মানুষ যত উপরেই উঠুক না কেন, সেরা আশ্রয়স্থল একজনই। যাকে সব বলা যায়, যার কাছে নিজেকে সমর্পণ করা যায়। প্রচণ্ড কষ্টের সময় যাকে পাশে চাই, যাকে ছাড়া ভিষণ আনন্দের মুহূর্তও ফিঁকে লাগতে বাধ্য।
কিন্তু, এর মধ্যে বাঁধার একটা দেয়াল তুলে দেয় বাস্তবতা, পেশাদার জীবন। এই জীবনে আপনি চাইলেই সব সময় প্রিয়জনকে পাশে পাবেন না। তবে, এখানে কিছুটা হলেও সৌভাগ্যবান বলতে হয় ক্রীড়াঙ্গণের দু’জন মানুষকে – ক্রিকেটের জাসপ্রিত বুমরাহ ও ফুটবলের ইকার ক্যাসিয়াস।
দু’জন দুটি ভিন্ন ঘরানার মানুষ। দু’টি আলাদা খেলায় তাঁরা বিশ্বসেরা। মিল হল, দু’জনই দেশের হয়ে জিতেছেন বিশ্বকাপের শিরোপা। বুক চিতিয়ে লড়াই করে দু’জনই অবদান রেখেছেন দলের বিশ্বজয়ের মিশনে।
২০১০ থেকে ২০১৪ – তারপরও ইকার ক্যাসিয়ার আর জাসপ্রিত বুমরাহ কার্যত একই মানুষ। খেলোয়াড়ী জীবনে তাঁরা যাই হন না কেন, দিনের আলো ফুরোলে তাঁরা নিজেদেরকে প্রিয়জনের কাছে সমর্পণ করতে জানেন। ভালবাসার উষ্ণতায় নিজেদের শান্তি খুঁজে নিতে জানেন।
পেশাদারিত্বের কারণেই দু’জন বিশ্বকাপের প্রায় পুরোটা সময় পাশে পেয়েছিলেন দু’জনের স্ত্রীকে। সারা কারবোনেরো ও সাঞ্জানা গানেশন -দু’জনই বিশ্বকাপে নিজেদের দায়িত্ব সামলেছেন মিডিয়াকর্মী হিসেবে।
সারাকে অবশ্য পুরো বিশ্বকাপ জুড়েই ম্যাচ চলাকালে স্বামীর খুব কাছে আসতে দেওয়া হত না। গোলপোস্টের পেছনে একবার দাঁড়িয়ে ক্যামেরায় হাজির হয়েছিলেন বলে সমালোচনাও হয়েছিল। বুমরাহ-সাঞ্জানার ক্ষেত্রে অবশ্য সেটা হয়নি। বুমরাহ নিজের মত খেলে গেছেন। মাঠের বাইরে বুম হাতে নিজের কাজ করেছেন সাঞ্জানা। বিশ্বজয়ের আনন্দটা তাঁরা নিজেদের সন্তানের সাথে মাঠেই ভাগাভাগি করে নেন।
বিশ্বকাপ শেষে ২০১০ সালে সারার সামনে নিজের অনুভূতি জানাতে এসেছিলেন। কথা শেষ হতে হতেই ক্যাসিয়াস সারার ঠোঁটে লেপ্টে দেন চুম্বন। যেন সমালোচকদের চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া, সারা তাঁর দুর্বলতা নয় বরং শক্তির জায়গা।
২০২৪ সালেও সেই একই দৃশ্য। বিশ্বকাপ হাতে সাঞ্জানার সামনে বুমরাহ। সামনে ব্রডকাস্টারের ক্যামেরা। বুমরাহ বিশ্বজয়ের স্বপ্নপূরণে কথা বলছেন। সামনে হাসছেন সাঞ্জানা। শেষটায় আর সামলাতে পারলেন না বুমরাহ। প্রাণপ্রিয় স্ত্রীকে আলিঙ্গন করলেন। ক্রিকেট মাঠে এমন ‘অফট্র্যাক’ হৃদয় কাঁপানো দৃশ্য রোজ রোজ দেখা যায় না।
ক্যাসিয়াস আর সারা নিজেদের এক সাথে পথচলাটা খুব বেশিদিন লম্বা করতে পারেননি। ওই যে বলে না – প্রেম ধীরে মুছে যায়। বুমরাহ-সাঞ্জানার প্রেমের রং আরও গাঢ়ো হোক, আপাতত এই প্রত্যাশা রেখেই ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের ‘ক্রিকেটিয়’ উৎসবে ফেরা যাক।