বাংলাদেশ হেরেছে ম্যাচের আগের রাতে, ডিনার ডেটে!

কোহলি কি খান, সেটা তামিম ইকবাল বা বাংলাদেশ দল গুগল করলেই পেয়ে যাবেন। তাঁর খাবারের অধিকাংশই সেদ্ধ, সেখানে তেল-মশলার অবস্থান নেই। সেকারণেই, বিরাট যে বয়সে বিশ্বকাপ জিতে নেন, সেই বয়সে তামিম ইকবাল ধারাভাষ্যে কাটান, বোর্ডের পরিচালক পদ পাওয়ার পরিকল্পনা করেন।

ম্যাচটা বাংলাদেশ জিতে গেলে আলোচনা হত না। কিন্তু, এখন সমালোচনা হচ্ছে। কারণ বাংলাদেশ হেরেছে, বাজে ভাবে। মাঠের পারফরম্যান্সের পেছনেও আছে কারণ। বাংলাদেশ হেরেছে ম্যাচের আগের দিন রাতে। ঘটনার সূত্রপাত সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবালকে ঘিরে।

তামিম ইকবাল দুবাই গেছেন। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির জন্য বাংলাদেশ দল আগেভাগেই সেখানে পাড়ি জমিয়েছে। প্রতিপক্ষ ভারত, বড় ম্যাচ, বাড়তি প্রস্তুতি তো লাগবেই। দলের সবাই একত্রিত হয়েছেন, দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে, একসঙ্গে খাওয়াদাওয়াও করেছেন। ক্রিকেটারদের পারস্পরিক সম্পর্কের এই সৌন্দর্যটা অবশ্যই ইতিবাচক। কিন্তু সমস্যা বাঁধল অন্য জায়গায়।

তামিম তার ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে সেই মিলনের মুহূর্তের ছবি শেয়ার করেছেন। সেই ডিনার ডেটের ভিডিও-ও পাওয়া যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, নাজমুল হোসেন শান্ত, মেহেদী হাসান মিরাজ— সবাই খাবারের টেবিলে। এবং তাদের প্লেটে যে খাবারগুলো রয়েছে, সেটা চোখে পড়ার মতোই তৈলাক্ত। অতিরিক্ত মশলা, তেল চিটচিটে চেহারা— দেখলেই বোঝা যায়, এটি ম্যাচের আগের রাতে কোনো অ্যাথলেটের আদর্শ খাবার নয়।

ধরে নেওয়া গেল, টিম নিউট্রিশনিস্টের পরামর্শেই খাবারদাবারের এই আয়োজন করা হয়েছে। হতে পারে, আপাত দৃষ্টিতে খাবারগুলো ভারী মনে হলেও, পেশাদার ক্যাম্পের পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই এগুলো রাখা হয়েছে। কিন্তু, আমজনতার কাছে সেই বিশদ তথ্য তো নেই। আবার এটাও ঠিক যে, কোনো নিউট্রশনিস্টই আসলে কোকাকোলা খাওয়ার অনুমোদন দেবেন না, কেউ দিলে তাঁকে এই মুহূর্তে বাদ দিতে হবে।

সমর্থকরা দেখেছে, ম্যাচের আগের রাতে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা বসে জমিয়ে তেল-মশলা ভাসানো খাবার খাচ্ছেন। আর পরদিন মাঠে নেমে যদি শরীরে জড়তা দেখা দেয়, গতি কমে যায়, ভুল শট খেলে উইকেট দিয়ে আসেন কেউ— তখন কী হবে? দুবাইয়ে ভারতের বিপক্ষে তো সেটা হয়েছেই। মাত্র ৩৫ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আগুন ছড়িয়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক। ‘রাতে অত তেল-মশলা খেলে পরদিন মাঠে নামার মতো স্ট্যামিনা থাকবে?’ কিংবা ‘এইজন্যই তো দল ভালো খেলতে পারে না, আগে নিজেদের ফিটনেস ঠিক করুক!’ — এমন সব মন্তব্যে ভরে যাবে টাইমলাইন। খেলার মাঠের পারফরম্যান্স খারাপ হয়েছে, এই খাবার প্রসঙ্গ এখন আরও বেশি করে সামনে চলে এসেছে। দোষারোপ চলছে ক্রিকেটারদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার ওপর।

এমন এক বিতর্ক তৈরির সুযোগ তৈরি হলো তামিমের স্টোরির কারণে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই যুগে একটু সচেতন থাকাটা জরুরি। তামিমের মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়, যে কিনা বহু বিতর্ক সামলে এসেছেন, তিনি চাইলে এটা এড়াতে পারতেন। পোস্টটা দেয়ার আগে একবার ভাবতে পারতেন— এই ছবির প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে? ম্যাচের আগের রাতে টিম ডিনারের ছবি দিতে সমস্যা নেই, কিন্তু তেলচিটচিটে খাবারের ক্লোজআপ শটের দরকার ছিল কি?

শেষ পর্যন্ত, খেলাটা তো মাঠে গিয়েই হবে। ভালো খেললে কেউ খাবার নিয়ে প্রশ্ন উঠত না, ভাল হয় বলেই উঠছে। সমালোচনার তীর কোনদিকে যায়, সেটা বুঝতে তামিমের মতো অভিজ্ঞতার দরকার হয় না। আর সেই অভিজ্ঞতাও তো তামিমের আছেই।

আর এরকম দৃশ্য ভারতীয় দলে আপনি দেখবেন না। কোহলি কি খান, সেটা তামিম ইকবাল বা বাংলাদেশ দল গুগল করলেই পেয়ে যাবে। তাঁর খাবারের অধিকাংশই সেদ্ধ, সেখানে তেল-মশলার অবস্থান নেই। সেকারণেই, বিরাট যে বয়সে বিশ্বকাপ জিতে নেন, সেই বয়সে তামিম ইকবাল ধারাভাষ্যে কাটান, বোর্ডের পরিচালক পদ পাওয়ার পরিকল্পনা করেন। এই সংস্কৃতি দেশের জুনিয়র ক্রিকেটারদের মধ্যেও ছড়িয়ে গেলে সেটা ইতিবাচক কিছু বয়ে আনবে না নিশ্চয়ই।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Share via
Copy link