বিষাক্ত বিশের বছরে এক দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার কারণে সংবাদ শিরোনামে উঠে আসা পালঘর থেকে লোকাল ট্রেনে চেপে ছেলেটা মুম্বাইয়ে ক্রিকেট খেলতে আসতো। কিংবদন্তি শচীন রমেশ টেন্ডুলকর থেকে শুরু করে অজিঙ্কা রাহানের মতো এই ছেলেটার ক্রিকেট ক্যারিয়ারেও মুম্বাইয়ের লোকাল ট্রেনের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তিনি শার্দুল ঠাকুর, যিনি শচীনের ১০ নম্বর জার্সিটা শরীরে চাপিয়ে আলোচনার চেয়ে সমালোচনার জন্ম দিয়েছিলেন বেশি।
আর, মুম্বাইয়ের ক্রিকেটারদের বেড়ে ওঠার সময়ের এই লোকাল ট্রেনের জার্নির রুক্ষতা, কাঠিন্যই হয়তো মুম্বাইকরদের ক্রিকেটার সত্ত্বায় আবশ্যিকভাবে একটা ‘খাড়ুস’ মানসিকতা তৈরি করে দেয়। অর্থাৎ, যাই ঘটুক না কেন ‘কধিহি হার মানু নকা’ মানসিকতা।
এই হার না মানা মানসিকতা সমৃদ্ধ মুম্বাইয়ের বোলিং অলরাউন্ডারটি ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকে ফিরে বাড়ি ফেরার জন্য আন্ধেরি রেলওয়ে স্টেশন থেকে লোকাল ট্রেনে চাপলো। কিটব্যাগ কাঁধে কানে হেডফোন গোঁজা ছেলেটাকে দেখে ট্রেনের অন্যান্য যাত্রীরা মুখ চাওয়াচাওয়ি শুরু করলো।
কয়েকজন কলেজপড়ুয়া গুগল ঘাঁটাঘাঁটি করে যখন ভারতের জাতীয় দলের সদস্য ছেলেটাকে চিনতে পেরে সেলফি তোলার আবদার করলো তখন ছেলেটা পালঘরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বললো। অনেক নিত্যযাত্রী একজন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারকে সরাসরি বিদেশ সফর থেকে বিমানবন্দরে নেমে লোকাল ট্রেনে চেপে বাড়ি ফিরতে দেখে বিস্মিত হলেন।
সেদিনের সেই অত্যাশ্চর্য ঘটনাটা প্রমান করে যে ছেলেটার শিকড় এতটাই গভীরে যে খ্যাতির বিড়ম্বনায় তা টলতে পারে না। কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে তিনি রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে ২৯ বলে ৬৮ রানের অবিস্মরণীয় এক ইনিংস খেললেন ইডেন গার্ডেন্সে।
খেলোয়াড়ী জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইনিংসে সেই ‘খাড়ুস’ মানসিকতা ও পা মাটিতে রাখার তাগিদ প্রতিটা স্ট্রোকে প্রতিফলিত হয়েছে বারবার। শার্দুল ঠাকুরের বলা কথাগুলোও যেন আজ তার ব্যাটিংয়ে ফুটে উঠেছে – আমার পা মাটিতে আছে। আমি কেউ প্লেটে সাজিয়ে দেয়নি। আমাকে পরিশ্রম করে অর্জন করতে হয়েছে।’