স্কোর বাড়ানোর দায়িত্বটা নিতে হয়েছে পাঁচে ব্যাট করতে নামা আফিফকে। এই ব্যাটার ১৯ বল থেকে করেছেন ২৯ রান। ব্যাটিং করেছেন ১৫২.৬৩ স্ট্রাইকরেটে। আজ এই ১৫০ রানই হয়তো জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল।
তবে বাংলাদেশের পরের দুটো ম্যাচ ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে। তাঁদের বিপক্ষে জিততে হলে ইনিংসের শুরু থেকেই হতে হবে আরো অনেক বেশি আক্রমণাত্মক। বিশেষ করে লিটন দাস ও সাকিব আল হাসানের ব্যাট থেকে রান আসাটা সবচেয়ে বেশি জরুরী বাংলাদেশের জন্য। নাহলে লোয়ার মিডল অর্ডারদের ওপর ভরসা করে কিংবা একশো’র আশেপাশে স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করে অন্তত ভারত-পাকিস্তানের সাথে ম্যাচ জেতা সম্ভব না।