টিনো বেস্ট, ক্রিকেটের ব্র্যাড পিট

মাঠের বাইরে তিনি নিজেকে 'ব্ল্যাক ব্র্যাড পিট' এবং পৃথিবীর সবথেকে সুন্দর ন্যাড়া মাথার পুরুষ মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করতেন। তবে বাইশ গজের দুনিয়া তাঁকে চিনে দীর্ঘকায়, দৈত্যাকৃতির এক পেসার হিসেবে। যার রক্তে রয়েছে ক্যারিবিয়ান স্বত্ত্বা আর মাইকেল হোল্ডিং, জোয়াল গার্নারদের মতো আগ্রাসন। এই তিনি টা হলেন, টিনো বেস্ট।

মাঠের বাইরে তিনি নিজেকে ‘ব্ল্যাক ব্র্যাড পিট’ এবং পৃথিবীর সবথেকে সুন্দর ন্যাড়া মাথার পুরুষ মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করতেন। তবে বাইশ গজের দুনিয়া তাঁকে চিনে দীর্ঘকায়, দৈত্যাকৃতির এক পেসার হিসেবে। যার রক্তে রয়েছে ক্যারিবিয়ান স্বত্ত্বা আর মাইকেল হোল্ডিং, জোয়াল গার্নারদের মতো আগ্রাসন। এই তিনি টা হলেন, টিনো বেস্ট।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে টিনো বেস্ট অতীত হয়েছেন, বেশ কিছু বছর পেরিয়ে গিয়েছে। উইন্ডিজের মেরুন জার্সি সবশেষ ম্যাচটা খেলেছিলেন সেই ২০১৪ সালে। অবশ্য উইন্ডিজের হয়ে মাত্র ৫৭ টা ম্যাচ খেলা টিনো বেস্টকে বিশেষ মনে রাখার কোনো কারণ নেই। টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট মিলিয়ে ৫৭ ম্যাচে ৯৭ টা উইকেট নিয়েছেন। এই হলো তাঁর ক্যারিয়ারের আঙ্কিক চিত্র।

তবে তিনি বিশ্ব ক্রিকেটে যে একেবারেই লাইমলাইটে আসেননি তা নয়। একবার তাঁর এক কীর্তিতে উচ্চারিত হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ান পেসার ফ্রেড স্পফোর্থের সাথে। যার নামের পাশে আবার রয়েছে টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম হ্যাটট্রিকের কীর্তি।

তো, ২০১২ সালে এজবাস্টন টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১১ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৯৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন টিনো বেস্ট। ব্যাস, ঐ ইনিংসেই নতুন এক রেকর্ড গড়েন বেস্ট- টেস্ট ক্রিকেটে ১১ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।

যে রেকর্ডটি তার আগে ছিল, জহির খানে। আর ইংল্যান্ডের মাটিতে হিসেব করলে টিনো বেস্টের আগে ১১ নম্বরে নেমে ফিফটি হাঁকিয়েছিলেন মাত্র দুজন। এর মধ্যে একজন আফ্রিকার বার্ট ভোগলার আর অন্যজন হলেন ফ্রেড স্পফোর্থ।

অবশ্য বেস্টের সে রেকর্ডটি ভেঙে যায় এক বছর বাদেই। নটিংহ্যাম টেস্টে ঐ ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই ৯৮ রানের ইনিংস খেলে বেস্টকে ছাপিয়ে যান অস্ট্রেলিয়ার অ্যাশটন আগার।

যাহোক, পেসার টিনো বেস্টে ফেরা যাক। ২০০২ এ প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক। এরপর ২০০৩ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলা শুরু। টিনো বেস্টের উত্থান ছিল এমনই। তবে সেই উত্থানের গল্পটা ধারাবাহিকতার শিকলে বাধতে পারেননি তিনি। তাই ১১ বছরে ক্যারিয়ারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলতে পেরেছেন মাত্র ৫৭ টা ম্যাচ।

অথচ বার্বাডোজের হয়ে প্রথম শ্রেণির শুরুর সময়ে দারুণ বোলিং প্রতাপ দেখিয়েছিলেন তিনি। তবে ছোট্ট ক্যারিয়ারে তাঁর সেরা বোলিং পারফরম্যান্সের সাথে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের নাম। ২০১২ সালে যেবার বাংলাদেশ সফরে এলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ, সেবার দলে ছিলেন বেস্ট।

