লড়াইয়ের নাম অনুষ্টুপ

২০১২ – ১৩ মৌসুম। চন্দন নগরের সেই ছেলেটা মোট ৬ টি ম্যাচে মাত্র ১৬৬ রান সংগ্রহ করল। প্রশংসা কুড়ালো না খুব বেশি একটা। ছেলেটার নাম অনুষ্টুপ মজুমদার।

এরপর পরের মৌসুম – ২০১৩/১৪। ছেলেটার অবস্থা আরো খানিকটা সঙিন হল। এই মৌসুমে ডান হাত ব্যাটসম্যানটির ঝুলিতে মোট ৬ ম্যাচ খেলে মাত্র ১৫৬ রান। ছেলেটা বেশ বুঝতে পারছিল যে বাংলা রঞ্জি দলে জায়গাটা টিকিয়ে রাখা মুশকিল হয়ে পড়বে। তাই, শেষমেশ সে ‘রেলওয়েজ’ দলে নাম লেখাল। রেলে চাকরিও জুটলো।

২০১৪ – ১৫ মৌসুম। ছেলেটা রেলের জার্সিতে মোট ৫ টি ম্যাচ খেলে মাত্র ১৭০ রান সংগ্রহ করল। শেষমেশ, ছেলেটা রেল দলেও জায়গা হারাল।
ছেলেটা পড়লো দোটানায়। স্থায়ী চাকরি টিকিয়ে রাখার জন্য ক্রিকেটকে ছেড়ে দেবে নাকি ক্রিকেট খেলার জন্য চাকরি ছেড়ে দেবে?

কিন্তু, ছেলেটা তার প্রথম প্রেম ক্রিকেটকে ছাড়তে রাজি হল না। চাকরি ছেড়ে দিয়ে ঘরে ফিরল। শুরু হল বাংলা দলে প্রত্যাবর্তনের লড়াই, ‘আমি ক্রিকেট খেলার জন্য চাকরি ছেড়েছি। তাই, আমি কোনদিন ক্রিকেট ছাড়ার কথা ভাবিও না।’

শুরু হল লড়াই – ফেরার, নিজেকে ফিরে পাবার। যে লড়াইয়ে জয় আসতেই হবে। পরের দু বছর ক্লাব ক্রিকেট খেলে আবার বাংলা দলে ফিরলো ছেলেটা। লড়াইটা মোক্ষম হল। স্বপ্ন পূরণ হল আরেকবার।

২০১৭ – ১৮ মৌসুম। অনুষ্টুপের ফিরে এসে নিজেকে চেনানোর মৌসুম। ৩ টি শতরানসহ ৫৬০ রান সংগ্রহ করে বাংলা দলে আবার পাকা জায়গা করে নিল। এবার আর পেছনে ফিরে তাকানো নয়।

২০১৯ – ২০ মৌসুম। এবার, রঞ্জিতে কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমি ফাইনালে দু দুটো ম্যাচ জেতানো শতরানসহ পাঁচ শতাধিক রান সংগ্রহ করে বাংলার ক্রিকেটকে দীর্ঘ দেড় দশক পর ভারত সেরার লড়াইয়ের শেষ ল্যাপে পৌঁছে দিয়েও দীর্ঘ তিন দশকের খরা কাটিয়ে বাংলাকে রঞ্জি এনে দিতে পারল না। শেষ পর্যন্ত লড়লেন অনুষ্টুপ। পারলেন না।

২০২২ – ২৩ মৌসুম। চলতি মৌসুম। রঞ্জিতে সেমিফাইনালে ইন্দোরে মধ্যপ্রদেশের বিরুদ্ধে শতরান করে ম্যাচের শুরুতেই দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যাওয়া বাংলাকে প্রথম দিনের শেষে লড়াইয়ের জায়গায় রেখে দিয়ে দীর্ঘ তিন দশকের খরা কাটিয়ে বাংলার রঞ্জি জয়ের স্বপ্নকে জিইয়ে রাখলো অনুষ্টুপ। দ্বিতীয় ইনিংসে করল ৮০ রান।

কিছু লড়াইয়ের শেষটা জাতীয় দলের দরজা দিয়ে হয় না, জানি। অন্তত রঞ্জি ট্রফি জয়ের সোনালী আলো দিয়ে হোক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link