দ্য নেভার ফিনিশড গেম

হারিস রউফের শেষ দুই বলে দুই ছয়। বিরাট কোহলি তখনই ভারতকে মোমেন্টামটা এনে দিয়েছেন। তবুও তো শেষ ওভারে ১৬ টা রান করা চাই। মাঠে থাকা নব্বই হাজারের বেশি দর্শকও বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন এটা ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের উত্তাপ। উত্তাপটা ছুঁয়ে দিচ্ছিল মাঠে থাকা ক্রিকেটার, আম্পায়ারদেরও।

পাকিস্তানের দেয়া ১৬০ রানের লক্ষ্য তাড়া করে ভারত ম্যাচ জিতেছে। অথচ এর গভীরতা, বিশালতা যে কত তা কী স্কোরবোর্ড প্রমাণ করতে পারে। বাইশ গজে ক্রিকেটারদের মধ্যে যে উত্তেজনা ছড়িয়েছে সেটাই বা বলবে কে।

লোকে বলাবলি করে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের সেই উত্তাপ এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না। সেই লোকটা আজ মুখ দেখাতে পারবেন তো? ভারত-পাকিস্তান মাঠে নামলে একটা গোটা দুনিয়া থমকে যায় এই কথাটা আজ কেউ অস্বীকার করবেন? ম্যাচের শেষ বল অবধি যে হৃদস্পনটা টের পাওয়া গেল সেটা ক্রিকেট দুনিয়া অস্বীকার করবে কোন সাহসে।

শেষ ওভারেই যত ঘটনা, যত উত্তেজনা সেটাও তো একটা মহাকাব্যের মতই। মোহাম্মদ নওয়াজের শেষ ওভারটার জন্যই অপেক্ষা করছিলেন বিরাট কোহলি ও হার্দিক পান্ডিয়া। তবে শেষ ওভারের চাপটা আজ আর সামলাতে পারলেন না পান্ডেয়া। নাওয়াজের ওভারের প্রথম বলেই ক্যাচ আউট হয়েছেন।

পাঁচ বলে ভারতের তখন প্রয়োজন ১৬ রান। স্ট্রাইক প্রান্তে থাকবেন নয়া ব্যাটসম্যান দীনেশ কার্তিক। ফুলটস বলটাকে পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারলেন না কার্তিক। একটা সিঙ্গেল নিয়ে কোহলিকে স্ট্রাইক দিলেন।

কোহলি তখন তাঁর টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংসটায় শেষ ছোঁয়া দেবেন। অনেকটা ওয়াইড ইয়োর্কার বলটাতেও দুই রান তুলে নিলেন। তিন বলে ভারতের প্রয়োজন তেরো রান। সহজ কাজ নয়। তবুও কোহলির চোখে মুখে আজ অন্য রকম এক আত্মবিশ্বাস। আজ রাতে শুধু তিনিই নায়ক।

কোহলির চোখের ভাষাটা পড়তে পেরেছিলেন ডাগ আউটে থাকা রোহিত শর্মারাও। তারাও যেন বিশ্বাস করছিলেন, ম্যাচটা ভারতই জিততে চলেছে। ভারত শিবিরের সেই বিশ্বাস ভয় ধরিয়েছিল নাওয়াজের মনে। বেশ বড় এক ফুলটস ছুঁড়ে দিলেন। কোহলি সেটাকে সীমানার ওপাড়ে আঁচরে ফেললেন।

তবে বলটা মেরেই কোহলির দাবি এটা নো বল। বল বাউন্ডারি ছাড়া হল কিনা সেদিকে খেয়াল নেই একটুকুও। কোহলি ছুটে গেলেন আম্পায়ারের কাছে। আম্পায়ারও একটু সময় নিয়ে এক হাত প্রসারিত করলেন। জানিয়ে দিলেন এটা নো বল।

ব্যাস! এখানেই উত্তেজনাটা দ্বিগুন হল। ভারত উদযাপন করলেও আম্পায়ের এমন সিদ্ধান্ত মানতে পারছে না পাকিস্তান দল। তাঁরা মাঠেই একটা প্রতিবাদ জানালো। ওদিকে মাঠে থাকা নব্বই হাজার দর্শক বারবার গর্জে উঠছে।

তখনও তিন বলে ভারতের প্রয়োজন ছয় রান। ফ্রি হিট বলে কোহলিকে বোল্ড করে বসলেন নাওয়াজ। তবে স্ট্যাম্পে আঘাত করা বলটা ছুটছে সীমানার দিকে। কোহলি আর দীনেশ কার্তিকও তিন রান নিয়ে নিলেন চোখের পলকে।

এতেও ঘোর আপত্তি পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের। তাঁদের দাবি স্ট্যাম্পে আঘাত করার পরই বল ডেথ হয়ে যাবার কথা। ফলে দৌড়ে তিন রান নেয়া সম্ভব না। তবে আম্পায়ার বুঝিয়ে দিলেন ফ্রি হিটে বোল্ড হলেও বল ডেথ হবে না। এই নিয়ে চললো তর্ক-বিতর্ক।

ওদিকে ভারতের দুই বলে প্রয়োজন দুই রান। কার্তিক সহজ কাজটা কঠিন ভাবে করতে চাইলেন। বাইরে এসে পড়লেন অনেকটা। রিজওয়ানও স্ট্যাম্পিং এর সুযোগ হাতছাড়া করলেন না। নতুন ব্যাটার আশ্বিনকে খেলতে হবে শেষ বলটা। জিততে হলে নিতে হবে দুই রান।

কাজটা আরেকটু সহজ করে দিলেন মোহাম্মদ নাওয়াজই। ওয়াইড বল দিয়ে এবার সমীকরণটা এক বলে এক। শেষ বলটায় খুব আলতো করে বলটা উঠিয়ে দিয়ে এক রানের জন্য দৌড় অশ্বিনের। অন্য প্রান্তে থাকা কোহলির দৌড় যেন অনন্ত পানে।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link