যে জুটিতে ফিরল আত্মবিশ্বাস

যেখান থেকে শেষ করেছিলেন দু’জন – ঠিক সেখানেই শুরু হল। আগের দিন নাজমুল হোসেন শান্তর সাথে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ম্যাচটা সেখানেই শেষ হয় বাংলাদেশের জন্য। তবে, এবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে আর কোনো ভুল বোঝাবুঝি নয়। তাঁদের ব্যাটে হল নতুন দিনের সূচনা।

বাংলাদেশ নাকি ফজল হক ফারুকীকে খেলতেই পারবে না, মুজিবুর রহমান নাকি টপ অর্ডারকে দাঁড়াতেই দিবে না – এমন কত গুঞ্জন ম্যাচের আগে ভেসে বেড়িয়েছে। অথচ খেলা শুরু হতেই দেখা গিয়েছে আরেক দৃশ্য, কি সাবলীলভাবে ফারুকী, মুজিবদের সামলেছেন দুই ওপেনার নাইম শেখ আর মেহেদি মিরাজ।

কিন্তু পাওয়ার প্লের শেষ বলে মুজিবের বলে নাইম শেখ বোল্ড হওয়ার পরে দ্রুত বিদায় নেন তিন নম্বরে নামা তাওহীদ হৃদয়ও। ব্যাটারদের হঠাৎ ঝরে পড়ার পুরনো অভ্যাসের কথ ভেবে তখন শঙ্কিত হয়েছিল সমর্থকদের মন, কিন্তু ইনফর্ম শান্ত থাকতে ভাবনা কিসের। মেকশিফট ওপেনার মেহেদি মিরাজকে সঙ্গে নিয়েই অনন্য এক গল্প লিখলেন তিনি। এই দুজনের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ভর করেই আফগানিস্তানের বিপক্ষে পাহাড়সম পুঁজি পেয়েছে বাংলাদেশ।

নাজমুল শান্ত যখন ক্রিজে আসেন সামনে তখন পরপর দুই উইকেট হারানোর চাপ আর রশিদ, নবীদের ঘূর্ণি জাদুর ভয়। কিন্তু সেসবকে থোড়াই কেয়ার দুই বন্ধু শান্ত-মিরাজের; বয়স ভিত্তিক দল থেকে একসাথে জুটি বেধে খেলা এই দুই তারকা এবার জুটি বাঁধলেন দলকে বড় সংগ্রহের ভিত এনে দিতে।

১০.৩ বলে হৃদয় আউট হওয়ার পরে শান্ত, মিরাজের পথচলা শুরু হয়েছিল। ৪২.১ বলে মিরাজের চোটের কারণে জুটি ভাঙ্গলেও ততক্ষণে দুজন মিলে করে ফেলেছেন ১৯৪ রান। তৃতীয় উইকেটে এত বড় জুটি এর আগে মাত্র একবার দেখেছিল বাংলাদেশ; আফগানিস্তানের বিপক্ষে মুশফিক আর লিটন করেছিলেন ২০২ রান। সবমিলিয়ে শান্ত – মিরাজের জুটি অবশ্য টাইগারদের ইতিহাসে ষষ্ঠ সর্বোচ্চ।

আর এরই ফাঁকে নাজমুল শান্ত আর মেহেদি মিরাজ উভয়েই তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরি। ১০৫ বলে ১০৪ রানে শান্ত আউট হলেও মিরাজ অপরাজিত আছেন ১১২ রানে। এই নিয়ে পঞ্চমবারের মত একই ম্যাচে দুই সেঞ্চুরিয়ানের দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ।

ডু অর ডাই ম্যাচ, সাম্প্রতিক সময়ের ব্যাটিং দুর্দশা সব মেলালে শান্ত, মিরাজদের এমন পারফরম্যান্সের গুরুত্ব সংখ্যায় বোঝানো সম্ভব নয়। নিজেদের প্রিয় ওয়ানডে ফরম্যাটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অসহায় আত্মসমর্পণের পর আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার জন্য হলেও এমন দাপুটে কিছু করে দেখাতে হতো টাইগারদের – আর সেই কাজটাই করে দিয়েছেন ২০১৬ সালে ঘরের মাঠে যুব বিশ্বকাপ খেলা দুই তারকা।

৩৩৪ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করে আফগানিস্তান জিতবে কি না সেটি তো সময়ই বলে দিবে, তবে বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানদের আফগান জুজু কাটাতে নাজমুল, মেহেদিদের এসব ইনিংস নিশ্চিতভাবেই বড় ভূমিকা রাখবে। কি জানি, হয়তো এই দুজনের ব্যাটিং জাদুতে ফিরে পাওয়া আত্মবিশ্বাসে ভর করে অভাবনীয় কিছু করে বসবে টিম টাইগার্স।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link