ভোর হল, দোর খোল

অন্ধকার কাটিয়ে আলো ফুটেনি তখনও, পুরো দেশের অধিকাংশই হয়তো তখনও ঘুমিয়ে। কিন্তু, সাত সাগর তের নদীর ওপারে ঠিকই বাংলাদেশ ক্রিকেটের নতুন সূর্যোদয় হল। যারা জেগে ছিলেন, তাঁরা নতুন ইতিহাসের সঙ্গী হলেন – ঘুম ঘুম চোখেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের নতুন এক অভ্যূদয় দেখলেন। আমরা নতুন এক সূর্য্যের আলোয় স্নাত হলাম। কী ভিষণ অনবদ্য সেই আলো!

মাউন্ট মঙ্গানুই ভেন্যুতে লেখা হয়ে গেল বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসের পাতায়, কিংবা কে জানে – হয়তো টেস্টের ইতিহাসেও ম্যাচটার কথা ভবিষ্যতে স্মরণ  করা হবে হাজার হাজার বার। এত কাব্যের মোদ্দা কথা হল – বাংলাদেশ জিতে গেছে। হারিয়ে দিয়েছে নিউজিল্যান্ডকে, হ্যাঁ, টেস্টের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দল নিউজিল্যান্ডকে। নিজেদের পরিচিত ময়দানে নয়, নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে। শীতে কাঁপতে কাঁপতে কখনো চোখ ভিজে যাচ্ছে খানিক – তারপরও নিজের চোখকেই যেন বিশ্বাস হচ্ছে না।

পঞ্চম দিনের সকালের আগে বাংলাদেশের জয়ের চেয়ে যেন রস টেলর কতদূর ম্যাচটা টেনে নিয়ে যেতে পারেন – সে নিয়েই বেশি আলোচনা হচ্ছিল। কিন্তু – সেই আলোচনায় পানি ঢেলে দিতে উন্মুখ হয়েই ছিলেন বাংলাদেশের দুই পেসার – এবাদত হোসেন ও তাসকিন আহমেদ। তাঁরা দু’বার করে আঘাত হানেন প্রতিপক্ষের বুকে।

পাঁচ উইকেটে ১৪৭ রানে দিন শুরু করেছিল নিউজিল্যান্ড দল। এর সাথে আর মাত্র ২২ রান যোগ করতে না করতেই তাসের ঘরের মত ভেঙে যায় সাদা পোশাকের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের ব্যাটিং লাইন আপ। রস টেলরই প্রথম ফেরেন।

সকালের মাত্র দ্বিতীয় ওভারেই তাঁকে বোল্ড করেন ফাস্ট বোলার এবাদত। পেয়ে যান টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম পাঁচ উইকেটের দেখা। এর একটা ওভার বাদেই সাজঘরে ফেরেন রাচিন রবীন্দ্র। এবার হন্তারক তাসকিন। রস টেলর ৪০ ও রাচিন ১৬ রান করেন। ম্যাচটা আসলে ওখানেই শেষ।

নিউজিল্যান্ডের লেজটা এরপর একসাথে কাটেন তাসকিন-এবাদত, যোগ মেহেদী হাসান মিরাজ। কাইল জেমিসন আর নিল ওয়াগনার রানের খাতাই খুলতে পারলেন না। ট্রেন্ট বোল্ট দুই চারের ঝড় তুলে আট রান করে থামলেন।

বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় মাত্র ৪০ রানের। ইতিহাস গড়তে দরকার ছিল মাত্র ৪০ রানের। স্রেফ নিয়মরক্ষার লড়াই। বাংলাদেশ খেললো। ১৭ তম ওভারে গিয়ে জয়ের দেখা মিলল। দুই উইকেট হারিয়ে ৪২ রান তুললো বাংলাদেশ। জিতল আট উইকেটের বড় ব্যবধানে। অথচ, এই সিরিজ শুরুর আগেই তো টেলিভিশন রাইটস কেনার জন্য নাকি আগ্রহী কোনো প্রতিষ্ঠানই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পারফরম্যান্স সব কিছুই বদলে দিতে পারে – হোক সেটা ভাল কিংবা মন্দ!

চার দিয়ে জয়ের দুয়ারে পৌঁছে মুশফিকুর রহিম ব্যাটটা ছুড়ে মারলেন আকাশে। মুষ্টিবদ্ধ হাতে বাতাসের বুকে ছুড়লেন, তাতে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের ক্রিকেট আকাশে যে হতাশার মেঘ জমেছিল – তার অনেকটাই কেটে গেল।

অপর দিকে, মুমিনুল হক সৌরভ বরাবরের মতই নীর্বিকার – যেন জাস্ট অ্যানাদার ডে ইন অফিস! হ্যাঁ, বাংলাদেশ ‘জাস্ট অ্যানাদার ডে ইন অফিস’-এর মতই শৃঙ্খলাবদ্ধ ক্রিকেট খেলেছে টেস্টের পাঁচটা দিন। তার ফলাফলটাই আজ চোখের সামনে।

ভোর হচ্ছে, আলো ফুটছে। নাঁ, নতুন এই দৃশ্য নতুন করে কোনো মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে না। একটু আগেই তো নতুন সূর্য্যের আভায় স্নাত হলাম।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link