প্রতিভা প্রকাশের অদম্য সাহস

মাত্র ১৯ বছর বয়সেই দেশের জন্য প্রথম বিশ্বকাপটা এনে দিলেন। অথচ তাঁর তিন বছর আগেও ছুঁয়ে দেখেননি ওই চামড়ায় মোড়ানো ক্রিকেট বলটা। অথচ আজ তাঁর নিখুঁত বোলিং আশা দেখাচ্ছে দেশের ক্রিকেটকে। আমরা স্বপ্ন দেখছি, শরিফুল ইসলাম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হয়ে উঠবেন বিশ্বসেরাদের একজন।

প্রতিভা, পরিশ্রম ও অনুরাগ- এই তিনটা একসাথে হলে বিশ্ব জয় করা যায়। সেটাই করলেন তিনি। পাথর বাঁধা পেড়িয়ে মাত্র ১৯ বছর বয়সেই দেশের জন্য প্রথম বিশ্বকাপটা এনে দিলেন। অথচ তাঁর তিন বছর আগেও ছুঁয়ে দেখেননি ওই চামড়ায় মোড়ানো ক্রিকেট বলটা। অথচ আজ তাঁর নিখুঁত বোলিং আশা দেখাচ্ছে দেশের ক্রিকেটকে। আমরা স্বপ্ন দেখছি, শরিফুল ইসলাম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হয়ে উঠবেন বিশ্বসেরাদের একজন।

গতবছর বাংলাদেশকে প্রথম বিশ্বকাপটা এনে দিল অনুর্ধব-১৯ দল। সেই দলের পেস বোলিং ইউনিটের কান্ডারি ছিলেন শরিফুল ইসলাম। বিশ্বকাপ জয় করে ফিরে আসার পর থেকেই আলোচনায় এই পেসার। ওই দলটি থেকে সবার আগে তিনিই ডাক পেলেন জাতীয় দলে। ইতিমধ্যেই তিন ফরম্যাটে অভিষিক্ত হয়েছেন বাংলাদেশের হয়ে। সবমিলিয়ে পেস ক্ষরার দেশে শরিফুল যেন এক চিলতে বৃষ্টি।

শুরুর পথটা নিশ্চই সহজ ছিল না এই পেসারের। উত্তরবঙ্গের কোনো গ্রামে একটি পরিবারের আর্থিক অবস্থা যেমন হয় শরিফুলদের অবস্থাও তাঁর চেয়ে ভালো কিছু ছিল না। ফলে ক্রিকেট খেলাটা বিলাসিতা বৈকি। তবে শুরুতে ওই প্রতিভা আর অনুরাগের কথা বলেছিলাম। এই দুটোর সাথে পরবর্তীকালে পরিশ্রমও যোগ করেছিলেন এই কিশোর।

শরিফুলের সবচেয়ে বড় গুন তাঁর নিখুঁত লাইন লেন্থ। মনোযোগ ধরে রেখে টানা এক জায়গায় বল করে যেতে পারেন এই পেসার। এর শুরুটা বোধহয় হয়েছিল জীবনের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে গিয়েই। ছোটবেলায় বরশি নিয়ে পুকুরে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতেন একটা মাছের আশায়। সেই সময়েই হয়তো তৈরি হয়েছিল শরিফুলের এই ধৈর্য্য ও মনোযোগ।

তবে ক্রিকেট খেলার প্রতি ভালবাসাটা ছিল অনেক আগে থেকেই। যখনো সুযোগ পেতেন বন্ধুদের সাথে নেমে যেতেন মাঠে। তবে সত্যিকারের ক্রিকেট বলে তখনো খেলেননি এই পেসার। এরমধ্যেই ২০১৫ সালে নতুন এক বাঁহাতি পেসার এলো দেশের ক্রিকেটে। এসেই গুঁড়িয়ে দিলেন ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপ। মুস্তাফিজের এই বোলিং দেখেছিলেন বাজারের টিভিতে। সেই সময়ই লেখা হয়ে যায় বাংলাদেশের ক্রিকেটে আসতে চলেছে আরেক বাঁহাতি গতি তারকা।

এরপর থেকেই শরিফুল শুধু একটা সুযোগ খুঁজতে থাকেন। সুযোগটা আসে ২০১৬ সালে এক ক্রিকেট কর্মশালায়। সেখানে বোলিং করেই রীতিমত ঝড় তুলেন তিনি। সেদিন তাঁর বোলিং দেখেছিল বাংলাদেশের সাবেক উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান ধীমান ঘোষ। এছড়াও ছিলেন রাজশাহীর কোচ আলমগীর কবির ও হান্নান সরকার। তিনজনই অবাক চোখে তাকিয়ে দেখেছিলেন নতুন এক তারকার আগমন। পরে কোচ আলমগীর কবির তাঁকে ক্রিকেট খেলার জন্য রাজশাহী চলে আসতে বলেন।

রাজশাহীতেই মূলত শুরু হয় শরিফুলের ক্রিকেট যাত্রা। সেখানে কোচের সাথে করতেন আলাদা অনুশীলন। আলমগীর কবিরই তাঁর অনুশীলনের সব ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন রাজশাহীতে। এবার সেই প্রতিভা ও অনুরাগের সাথে যুক্ত হল শরিফুলের পরিশ্রম। অনুশীলন করতে থাকেন ওই দূরের আকাশটা ছোঁবেন বলে। প্রতিটা বলে যেন জানান দেন তিনি আর কঠিন দিনগুলোয় ফিরে যেতে চাননা। এবার শুধুই সামনে এগিয়ে চলা।

সাফল্যও আসতে শুরু করে শরিফুলের জীবনে। ২০১৮ সালেই প্রাইম ব্যাংকের হয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে খেলার সুযোগ পান। প্রথম সুযোগেই বাজিমাত। ৮ ম্যাচে ১৭ উইকেট নিয়ে আসরের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারিও হন। ফলে পরের বছর বিপিএলে খুলনা টাইটান লুফে নেয় এই পেসারকে। এরপরই ডাক পান অনুর্ধব-১৯ দলের হয়ে খেলার জন্য। এই অনুর্ধব-১৯ দলের হয়েই পুরো বিশ্বকে জানানা দেন যে তিনি আসছেন। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ জয়ে পালন করেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

ছয় ফুট তিন ইঞ্চির এই বোলার তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের যাত্রাও শুরু করেছেন। তাঁর নিখুঁত লাইন-লেন্থ ও বাউন্সে মাথা নুয়িয়ে রাখুক গোটা ক্রিকেট বিশ্ব। শরিফুল প্রমাণ করুক হারিয়ে যাবার জন্য তিনি আসেননি। তাঁর অনুপ্রেরণা মুস্তাফিজের সাথে মিলে বাংলাদেশক জাতীয় দলকেও আরেকবার বিশ্বজয় করে এনে দিক। শরিফুলের কাছে চাওয়া আরো অনেক কিছু। একজন শরিফুল তো আর আমাদের ক্রিকেটে প্রতিদিন আসেন না। চাওয়া পাওয়া হিসাব আজ এ পর্যন্তই তোলা থাক।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...