তিতেই কি ব্রাজিলের সর্বনাশের জন্য দায়ী?

ব্রাজিল গিয়েছিল হেক্সাজয়ের স্বপ্ন নিয়ে। সেই স্বপ্ন ধসে পড়েছে কোয়ার্টার ফাইনালে গিয়ে। গেল আসরের রানার আপ ক্রোয়েশিয়ার কাছে হেরে। আবারও ইউরোপিয়ান শক্তির সামনে কাটা পড়ল ব্রাজিলের স্বপ্ন। তবে, সামর্থ্যের কোনো কমতি ছিল না সেলেসাওদের। ইউরোপের সেরা সব লিগ থেকেই খেলোয়াড়রা এসেছিলেন ব্রাজিলের হয়ে খেলতে। কিন্তু, ব্রাজিলের কৌশল কী বিশ্বজয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল? বলা হচ্ছে, ব্রাজিলের সর্বনাশের জন্য কোচ তিতেই দায়ী।

ক্রোয়েশিয়ার কৌশলের কাছে ব্রাজিলের ফুটবল ধোপে টেকেনি। জোনাল মার্কিংয়ের সামনে অসহায় ছিল ব্রাজিলের আক্রমণ। মধ্যমাঠের খেলায় লুকা মদ্রিচের নেতৃত্বে বরং এগিয়ে ছিল ক্রোয়েশিয়াই। ভিনিসিয়াস জুনিয়রকে আগেভাগে তুলে নেওয়া হয়। যার খেসারত দিতে হয় ব্রাজিলকে। এখানেও আবারও কাঠগড়ায় উঠেন তিতে।

তাও অতিরিক্ত সময়ে নেইমার নিজে ডেডলক ভেঙে দর্শনীয় একটা গোল দিয়েছিলেন। তবে, তাতে শেষ রক্ষা হয়নি। গোল পরিশোধ করে লড়াইয়ে ফেরে ক্রোয়েশিয়া। পুরো ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার একটাই ‘শট অন টার্গেট’। আর তাতেই গোল। একবার ম্যাচে ফিরে তাঁরা হয়ে ওঠে আরও দূর্বার।

পরে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে পারেনি ব্রাজিল। পরিসংখ্যান বলে, বিশ্বকাপে কখনও পেনাল্টি শ্যুট আউটে হারেনি ক্রোয়েশিয়া। এবারও সেই রেকর্ড অক্ষুন্ন রইল। আর কোয়ার্টার ফাইনালে সেলেসাওদের ইউরোপিয়ান দলের সামনে সম্মান খোয়ানোর ধারাটাও টিকে রইল।

এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মত বিশ্বকাপে পেনাল্টি শ্যুট আউটে ব্রাজিল পরাজিত হল। এর আগে ১৯৮৬ সালে কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের কাছে পরাজিত হয়ে তাদের বিদায় নিতে হয়েছিল। পেনাল্টিতে রিয়াল মাদ্রিদের রদ্রিগোর প্রথম শটটি রুখে দেন ক্রোয়েশিয়ার ম্যাচ সেরা গোলরক্ষক ডোমিনিক লিভাকোভিচ।

অন্যদিকে ক্রোয়েশিয়া তাদের চারটি পেনাল্টি শটই গোলে পরিণত করে। বিপরীতে মারকুইনহোসের শট পোস্টে লেগে ফেরত এলে ব্রাজিলের বিদায় নিশ্চিত হয়। মারকুইনহোসের জায়গায় চতুর্থ পেনাল্টি নিতে নেইমার কেন যাননি এমন প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয়েছে তিতেকে। উত্তরে বর্ষিয়ান এই কোচ বলেন, ‘কারণ, তাঁর (নেইমারের) শেষ শটটি নেবার কথা ছিল। সবচেয়ে চাপের সময় দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের উপর সব চাপ থাকে।’

ব্রাজিলের বিশ্বকাপ যাত্রার অবসান হল। ষষ্ঠ বিশ্বকাপ জয়ের অপেক্ষাটা আরও বাড়ল, অন্তত চারটি বছরের জন্য। আর এই অপেক্ষার জন্য দায়ী তিতে। পরিস্কার কোনো প্ল্যান বি ছাড়াই মাঠে খেলোয়াড়দের নামিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। ব্যক্তিগত ভাবে অধিকাংশ খেলোয়াড়ই ছিলেন যথেষ্ট স্কিলফুল। কিন্তু, বিশ্বকাপ জয়ের জন্য যে সমন্বয়টা দরকার সেটা দলের মধ্যে আনতে পারেননি তিতে।

৬১ বছর বয়সী তিতে ২০১৬ সালে ব্রাজিল দলের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। কাতারে আসার আগেই অবশ্য দলের ফলাফল যাই হোক না কেন কোচের দায়িত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন তিতে। ফলে বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার সাথে সাথে তাঁরও বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে।

তিনি বলেন, ‘এই ধরনের পরাজয় সত্যিই হতাশার। কিন্তু আমি শান্তির সাথেই বিদায় নিচ্ছি। আমার সময় শেষ হয়ে গিয়েছে। দেড় বছর আগেই আমি এই ঘোষনা দিয়েছিলাম। এখানে জেতার পর নিজের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কোন ইচ্ছা আমার ছিলনা। যারা আমাকে চিনে তারা সবাই আমার এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানে।’

চার বছর আগে বেলজিয়ামের কাছে পরাজিত হয়ে তিতের অধীনে ব্রাজিল এই কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছিল। এর মাঝে ২০১৯ সালে ঘরের মাঠে কোপা আমেরিকা জয়ের পর গত বছর আর্জেন্টিনার কাছে শিরোপা হারায়। অর্জন বলতে কেবল ২০১৯ সালের কোপা আমেরিকা জয়।

নিজেকে অবশ্য পুরোপুরি ব্যর্থ বলতে নারাজ তিতে। বললেন, ‘এই সময়ের মধ্যে আমি যতটুকু সম্ভব ভাল কিছু করার চেষ্টা করেছি। এই মুহূর্তে সবকিছু পর্যালোচনা করার পর্যায়ে আমি নেই। কিন্তু সময় যত যাবে আমার কাজের মূল্যায়ন ঠিকই হবে। বিদায় বেলায় এভাবে বলাটা কঠিন।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link