কানাডার ‘বাঙালি’ নারাইন

নিখিল দত্ত – পুরোদস্তর বাঙালি নাম। যদিও, এই নামটা খুব বেশি ক্রিকেটপ্রেমীর কাছে পরিচিত বলে মনে হয় না। ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির সহযোগী দেশগুলোর ক্রিকেটের হাঁড়ির খবর রাখলে এই বাঙালি ছেলের নামটা একটু চেনা চেনা ঠেকতেও পারে।

কুয়েতে জন্ম নেওয়া এই বাঙালি অফব্রেক বোলার নিখিল দত্ত কানাডার বোলিংয়ের এক বড় ভরসা। তাঁর বাবা মিহির দত্ত খোদ কলকাতারই মানুষ ছিলেন, পরে কলকাতার বেলেঘাটা থেকে কর্মসূত্রে কুয়েতে পাড়ি দেন।

ক্রিকেটে নিখিলের যোগাযোগ অবশ্য আগে থেকেই ছিল। কারণ, তাঁর বাবাও এক কালে কলকাতায় স্থানীয় লিগে খেলেছেন। তবে, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাজের সুবাদে তিনি ১৯৮৯ সালে মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি জমান। পরবর্তী কালে কানাডায় পাকাপাকি ভাবে বাস শুরু করেন মিহিরবাবু ও তাঁর পরিবার।

নয় বছর বয়সী নিখিল চোখে বিস্ময় নিয়ে ২০০৩ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট দেখেন। কানাডার টরেন্টোতে ওন্টারিও ক্রিকেট একাডেমিতে ক্রিকেটে হাতেখড়ি নিখিলের, সেখানে কোচ ডেরেক পেরেরার তত্ত্বাবধানে বেড়ে উঠেছেন তিনি। ভারত বা বাংলাদেশের বাইরে তিনিই প্রথম বাঙালি যিনি অফিসিয়াল আন্তর্জাতিক ম্যাচে অংশগ্রহণ করেছেন। সুনীল নারাইনের মতো অ্যাকশনে বল করা নিখিল ক্যারম বল, দুসরা প্রভৃতিতেও সমান পারদর্শী।

কানাডার ক্রিকেট সার্কিটে তিনিও সুনীল নারাইনের মতোই ‘রহস্য স্পিনার’ হিসাবে খ্যাত। ইনিংসের মাঝ ওভারে রান আটকানো ও উইকেট তোলা দুই কাজেই সিদ্ধহস্ত নিখিল। ক্রিকেট বিষয়ক গণমাধ্যম ইএসপিএন ক্রিকইনফোকে তিনি বলেন, ‘আমি সুনীল নারাইনের বোলিং খুবই পছন্দ করি। তাঁর হাতে অনেকরকম বৈচিত্র। যিনি টি-টোয়েন্টিতে চার ওভারে মাত্র ২০ রান দেন – তিনি অবশ্যই গ্রেট বোলারের স্বীকৃতি পাবেন। এটা করা খুব কঠিন, তবে তিনি ধারাবাহিক ভাবে এটা করতে পারছেন।’

নারাইনকে অনুসরণ করেন নিখিল। বললেন, ‘সিপিএলে তাঁর (নারাইন) সাথে আমার দেখা হয়েছে। তিনি মানুষ হিসেবে চমৎকার ও বিনয়ী। আমি টিভিতে ওর বোলিং দেখে অ্যাকশনের প্রতি অনুপ্রাণিত হই। লোকে বলে, একজন খেলোয়াড়ের ভাল দিকগুলো অনুসরণ করা দরকার। তাই, আমি নিয়মিত ইউটিউবে তাঁর ভিডিও দেখি। তাতে আমার উপকার হয়।’

ক্রিস গেইলের সাথে, বরিশাল বুলসের অনুশীলনে

বিশ্বজুড়ে ফ্রাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগেও পরিচিত নাম নিখিল কানাডার হয়েও ফুল ফোটাচ্ছেন নিয়মিতই। কানাডার গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি লিগের পাশাপাশি ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (সিপিএল) ও বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগেও (বিপিএল) খেলেছেন নিখিল।

সিপিএলে সেন্ট কিটসের হয়ে তাঁর প্রথম উইকেটটিই ছিল কেভিন পিটারসেনের। একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২০১৩ সালে কেনিয়ার বিরুদ্ধে অভিষেক হলেও কানাডার ওয়ানডে স্ট্যাটাস না থাকায় সেটিই এখন অবধি তাঁর একমাত্র ম্যাচ হয়ে যায়।

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যদিও তিনি কানাডা দলের নিয়মিত মুখ। কানাডার হয়ে ৩৬ লিস্ট এ ম্যাচে ৪৫ উইকেট ও ১১ টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১১ টি উইকেট নেওয়া নিখিল দত্ত ভবিষ্যত কানাডা ক্রিকেটের স্পিন বোলিংয়ের দুর্দশা ঘুচিয়ে এক বড় তারকা হওয়ার অপেক্ষায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link