কোনো ধরনের ক্রিকেটে পারফর্ম না করেও তিন বছর পর জাতীয় দলে ফিরেছিলেন সাব্বির রহমান। কিন্তু যে তিমিরে হারিয়েছিলেন সেই তিমিরেই তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে আছেন তিনি। ফিরে এসেও বাংলাদেশ ক্রিকেটে আলোকচ্ছটার স্ফূরণ ঘটাতে পারলেন না সাব্বির।
এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫, সংযুক্ত আর আমিরাত সফরে ০ ও ১২ আর পাকিস্তানের বিপক্ষে আজ ১৮ বলে ১৪। সব মিলিয়ে তিন বছর পর দলে ফিরে এসে ৪ ম্যাচে ৩৬ বলে ৩১। প্রতিটি ম্যাচেই ব্যাট করছেন পাওয়া প্লেতে। সাব্বির সেই পাওয়ার প্লে’র ফায়দা তো লুটতেই পারেননি, উল্টো তাঁর শট সিলেকশন, বল রিড না করতে পারার সীমাবদ্ধতার চিত্র উঠে এসেছে প্রতি ম্যাচেই।
শেষ ৪ ম্যাচে সাব্বির রহমানের ব্যাটিং নিয়ে শুধু একটি মন্তব্যই করা যায়। যে পাওয়ার হিটিং এর জন্য ওপেনিং রোলে তাঁকে ব্যাট করার দায়িত্বটা দেয়া হয়েছিল, তার ছিটেফোঁটাও মেলেনি কোন ম্যাচে। বড় শট খেলার জন্য ডাউন দ্য উইকেটে তেড়েফুঁড়ে আসাই যেন একমাত্র রসদ। এ ছাড়া শট বল, কুইক বাউন্সারে সাব্বিরের দুর্বলতা চোখে পড়েছে বেশ দৃষ্টিকটুভাবে। চার আউটের তিনটিতেই হয়েছেন শট বল আর বাউন্স সামলাতে না পেরে।
প্রত্যাবর্তনের আগে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের হয়ে সবশেষ টি-টোয়েন্টি খেলেছিলেন সাব্বির। এরপর দল থেকে বাদ পড়ার পর ৪ টি ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট খেলেছিলেন তিনি। সেই ৪ টুর্নামেন্টে সাব্বির রহমানের ব্যাটিং ছিল রীতিমত হতাশাজনক।
৩৬ ইনিংসে মাত্র দুই ফিফটিতে করেছিলেন ৫২৮ রান। সেই দুই ফিফটির শেষটি এসেছিল আবার ২০২০ এর বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে। অর্থাৎ শেষ দুই বছরে স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে কোনো ফিফটি নেই সাব্বিরের। আরো নির্দিষ্ট করে বললে শেষ এক বছরে এই ফরম্যাটে তিনি একবারই মাত্র ত্রিশ রানের ইনিংস খেলেছেন।
গত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ৩৯.৬১ গড়ে করেছিলেন ৫১৫ রান। কিন্তু শুভঙ্করের ফাঁকিটা হচ্ছে এক সেঞ্চুরি আর এক ফিফটি বাদ দিলে বাকি দশ ম্যাচেই তিনি ছিলেন ব্যর্থ।
অতীত পরিসংখ্যান কিংবা সক্ষমতা, যেটাই বলা হোক না কেন সাব্বিরকে আাবারো দলে ভিড়িয়েছিল বাংলাদেশ। তবে সেই আস্থার প্রতিদান দিতে রীতিমত ব্যর্থ হচ্ছেন তিনি। অবশ্য পারফর্ম না করা কোনো ক্রিকেটারকে শুধু মাত্র সক্ষমতা আর অভিজ্ঞতার বিচারে মাঠে নামিয়ে দিয়ে ব্যর্থ হওয়ার দায়টা টিম ম্যানেজমেন্টেরও আছে।
একজন ক্রিকেটারকে ৪ ম্যাচে দিয়েই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো অনুচিত। সেটা যৌক্তিকও না। সাব্বির রহমান সামনে কতটা সুযোগ পাবেন বা কতটা সুযোগ তিনি ডিজার্ভ করেন তা প্রশ্নসাপেক্ষ। কিন্তু মাঠের ক্রিকেটে আপাতৎ নিজের প্রত্যাবর্তনের গল্পটা রাঙাতে পারলেন না সাব্বির।
অবশ্য এটাও বলা যেতে পারে, হঠাৎ চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো একটি সুবর্ণ সুযোগ তিনি হেলায় হারালেন। তবে ফিরে আসার মঞ্চটাও তিনি তৈরি করতে পারেন। ২০১৬ সালের এশিয়া কাপে হয়েছিলেন টুর্নামেন্ট সেরা। সেই সুসময় আবারো দৃশ্যপটে আনার সক্ষমতা তাঁর রয়েছে। তবে খুব দ্রুত তেমন কিছু না করতে পারলে আবারো দু:সময়ের বৃত্তেই বন্দী হয়ে যাবেন তিনি। সেখান থেকে বের হয়ে আবারো কোনো প্রত্যাবর্তনের সুযোগ তিনি হয়তো আর পাবেন না।