তিন অধিনায়ক, আট ভাই!

ক্রিকেট খেলায় চার ম্যাচে তিন অধিনায়কের কথা শুনেছেন কখনও? তাহলে শুনুন। ১৯৮৮ এশিয়া কাপে আসরের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কার বেলায় ঘটেছিল অবাক করা এই ঘটনা! চার ম্যাচে লঙ্কান দলটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনজন আলাদা ব্যক্তি!

১.

ক্রিকেট খেলায় চার ম্যাচে তিন অধিনায়কের কথা শুনেছেন কখনও? তাহলে শুনুন। ১৯৮৮ এশিয়া কাপে আসরের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কার বেলায় ঘটেছিল অবাক করা এই ঘটনা! চার ম্যাচে লঙ্কান দলটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনজন আলাদা ব্যক্তি!

পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে চোট পেয়ে টুর্নামেন্টই শেষ হয়ে যায় নিয়মিত অধিনায়ক রঞ্জন মাদুগালের। ভারতের বিপক্ষে পরের ম্যাচে টস করতে নামেন অর্জুনা রানাতুঙ্গা। কিন্তু ফিল্ডিং করতে গিয়ে চোটে পড়লেন রানাতুঙ্গাও।

গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচটা ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে। এবারে নেতৃত্বের দায়ভার গিয়ে পড়ে ডানহাতি পেসার রবি রত্নায়েকের ঘাড়ে!

শ্রীলঙ্কা ফাইনালে উঠল। এদিকে চোট থেকে সেরে উঠেছেন রানাতুঙ্গা। ফাইনালে আবারও তিনিই অধিনায়ক! অবশেষে ভারতের কাছে ছয় উইকেটে হেরে ক্যাপ্টেন্সি নিয়ে চলমান মিউজিক্যাল চেয়ার গেমের অবসান ঘটে!

২.

১৯৯৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর, এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের সাক্ষী হয়েছিল ক্রিকেট বিশ্ব। হারারেতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একটি টেস্ট ম্যাচে জিম্বাবুয়ের মূল একাদশে থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল একসাথে ‘তিন জোড়া’ সহোদর ভাইয়ের! তাঁরা হলেন যথাক্রমে-

  • গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ার (ওপেনার) ও অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার (উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান)
  • গ্যাভিন রেনি (ওপেনার) ও জন রেনি (পেস বোলিং অলরাউন্ডার)
  • পল স্ট্র্যাং (লেগ স্পিনার) ও ব্রায়ান স্ট্র্যাং (মিডিয়াম পেসার)।

মজার ব্যাপার হল, শুধু ‘ফ্লাওয়ার’, ‘রেনি’ ও ‘স্ট্র্যাং’ ব্রাদার্সই নন ওই ম্যাচে আরো ছিলেন ‘হুইটাল ব্রাদার্স’! জিম্বাবুয়ের খেলোয়াড় তালিকায় ‘টুয়েলভথ ম্যান’ ছিলেন অ্যান্ডি হুইটাল যিনি নাকি মূল একাদশে থাকা ‘গাই’ হুইটালের চাচাত ভাই!

মানে, ১২ জনকে ধরলে এর মধ্যে আটজনই ভাই!

৩.

কোন ক্রিকেটার নোবেল পুরস্কার জিতেছেন এমনটা শুনেছেন কখনো? তবে শুনুন। আয়ারল্যান্ডের স্যামুয়েল বেকেট হলেন ইতিহাসের প্রথম ও একমাত্র নোবেল বিজয়ী ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটার।

ডাবলিন বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে দু’টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলা বেকেটের ছিল উপন্যাস, ছোটগল্প, প্রবন্ধ, নাটক, কবিতাসহ সাহিত্যের প্রায় সকল ক্ষেত্রেই অবাধ বিচরণ। ফরাসি সাহিত্যে তিনি রেখে গেছেন অনন্য প্রতিভার সাক্ষর। আর সে কারণেই ১৯৬৯ সালে তাঁকে সাহিত্য বিভাগে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।

ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি প্রবল ঝোঁক ছিল তাঁর। ব্যাটিং বোলিং দুটোই করতেন বাঁ হাতে। পেশাদার ক্রিকেট খুব একটা খেলেন নি; মাইনর ক্রিকেটই খেলেছেন বেশিরভাগ সময়।

স্যামুয়েল বেকেট সম্পর্কে উইজডেন বলছে, ‘A left-hand opening batsman, possessing what he himself called a gritty defense, and a useful left-arm medium-pace bowler.’

