২০১৪ এশিয়া কাপে শাপুর জাদরানের লম্বা চুল ঝাঁকিয়ে দৌড়ে আসার দৃশ্য এখনো চোখে ভাসে। তখনও আফগানিস্তান ছিল ‘অঘটন’ ঘটানোর দল, কিন্তু এখনকার বাস্তবতা ভিন্ন? এখন তারা এশিয়ার দ্বিতীয় শক্তিশালী সাদা বলের দল, পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কার মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের ছাপিয়ে।
আফগানিস্তানের ক্রিকেট উঠে এসেছে ভিন্ন বাস্তবতার ভেতর দিয়ে। বড় দলগুলোর ক্রিকেটাররা জানে, একজন ব্যর্থ হলেও অন্যজন সুযোগ সামলাবে। কিন্তু অ্যাসোসিয়েট ক্রিকেটে এমন সুযোগ নেই। একজন ব্যর্থ হলে দলটাই শেষ। এমন প্রতিযোগিতার মধ্যে বেড়ে ওঠার কারণে আফগান ক্রিকেটারদের মানসিক দৃঢ়তা অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি।
মোহাম্মদ শাহজাদকে মনে আছে? ম্যাচের মধ্যে পেস্ট্রি আনিয়ে খেতেন, তারপর ছয় মারতেন! কিন্তু ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ওভারথিঙ্কিং করতেন না। রহমানুল্লাহ গুরবাজসহ আফগান ব্যাটাররা এই সহজাত প্রবৃত্তির ওপরই নির্ভর করেন — শরীরের প্রতিক্রিয়া অনুযায়ী খেলা। মাথাও চলবে, সাথে বেশ সায় দেবে মন। শাহজাদ থেকে গুরবাজ – পরিবর্তনটা স্পষ্ট।
এখন আফগান ক্রিকেটের আরেকটি বড় শক্তি হলো তাদের খেলোয়াড়দের বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া। পরিবর্তনে সহায়ক হয়েছে এই ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটগুলো। ১৭ বছর বয়সেই রশিদ খান আইপিএলে খেলতে যান, মুজিবুর রহমানও। বাংলাদেশের মতো ‘নিজের সিস্টেমের ওপর নির্ভরশীল’ না থেকে তারা বিভিন্ন কন্ডিশনে, ভিন্ন কোচদের কাছ থেকে শেখে। একই সঙ্গে বিদেশের লিগে চাপ সামলে ম্যাচ উইনার হওয়ার অভিজ্ঞতা পায়।
নিজেদের সিস্টেম তাঁরা নিজেরাই বানিয়ে ফেলেছেন। ওটাই আফগানিস্তানের নিজস্ব সিস্টেম। শুধু প্রতিভা নয়, পরিশ্রমও এই দলের মূলমন্ত্র। রশিদ খান বিরাট কোহলির মতো ফিটনেস রুটিন অনুসরণ করেন। আইপিএলের ব্যস্ত সময়ে গুরবাজরা রোজা রেখে খেলেন, কিন্তু একদিনও ট্রেনিং মিস করেন না।
কারণ কি? জীবনের কঠিন বাস্তবতা তারা শুরুতেই দেখে ফেলেছে। ওই বাস্তবতাটা ছিল বলেই তাঁকে হেসে উড়িয়ে দিয়ে রিপন ভিডিওর মত আফগানরা বলে দিতে পারে, ‘এটাই বাস্তব! আই লাভ ইউ!’
তবে, আফগান ক্রিকেটেও সমস্যা কম নয়। পরিবারতন্ত্র আর লবির রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরেই চলেছে। রশিদ-আসগর আফগান-করিম জানাতদের ক্ষমতার বলয় অনেক সময় খারাপ সিদ্ধান্ত এনেছে। কিন্তু তরুণ ব্রিগেড যে গতিতে উঠে আসছে, তাতে এসবের দিন শেষ হওয়া শুধু সময়ের ব্যাপার।
আফগানিস্তানের বড় শক্তি হলো পরিকল্পনা। ইংল্যান্ড ভুল সিদ্ধান্তের জন্য নিজেদের বিপর্যস্ত করছে, আর ইংরেজ কোচ জোনাথন ট্রট আফগানদের শেখাচ্ছেন কীভাবে ম্যাচ শেষ করতে হয়। আফগান ক্রিকেট বোর্ডও কখনো বলেনি, ‘আমাদের আইপিএল থেকে শেখার কিছু নেই।’ পাকিস্তান, বাংলাদেশ কি আফগানদের এই উত্থান টের পাচ্ছে না?