আর একাদশে সুযোগ পেয়েই খুলনা টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৭১ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। খুলনা টেস্ট তো বটেই, ঐ সিরিজে ১২ উইকেট নিয়ে হয়েছিলেন সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী বোলার।

তবে টিনো বেস্টের আন্তর্জাতিক সাফল্য বলতে গেলে এতটুকুই। মাঠ এবং মাঠের বাইরের বেশ কিছু কর্মকাণ্ডে সমালোচনায় জুটেছে বেশি। ২০০৫ সালে ক্যান্ডি টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এক ইনিংসেই তিনটি বীমার মেরেছিলেন বেস্ট। এমন ঘটনায় শাস্তিও পেয়েছিলেন তিনি। জুটেছিল ম্যাচ ফির ৫০ শতাংশ জরিমানা।

বাইশ গজের টিনো বেস্টকে একবার দেখা গিয়েছে একটি চলচ্চিত্রেও। ২০০৭ সালে হিট ফর সিক্স নামের একটি সিনেমাতে তিনি বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ঐ সিনেমাতে শুধু বেস্টকে নয়, দেখা গিয়েছে আরো কয়েকজন ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তিকেও। এর মধ্যে ছিলেন, এভারটন উইকস, ডেসমন্ড হেইন্স, গর্ডন গ্রীনিজ ও রোল্যান্ড বুচার।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারে তেমন সমৃদ্ধ না হলেও লর্ডসের ২০০ বছর পূর্তিতে একটি বিশেষ ম্যাচে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন টিনো বেস্ট। ২০১৪ সালে হওয়া সে ম্যাচে তিনি খেলেছিলেন রেস্ট অব দ্য ওয়ার্ল্ড। যে দলের হয়ে ঐ ম্যাচটি খেলেছিলেন বাংলাদেশের তামিম ইকবালও।

ক্রিকেট ছাড়ার পর টিনো বেস্ট নতুন করে আলোচনায় এসেছিলেন তাঁর আত্মজীবনীমূলক ‘মাইন্ড দ্য উইন্ডোজ’ বই। সে বইয়ে মূলত তিনি তাঁর মাঠের বাইরের উদ্দাম জীবন-যাপনের গল্প শুনিয়েছেন। আর তাতে উঠে এসেছে, তাঁর যৌনজীবনের গল্পও। তিনি দাবী করেন, প্রায় ৬৫০জন নারীর সঙ্গে সহবাস করেছেন তিনি। আর তা নিয়ে বিন্দুমাত্র অনুতাপ নেই তাঁর মধ্যে। তিনি বরং গর্বই করেন তা নিয়ে।

তবে টিনো বেস্ট তাঁর এমন প্লে-বয় হয়ে ওঠার কারণটাও বইতে ব্যাখ্যা করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, ‘আমার একটা প্রেমিকা ছিল। নাম মেলিসা। কিন্তু আমাদের সম্পর্ক টেকেনি। বন্ধুরা আমাকে বলতো, বার্বেডোজের হয়ে আমি উইকেট নিলেই ও ফিরে আসবে।  বার্বাডোজে আমি অনেক উইকেট পেয়েছি, কিন্তু ও ফিরে আসেনি। তারপর আমি বদলে গেলাম। হয়ে গেলাম প্লে-বয়।’

টিনো বেস্ট ছিলেন গতির তারকা। তবে ক্যারিয়ারটাও ছিল নানা বিতর্কে ভরা। এজন্য ক্যারিয়ারও গড়ায়নি বেশিদূর। মূলত মাঠের বাইরের উদ্দাম জীবনটাই ছিল তাঁর কাছে অন্ত:প্রাণ। যদিও তিনি দাবী করেছেন, অনুশীলনে তাঁর চেয়ে পরিশ্রম কেউ করেনি।

তবে তাঁর দাবীটা যতই সত্য হোক, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিনি ছিলেন ক্ষণিকের পথযাত্রী, এর চেয়ে মহাসত্যটি যে আর নেই। বাইশ গজের টিনো বেস্ট থেকে মাঠের বাইরের যৌনপিপাসু টিনো বেস্টকেই এখন বেশি চেনে মানুষ।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...