এবাদত না থাকাটা ‘সেটব্যাক’

আগামীকাল শ্রীলঙ্কার উদ্দেশ্যে রওনা হবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। এশিয়া কাপের জন্যে দেশ ছাড়ার আগে তাই স্বাভাবিকভাবেই আয়োজিত হয়েছে সংবাদ সম্মেলন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রধান কোচ চান্ডিকা হাতুরুসিংহে ও সদ্য হওয়া অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। দু’জনই আশার বাণি শুনিয়ে গেছেন। তবে একটা জায়গায় দু’জনের কণ্ঠ থেকেই ঝড়েছে আফসোসের সুর। এবাদত হোসেনকে দলে না পাওয়া যে সুরের জন্ম দিয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের পেস আক্রমণ রয়েছে দূর্দান্ত ফর্মে। মাঠের পারফরমেন্স হোক কিংবা পরিসংখ্যান, সবখানেই বাংলাদেশী পেসারদের আধিপত্য বিরাজমান। সেই আধিপত্যের অন্যতম সেনানী এবাদত হোসেন। দলের পেস আক্রমণ তিনিও ছিলেন বেশ কার্য্যকর এক অস্ত্র। প্রথমে তাকে রেখেই এশিয়া কাপের দল ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে ইনজুরি কাটিয়ে উঠতে পারেননি এবাদত হোসেন। তাই তার বদলি হিসেবে দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তানজিম হাসান সাকিবকে।

তরুণ এই পেসারও লম্বা সময় ধরেই ছিলেন জাতীয় দলের আশেপাশে। তবে অভিজ্ঞতার বিচারে এবাদতের দলে না থাকাটা বাংলাদেশের জন্যে ‘সেট ব্যাক’। অন্তত কোচ আর অধিনায়ক তেমনটাই মনে করেন। এবাদত প্রসঙ্গে চান্ডিকা হাতুরুসিংহে বলেন, ‘সে (এবাদত) আমাদের অন্যতম কার্য্যকর বোলার, গতিশীল বোলার। হ্যা, এটা বেশ বড় ক্ষতি। সরাসরি তাকে বদলি করানোটা বেশ কঠিন কাজ। আশা করি সে দ্রুতই সেরে উঠবে।’

গেল জুলাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ইনজুরিতে পড়েছিলেন এবাদত হোসেন। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে হাটুর ইনজুরি তাকে ছিটকে দেয় সিরিজ থেকে। সবাই ভেবেছিল যথেষ্ট সময় রয়েছে তিনি ফিট হয়ে ফিরবেন এশিয়া কাপে। এবাদত নিজেও ফিরতে চেয়েছিলেন। ছিলেন বড্ড মরিয়া। পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার প্রতিটি দিন নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়েই চেষ্টা চালিয়ে গেছেন এবাদত হোসেন। সবাই যখন স্কিল ট্রেনিং ও নির্দিষ্ট ফিটনেস ট্রেনিংয়ে ছিলেন ব্যস্ত, তখন এবাদত নিজের ইনজুরি মুক্ত হওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। তবে কাজের কাজটি হয়নি। তাইতো খোদ সাকিব আল হাসানও খানিকটা আফসোস করলেন।

সাকিব বলেন, ‘দুঃখজনকভাবে এবাদত আমাদের দলের অংশ হতে পারছে না। ও আমাদের জন্যে বেশ গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। সে জায়গা থেকে আমাদের জন্যে একটু সেটব্যাক।’ সদ্য অধিনায়ক হওয়া সাকিবও নিশ্চয়ই আলাদা পরিকল্পনা সাজিয়ে রেখেছিলেন এবাদতকে ঘিরে। সে পরিকল্পনাটায় খানিক পরিবর্তন আনতেই হচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্টকে। এবাদতও নিশ্চয়ই এবারের এশিয়া কাপের সদস্য হতে না পেরে ব্যথিত।

তেমনটা হওয়াও স্বাভাবিক। কেননা তিনি তো ছিলেন দূর্দান্ত ফর্মে। বাংলাদেশের জার্সিতে সাত ওয়ানডে ইনিংসে বল করেছেন এ বছর তিনি। যার মধ্যে বাগিয়েছেন ১১টি উইকেট। ইকোনমি রেট পাঁচের ঘরে। টেস্টের চার ইনিংসে তাঁর পকেটে ঢুকেছে ১০টি উইকেট। সুতরাং দারুণ ছন্দে থাকা পেস আক্রমণে তিনিও কার্য্যকর অবদানই রেখেছেন। এমন একজন বোলারকে পাওয়া যাবে না বাংলাদেশের ডেরায়, তা নিঃসন্দেহে একটু ব্যাকফুটেই ঠেলে দেয় দলকে।

একটু পুরনো বলে এবাদত বেশ ফলপ্রসূ। তিনি সাধারণত মিডেল ওভারগুলোতে উইকেট তুলে দিতে, রানের চাকায় লাগম টেনে দিতে সিদ্ধহস্ত। শ্রীলঙ্কা আর পাকিস্তানের মাটিতে হওয়া এবারের এশিয়া কাপ হতে পারে রান প্রসবা। ঠিক সে কারণেই সঠিক চ্যানেল বরাবর বল করতে পারা বোলারকে প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের। তবে দুর্ভাগ্যই বলা চলে এবাদত আর দলের। তবে এবাদত এখনও নিজের পুনর্বাসনে রাখছেন পূর্ণ মনোযোগ। কেননা সামনেই তো ক্রিকেট বিশ্বকাপ। সেই টুর্নামেন্ট নিশ্চয়ই এবাদত টিভি সেটের পর্দায় দেখুক, তেমনটা দল ও এবাদত কেউই চায় না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link