১৯২৫-২৬ সালে ডাবলিন বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলার সুযোগ পান বেকেট। ইংলিশ ক্লাব নর্দাম্পটনশায়ারের বিরুদ্ধে দুটি ম্যাচ খেলেন তিনি।

দুই ম্যাচে চার ইনিংস মিলিয়ে বেকেট রান করেছিলেন মাত্র ৩৫! সর্বোচ্চ ইনিংস ১৮ রানের। আর বল হাতে প্রায় ২০ ওভার বোলিং করে ৬৪ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য।

৪.

একবার ভাবুন তো! একজন স্পেশালিষ্ট ব্যাটসম্যানের টেস্ট ক্যারিয়ারটা শুরুই হল ‘পেয়ার’ অর্থাৎ জোড়া শূন্য দিয়ে! কেবল তাই নয়, টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম ছয় ইনিংস মিলিয়ে সর্বসাকুল্যে তাঁর সংগ্রহ দাঁড়াল ৫টি ডাকসহ মাত্র ১ রান! ব্যাটিং গড় ০.১৬৭!

ছয়টি ইনিংস ক্রমানুসারে ০,০,০,১,০,০!

সম্ভবত ইতিহাসে আর কোন স্পেশালিষ্ট ব্যাটসম্যানের টেস্ট ক্যারিয়ার এর থেকে বাজেভাবে শুরু হওয়ার রেকর্ড নেই! অথচ ঠিক এমনটাই ঘটেছিল শ্রীলঙ্কার সাবেক ওপেনার মারভান আতাপাত্তুর বেলায়! সেই আতাপাত্তু যাঁকে শ্রীলংকান ক্রিকেটে অন্যতম সেরা প্রতিভা হিসেবে গণ্য করা হত।

আতাপাত্তুর টেস্ট অভিষেক হয়েছিল কুড়ি বছর বয়সে; ১৯৯০ সালে ভারতের বিপক্ষে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, অভিষেকের পর আরও সাতটি বছর কেটে গেলেও একটা ফিফটির দেখাও পান নি তিনি! এই ৭ বছরে খেলা ৯ টেস্টের ১৭ ইনিংসে তাঁর সর্বোচ্চ স্কোর ছিল মাত্র ২৯!

অবশেষে ১৯৯৭ সালে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৮ তম ইনিংসে সেঞ্চুরি (১০৮) হাঁকিয়ে সাত বছরের দীর্ঘ রানখরা ঘুচিয়েছিলেন তিনি!

এরপর অবশ্য তাঁকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয় নি। প্রথম ৬ ইনিংসে পাঁচখানা ডাক দিয়ে যার ক্যারিয়ার শুরু সেই তিনি কিনা খেলে ফেললেন ৯০টি টেস্ট! এত জঘন্য শুরুর পরেও হাঁকালেন ১৬ টি সেঞ্চুরি; যার ছয়টিই ছিল ডাবল হান্ড্রেড! চল্লিশ ছুঁইছুঁই গড়ে (৩৯.০২) করলেন সাড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি রান। নয়টি টেস্ট খেলুড়ে দেশের প্রত্যেকটির বিপক্ষে সেঞ্চুরি করার বিরল রেকর্ডও গড়লেন!

তবে অনেক চেষ্টা করেও ‘ডাক স্পেশালিষ্ট’ অপবাদটা ঘোচাতে পারেন নি তিনি! ৯০ টেস্টে যার রয়েছে ২২টি ডাক এবং চারটি পেয়ার তাঁকে আর কী নামেই বা ডাকবেন, বলুন!

