করোনা পরিস্থিতি শেষ হওয়ার পর সুন্দর একটা মৌসুমের আশা নিয়ে লিগ শুরু করেছিল বাফুফে। আশা ছিল নতুন সময়ে নতুন করে ঘুরে দাঁড়াবে ফুটবল। কিন্তু বিতর্ক যেন একের পর এক চেপেই ধরেছে বাফুফেকে। রেফারি বিতর্ক নিয়ে জল গড়িয়েছে ফিফা পর্যন্ত। রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়ে অখুশি হওয়ায় শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব থেকে গোলের ফুটেজ পাঠানো হয়েছে ফিফাতে। তাতে অবশ্য লাভ হয়নি কিছু। তবে এখন যে অভিযোগ আসতে চলেছে ক্রীড়াঙ্গনে তার কাছে আগের সব কন্ট্রোভার্সি নস্যি। চলমান লিগেই পাঁচটি ম্যাচকে নিয়ে এসেছে অভিযোগ। ম্যাচ পাতানোর।
মৌসুমের শুরু থেকেই প্রিমিয়ার লিগ নিয়ে কথা উঠেছে। করোনা পরিস্থিতিতে ঢাকার বাইরে আরো তিন জায়গায় ভেন্যু দেওয়ায় অখুশি হয়েছিলেন অনেকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঢাকাসহ মুন্সিগঞ্জ, কুমিল্লা ও টঙ্গীতে প্রিমিয়ার লিগের খেলা ভাগ করে দেয় বাফুফে। তার সুফলও আছে, বেশ ভালৈ দর্শকসমাগম দেখা যায় মাঠে। কিন্তু এই দর্শকপূর্ণ ম্যাচেই ম্যাচ পাতানোর মতন কাজে অভিযোগ এসেছে দুই দলের বিপক্ষে।
ম্যাচ পাতানোর কনসেপ্টটা খুবই সোজা। ম্যাচের জয়-পরাজয় আগে থেকেই নিশ্চিত করা হয়ে থাকে, বাকি থাকে শুধু বল মাঠে গড়ানো। ম্যাচে খেলোয়াড়রা যেভাবেই খেলুক না কেন, জয় পরাজয় আগে থেকেই নিশ্চিত হয়ে থাকে। এই ম্যাচ পাতানো ও স্পট ফিক্সিংয়ের অভিযোগে লিগের দুই দল আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ ও ব্রাদার্স ইউনিয়নকে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)।
দুই দলের মোট ৫ ম্যাচকে আনা হয়েছে ছুরিকাঁচির নিচে। বাফুফের মতে বড় বড় দলের সঙ্গেই অর্থের বিনিময়ে ম্যাচ পাতিয়েছে মতিঝিল পাড়ার দুইটি দল।
শনিবার রাতে এক ভিডিওবার্তায় বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ বলেন, ‘আরামবাগ ও ব্রাদার্স ইউনিয়নকে স্পট ফিক্সিং ও পাতানো খেলা সংক্রান্ত কিছু বিষয়ে আমরা ব্যাখ্যা চেয়েছি। এই বিষয়গুলো নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরেই কাজ করছি। আরামবাগ ও ব্রাদার্স ইউনিয়নের বিরুদ্ধে কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকায় তাদের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছি। পাতানো ম্যাচ নিয়ে তদন্ত কমিটি পাঁচটি ম্যাচ নিয়ে কাজ করছে।’
ম্যাচগুলো নিয়ে যে শুধু বাফুফেই সন্দেহ প্রকাশ করেছে তা কিন্তু নয়। বরং এ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (এএফসি)।
বলা বাহুল্য এই মৌসুমের আগে থেকেই মতিঝিলপাড়ার এই দুই দলের অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চালানোর পর থেকে আরামবাগের অবস্থা সূচনীয়। প্রায় সাড়ে চার বছর ক্যাসিনো নিয়ে টাকা উড়ানো আরামবাগের উপর যখন খড়্গ পরল, তখন তাদের ত্রাহি অবস্থা। এখনও সেই অবস্থা থেকে বের হতে পারেনি তারা। এই মৌসুমে লিগ না খেলার চিন্তাও করছিল তারা। কিন্তু শেষ মুহুর্তে অনেকের সহযোগিতায় মাঠে নামে তারা। খেলোয়াড়-কোচেদের আবাসন নিয়েও এখন পর্যন্ত চাপে আছে তারা।
খেলতে নেমেও খুব একটা ভালো কিছু করতে পারছে না তারা। চলতি প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে এখন পর্যন্ত ৯ ম্যাচে পয়েন্ট মাত্র ১, লিগ টেবিলে সবার তলানিতে খেলে তাদের অবস্থান। ৭ গোলের বিপরীতে হজম করেছে সর্বাধিক ৩২ গোল। ফেডারেশন কাপে ৪ গোল করে ৪ গোল হজম করেছিল তারা, কিন্তু মাঠ ছেড়েছিল অন্তত একটি জয় নিয়ে। প্রিমিয়ার লিগে এখনও তার দেখা পায়নি তারা। একমাত্র ড্র গতকাল উত্তর বারিধারা ক্লাবের সঙ্গে ৪-৪ গোলে।
অন্যদিকে গোপীবাগের কমলাজার্সিধারী ব্রাদার্স ইউনিয়ন আছে আরামবাগের সামান্য উপরে। তাদের প্রিমিয়ার লিগ শুরু নিয়েও কম জলঘোলা হয়নি। নতুন মৌসুমে খেলোয়াড় রেজিস্ট্রেশনের সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও হুঁশ হয়নি তাদের। ১৫ ডিসেম্বর শেষ তারিখ থাকলেও তারা সেই লিস্ট জমা দেয় ১৭ ডিসেম্বর, তাও অসম্পূর্ণ। সবকিছু পেরিয়ে মতিঝিলপাড়ার দুই দলকে খেলার সুযোগ দেয় বাফুফে।
তারাও লিগে আছে ৮ ম্যাচ খেলে ১ পয়েন্ট নিয়ে, আরামবাগের সামান্য উপরে। ৬ গোল দেওয়ার বিপরীতে হজম করেছে ১৬ গোল। একমাত্র ড্র উত্তর বারিধারা ক্লাবের বিপক্ষে ৩-৩ গোলে।
প্রিমিয়ার লিগের তলানিতে পরে থাকা দুই দলের বিপক্ষেই তাই উঠেছে ম্যাচ পাতানোর অভিযোগ।
যে পাঁচ ম্যাচ নিয়ে অভিযোগ
- আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ
১৭ জানুয়ারি: আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ বনাম মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব
ফলাফল: আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ ০-৩ মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব
৯ ফেব্রুয়ারি: শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র বনাম আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ
ফলাফল: শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র ৪-০ আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ
১৩ ফেব্রুয়ারি: আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ বনাম ঢাকা আবাহনী
ফলাফল: আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ ০-৪ ঢাকা আবাহনী
- ব্রাদার্স ইউনিয়ন
১৯ জানুয়ারি: ব্রাদার্স ইউনিয়ন বনাম ঢাকা আবাহনী
ফলাফল: ব্রাদার্স ইউনিয়ন ০-২ ঢাকা আবাহনী
২৩ জানুয়ারি: বসুন্ধরা কিংস বনাম ব্রাদার্স ইউনিয়ন
ফলাফল: বসুন্ধরা কিংস ০-১ ব্রাদার্স ইউনিয়ন