তুমি কেমন করে গান করো হে গুণি

সেঞ্চুরি করাটা কতটা সহজ? বিরাট কোহলির জন্য যেন বিষয়টা আসলেই অনেক সহজ ছিল। বিরাট কোহলি ব্যাট করতে নামবেন আর সেঞ্চুরি করবেন, এটাই যেন পরিণত হয়েছিল নিয়মে। কিন্তু সেই কোহলিই কিনা ভুলে গেছিলেন সেঞ্চুরি করতে! প্রায় তিন বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেঞ্চুরি বঞ্চিত ছিলেন কোহলি ; হুট করে এই কথাটা বিশ্বাস করতেও যেন কষ্ট হতো অনেকের। কিন্তু ওই যে, ফর্মটা তো টেম্পরারি আর ‘বিরাটের ক্লাস’ পারমানেন্ট।

রাজসিক ফরম্যাট টেস্ট ক্রিকেটে ২৭ নম্বর সেঞ্চুরিটা করেছিলেন ২০১৯ সালে নভেম্বরে বাংলাদেশের বিপক্ষে। সেই ম্যাচ ভারতীয় ক্রিকেটের জন্যও ছিল বিশেষ কিছু। প্রথমবারের মতো দিবা রাত্রির টেস্ট খেলতে নেমেছিল ভারত। এরপর পেরিয়ে গিয়েছিল ১২০৫ দিন।

প্রায় চার বছর ধরে লাল বলের ক্রিকেটে সেঞ্চুরি পাননি বিরাট। ইডেন গার্ডেনে দিবা রাত্রির সেই টেস্টের পর প্রায় তিন বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও সেঞ্চুরির দেখা পাচ্ছিলেন না ‘কিং কোহলি’। কিন্তু ২০২২ এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ফিরলেন সেঞ্চুরিতে। এরপর বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতেও পেলেন সেঞ্চুরি।

বাকি ছিল শুধু টেস্ট ক্রিকেট। সেটাও যে শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার ছিল। অবশেষে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির শেষ ম্যাচে এসে টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৮ তম আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৭৫ তম সেঞ্চুরিটা করেই ফেললেন ভারতের এই রান মেশিন।

একটা সময় মনে হচ্ছিল শচীন টেন্ডুলকারের ১০০ সেঞ্চুরির রেকর্ড ভাঙাটা বিরাট কোহলির জন্য সময়ের ব্যাপার। কিন্তু প্রায় তিন বছরের সেঞ্চুরি খরায় সেই দৌড় থেকে খানিকটা পিছিয়েই পড়েছেন কোহলি। তবে বয়সটা যখন ৩৪ তখন সেরা ফর্মের কোহলি ফিরে এলে সেই রেকর্ড ভাঙাটা খুব একটা বিস্ময়ের হবে না।

সিরিজের প্রথম তিন টেস্টে রান পাননি। স্পিন সহায়ক পিচে মোটা দাগে ব্যর্থ ছিল ভারতের পুরো ব্যাটিং লাইন আপই। এমন কি কোহলিদের স্পিন খেলার সামর্থ্য নিয়েও উঠেছিল প্রশ্ন। সেই সব প্রশ্নের জবাব যেন কোহলি দিলেন তাঁর এই ইনিংসে। অজি অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে ১৮৬ রানের মহাকাব্যিক এক ইনিংস খেলেন কোহলি।

আগের টেস্টে অস্ট্রেলিয়াকে জয় এনে দেয়া স্পিনাররা পুরোপুরি ব্যর্থ আহমেদাবাদের মাটিতে। দুই ফ্রন্ট লাইন স্পিনার নাথান লিঁও আর টড মারফি মিলে ১১০ ওভার বল করে শিকার করেছে মোটে ছয় উইকেট। অজি বোলোরদের শাসন করে ২৪১ বলে নিজের সেঞ্চুরি পূরণ করেন কোহলি। প্রায় ৫১৬ মিনিট উইকেটে থেকেও খুব কমই ভুল শট খেলেছেন কোহলি। কোহলির ক্যারিয়ারের সবচেয়ে ধীরগতির সেঞ্চুরির তালিকাও দ্বিতীয় অবস্থানে থাকবে এই সেঞ্চুরি।

টড মারফির বলে আউট হবার আগে ৩৬৪ বলে ১৫ বাউন্ডারিতে ১৮৬ রানে সাজঘরে ফেরেন কোহলি। কোহলির সেঞ্চুরি আর অক্ষর প্যাটেলের ফিফটিতে দিন শেষে শক্ত অবস্থানে নিয়ে যায় ভারতকে। মাঝে উইকেট রক্ষক কেএস ভারতের ক্যামিও দারুণ সাহায্য করে ভারতকে।

শুধু সেঞ্চুরি খরা নয়, একটা সময় যেন রান করতেই ভুলে গেছিলেন কোহলি। কিন্তু সেই সময় এখন অতীত। বাইশ গজে আবারো রং ছড়াচ্ছেন নিয়মিত। ৩৪ বছর বয়সেও কিভাবে নিজেকে ভেঙে চুড়ে আবারো নতুন ভাবে গড়া যায় তাই যেন দেখাচ্ছেন নতুন প্রজন্মকে। কোহলি এমন ফর্মে থাকলে শচীনের ‘সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি’র রেকর্ডকেও ছুঁয়ে ফেলবেন সেটা বলে দেয়াই যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link