মিস কলের দিনগুলোতে প্রেম

শুনেছিলাম এক দেখাতে জানাশোনা, দুই দেখাতে হয় জাদুটোনা আর তিন দেখাতে হয় মন দেয়া-নেয়া। তবে মেহেদী হাসান মিরাজের এত ধৈর্য্য ছিল না যে তৃতীয় দেখার জন্য অপেক্ষা করবে। তাই প্রথম দেখাতেই মন দিয়ে দিলেন প্রীতিকে; রাবেয়া আক্তার প্রীতি।

বন্ধু বান্ধবের আড্ডায় তো হরহামেশাই মজার ছলে বলা হয়ে থাকে প্রেম করার জন্য মেয়ে খুজে দেয়ার জন্য। মিরাজ ও বলে ছিলেন একই ভাবে। তবে সমবয়সী কোন বন্ধুকে নয়, বন্ধুসুলভ কোচ আল মাহমুদ ভাই কে। বলেছিলেন বিয়ে করার জন্য তাঁর পছন্দসই কোন মেয়ে আছে কিনা।

২০১৪ সালের ঘটনা। মিরাজ তখন কত বছরে বয়সেরই বা হবেন। বড়জোর ষোল পেরোনো কিশোর। মাহমুদ ভাইও দুষ্টামির ছলে বললেন একটা মেয়ের কথা। মিরাজ সাথে সাথে রাজি মেয়েটিকে দেখার জন্য আর তাদের প্রথম দেখা ১৮ মার্চ ২০১৪ সালে।

প্রথম দেখাতেই মনের মন্দিরে ঘন্টা বেজে উঠলো মিরাজের। ঠিক করে ফেললেন বিয়ে একেই করবেন। কিন্তু সদ্য বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে পা দেওয়া ছেলের জন্য তা ছিলো ট্রলারে ছড়ে প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দেওয়ার মতই। ওই মেয়েটি মানে, প্রীতি তখন খুলনার বঙ্গবাসী স্কুলের ছাত্রী।

ভয়-জড়তা দুরে সরিয়ে আত্মবিশ্বাসে টুইটুম্বুর মিরাজ স্কুল থেকে ফেরার পথেই প্রীতিকে জানিয়ে দিলেন মনের কথা। তৎক্ষনাৎ অবশ্য বড় রকমের একটা ‘না’ শুনতে হলো মিরাজকে। তবু সাহস করে নিজের ফোন নম্বর দিয়ে এলেন। বলে আসলেন ভাল লাগলে কল দিতে পারে, মিস কল দিলেও হবে।

পরে সপ্তাহ, মাস কেটে গেল, হঠাৎ একদিন মাঠ থেকে ফিরে অচেনা এক নম্বর থেকে মিস কল দেখে ব্যাক করলেন মিরাজ। হ্যালো বলেই ওপাশ থেকে কল কেটে দিলো। তারপর আরো কয়েক দিন পর আবার কল, একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। তবে ধীরে ধীরে আলাপ বাড়ে, শুরু হয় বন্ধুত্ব।

সপ্তাহের পর সপ্তাহ একটা মিস কলের জন্য অপেক্ষা করতেন মিরাজ। প্রিয় গানের সুরের চেয়েও ফোনের রিংটোন তখন বেশি প্রিয় হয়ে উঠে তাঁর। কিন্তু আগ বাড়িয়ে তার যে ফোন করা মানা। এভাবেই আস্তে আস্তে সম্পর্কের বন্ধন গড়তে থাকে মিরাজ জুটির। তবে ভালোবাসার প্রশ্নে প্রীতির ‘হ্যা’ শুনতে আরো দু’টিবছর অপেক্ষা করতে হয়েছে মিরাজ কে।

সব প্রেমের মতই এই জুটির জন্যও এসেছে বাধা-বিপত্তি। ধরা পড়ে বাবা-মায়ের হাতেও মার খেতে হয়েছে প্রীতিকে। একদিকে সম্ভাবনা ক্যারিয়ার অন্যদিকে ভালোবাসার মানুষ, দুটোই ভালোভাবে সামলেছিলেন মেহেদি মিরাজ।
শত প্রতিকূলতার পরেও ভালবাসার আবেদনে একে-অপরের হাতের বন্ধন আলগা হয়নি একটুও।

২০১৬ সালে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ খেলার পর যখন মিরাজ পরিচিত পুরো দেশে তখন আর কোন আপত্তি ধোপে টিকেনি। মেয়ের আবদার মেনে নিয়েছিলেন প্রীতির বাবা-মা। কিন্তু ক্ল্যাইম্যাক্স তখনো বাকি! মিরাজের অভুতপূর্ব সাফল্যে অভিভূত মিরাজ পরিবার এবার বেঁকে বসললো। ক্রিকেটার ছেলেকে তো আর যেন-তেন জায়গায় বিয়ে দেয়া যায় না। নিজের পরিবারকে বুঝাতে মিরাজের খরচ হয়েছে আরো দুই বসন্ত।

শেষ পর্যন্ত বৃষ্টিস্নাত এক দিনে ওয়েলিংটনের হোটেলে বসে ২০১৯ সালের আট মার্চ মিরাজ ঠিক করলেন আর নয়। এবার প্রনয়কে পরিনয় দিবেন। দেশে ফিরেই ৬ বছরের প্রণয়ের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে আরো একটি সফল প্রেমের পরিনতির গল্প লিখলেন মিরাজ-প্রীতি জুটি। শোনা যায়, বিয়ের প্রস্তাবটা নাকি রবীন্দ্রনাথে গান গেয়েই দিয়েছিলেন মিরাজ! সেবছরের ২১ মার্চ বিয়ে হয় তাঁদের।

সম্পর্কের জেরে এসেছে অনেক কষ্ট আর করতে হয়েছে সংগ্রাম। খেলোয়াড় হওয়ায় হয়তো অন্যদের মত প্রিয়তমাকে সময় দিতে পারেননি ঠিকমত। থাকতে হয়েছো দূরে দূরে। অভিমান থেকে অবহেলা কিংবা সন্দেহ অনেক কিছুই হতে পারতো, কিন্তু ভালবাসার টানে সব সমস্যা উৎরে গেছেন,পরষ্পরের প্রতি বিশ্বাস আর ভরসা ছিল দেখেই হয়তো আজ তারা হাজারো সম্পর্কের আদর্শ হতে পেরেছেন। সেই ঘরটা আলো করে ২০২০ সালের অক্টোবরে এসেছে এই দম্পতির পুত্র সন্তান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link