স্পিনারদের আখড়া বনে গেছে পেসারদের চারণভূমি

বাংলাদেশি বা-হাতি স্পিনারদের একটা লিগ্যাসি চলেছে বহুকাল। মোহাম্মদ রফিকের পর আবদুর রাজ্জাক এরপর সাকিব আল হাসান সামলেছেন সেই দায়িত্ব। মাঝে সোহাগ গাজীসহ বহু স্পিনারই তো বাংলাদেশকে দিয়ে গেছেন সার্ভিস। একটা সময় এই স্পিনারদের উপর ভর করেই নিজেদের রণকৌশল সাজাতো বাংলাদেশ। সেই দিন যেন বদলেছে এখন।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের পেসারদের উত্থান বেশ ঈর্ষণীয়। যদিও তর্কের খাতিরে প্রশ্ন তোলাই যায় যে বাংলাদেশের পেস ইউনিটের সফলতা কি? সফলতা এখনই এসে ধরা দেয়নি। তবে ভবিষতে ধরা দেওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত প্রবল। কেননা একটা ধারার শুরু তো হয়েছে। যেমনটা ছিল স্পিনারদের ক্ষেত্রে।

এই যাত্রার শুরুটা অবশ্য বেশিদিন আগেও যে হয়েছে তা নয়। স্বল্প সময়ে সাফল্য পাওয়ার আশা করাও যে একেবারে জেগে জেগে স্বপ্ন দেখার শামিল। চান্ডিকা হাতুরুসিংহের প্রথম আমলেই আসলে পেসারদের এই উত্থানের শুরু। তিনিই স্পিন নির্ভরতা থেকে বেড়িয়ে আসার সেই স্ফুলিঙ্গ জ্বালিয়েছিলেন।

চান্ডিকা হাতুরুসিংহকে বেশ গালমন্দ করা হয়। বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেক্ষাপটে তিনি রীতিমত খলনায়ক। তবে তিনি অন্তত আধুনিক ক্রিকেটে লড়াই করবার জন্যে প্রস্তুতি পর্বের সূচনাটা করছেন বটে। তিনি যখন প্রথম কোচ হয়ে এলেন, তখন তার প্যানেলে যুক্ত হলেন হিথ স্ট্রিক।

তিনি এসে মাশরাফি বিন মর্তুজাকে ফুরিয়ে যাওয়ার আগের সময়টুকুতে পেলেন। তাছাড়া রুবেল হোসেন, আল আমিন হোসেন, তাসকিন আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমান- এই পেসারদের ক্যারিয়ারটা তখন উর্ধ্ব গগনে উঠতে কেবলই শুরু করেছে। ঠিক সে সময় থেকে পেসারদের একটা লিগ্যাসি তৈরি হতে শুরু করে।

যদিও সেটা একটা পর্যায়ে এসে থমকে যায়। মাশরাফি, রুবেল, আল আমিনরা ক্রমশ হারিয়ে যাওয়ার একটা মিছিলে যুক্ত হতে শুরু করেন। অন্যদিকে উঠতি তরুণ তাসকিন আহমেদ নানা রকম ইনজুরিতে জর্জরিত, হুমকির মুখে পড়ে যায় ক্যারিয়ার। মুস্তাফিজ অবশ্য তখনও দুর্বোধ্য।

এরপর ওটিস গিবসনের সময় থেকে আবার সেই খারাপ সময়টা কাটিয়ে উঠতে শুরু করে বাংলাদেশ। তাছাড়া দলের পেস আক্রমণ সমৃদ্ধ করতে পেসার হান্টের মত প্রোগ্রামও দারুণ ফলপ্রসূ হয়। তেমনই এক পেসার অন্বেষণ থেকেই তো উঠে এসেছেন এবাদত হোসেন। যার হাত ধরে এসেছিল সেই মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট জয়।

ওই যে চান্ডিকা হাতুরুসিংহে একটা নতুনের শুরু করে দিয়ে গেলেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও তখন উপলব্ধি করতে লাগল যে পেসারদের উন্নয়ন ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তাইতো ভেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের দিকেও নজর দেয় ক্রিকেট বোর্ড। হাই পারফরমেন্স প্রোগ্রামের সাথে যুক্ত করা হয় লংকান চাম্পাকা রামানায়েকের মত চরিত্রকে।

এরপরই যে পেসারদের সুদিনের যাত্রা হয়েছে মজবুত। পাইপলাইনে পেসারদের যথেষ্ট জোগান রয়েছে বললেও ভুল বলা হবে না। এমনকি চাইলেই লাল ও সাদা বলের জন্যে আলাদা পেসারদের সেট তৈরি করা সম্ভব। তাতে করে ওয়ার্কলোডের যে বিষয়টি রয়েছে তা হয়ে উঠবে না দুশ্চিন্তার।

আরও একটি বিষয় ঘটেছে বিগত কয়েক বছরে। বাংলাদেশের কোন পেসার ১৪০ কিলো/ঘন্টা গতিতে বল ছুড়বে সেটা যেন ছিল কল্পনাতীত। তবে এখন সেটা বাস্তব। বেশ ঝকঝকে এক বাস্তবতা এখন তা। তাছাড়া শুধু যে গতিই বেড়েছে বিষয়টি তেমন নয়।

পেসারদের স্কিলও আগের থেকে বেশি শাণিত হয়েছে। সেজন্যে সাদা বিদ্যুৎ-খ্যাত অ্যালেন ডোনাল্ড একটা ধন্যবাদ অবশ্যই প্রাপ্য। এখন স্পিনারদের সাথে পাল্লা দিয়েই পেসাররা প্রতিপক্ষের উইকেট শিকার করে যাচ্ছেন। নতুনরাও প্রতিনিয়ত অপেক্ষা করছে নিজেদের একটুখানি সুযোগের আশায়। আর সেই সুযোগে প্রতিযোগিতা আরও বেশ বাড়িয়ে তুলতেও প্রত্যেকে মুখিয়ে থাকেন। এভাবেই একদিন হয়ত বড় কোন সফলতাও এসে দেবে ধরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link