৫.

পুরো নাম জন উইলিয়াম হেনরি টেলর ডগলাস ওরফে জনি ডগলাস। পরিচয় সাবেক টেস্ট অলরাউন্ডার। সুঠামদেহী ডগলাসকে বলা হত তাঁর সময়ের সবচেয়ে ফিট ক্রিকেটার।

তো এই জনি ডগলাসকে বলা হয় ইতিহাসের সবচাইতে রক্ষণাত্মক ব্যাটসম্যানদের একজন। ডেড ব্যাটে ‘স্ট্রোকলেস ডিফেন্স’ ছিল যার ট্রেডমার্ক। একঘেয়ে বিরক্তিকর ব্যাটিং স্টাইলের কারণে দর্শকরা তাঁকে নিয়ে ট্রল করত। অস্ট্রেলিয়ার দর্শকরা একবার ডগলাসের নামের আদ্যক্ষরগুলো নিয়ে মজার ওয়ান লাইনার জোক বানিয়ে ফেলল। J.W.H.T এর মানে তারা বের করেছিল ‘Johnny Wont Hit Today’!

পেস বোলিং অলরাউন্ডার ডগলাসের ফার্স্ট ক্লাস রেকর্ড কিন্তু দারুণ। প্রায় ২৫ হাজারের কাছাকাছি রান করেছেন, পাশাপাশি উইকেট নিয়েছেন ১৮৯৩টি! এক মৌসুমে ১০০ উইকেট ও এক হাজার রানের ‘ডাবল’ অর্জনের কৃতিত্ব দেখিয়েছেন পাঁচ বার!

সে তুলনায় তাঁর টেস্ট পরিসংখ্যান বলা যায় সাদামাটা। ১৯১১-১৯২৫ সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে খেলেছেন ২৩ টি টেস্ট। ছয়টি ফিফটি ও একটি সেঞ্চুরিতে মোট রান ৯৬২; ব্যাটিং গড় ২৯.১৫। পাশাপাশি বল হাতে ৩৩ গড়ে উইকেট নিয়েছেন ৪৫টি।

১৯১১-১৯২১ সাল পর্যন্ত ১৮টি টেস্টে ইংল্যান্ডের অধিনায়কত্বও করেছেন তিনি।

ক্রিকেটে তেমন বড় কোন সাফল্য না পেলেও জনি ডগলাস বাজিমাত করেছিলেন বক্সিং রিংয়ে। ক্রিকেটার হবার পাশাপাশি তাঁর আরও একটি পরিচয় ছিল পেশাদার বক্সার। তাও আবার যেন তেন বক্সার নয়; অলিম্পিক সোনা জয়ী বক্সার! ১৯০৮ সালের লন্ডন অলিম্পিকে মিডলওয়েট বক্সিংয়ে স্বর্ণপদক জিতেছিলেন জনি ডগলাস।

জনি ডগলাস হচ্ছেন ইতিহাসের প্রথম টেস্ট ক্রিকেটার, যিনি অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জিতেছেন। জনি ছাড়াও অলিম্পিক গেমসে পদকজয়ী ‘ক্রিকেটার’ আছেন আরও দুজন।

প্রথমজন ইংল্যান্ডের সাবেক টেস্ট ক্রিকেটার জ্যাক ম্যাকব্রায়ান। যিনি ১৯২০ অলিম্পিকে সোনাজয়ী গ্রেট ব্রিটেনের ফিল্ড হকি দলের সদস্য ছিলেন।

দ্বিতীয়জন সাবেক নারী ক্রিকেটার সুনেত্তি ভিলজোয়েন। ২০১৬ সালের রিও অলিম্পিকে নারীদের ‘জ্যাভলিন থ্রো’ ইভেন্টে রৌপ্যপদক জিতেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে একটি টেস্ট ও ১৭ টি ওয়ানডে খেলা এই প্রমীলা ক্রিকেটার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link