একটা সময় খেলাধুলা ছিল নেহায়েৎই বিনোদনের বিষয়। কিন্তু এখন বিনোদনের হিসেব ছাড়িয়ে ক্রীড়া ক্ষেত্রে অর্থের ঝনঝনানি বেশি। ক্রিকেট ফুটবল কিংবা গলফ, টেনিস সর্বত্রই টাকা উপার্জন এখন প্রথম উদ্দেশ্য। আর তাই স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের সম্পদের পরিমানও হয় চোখ কপালে তুলে দেয়ার মত।
এমন ধনী বিলিয়নিয়ার ক্রীড়াবিদদের নিয়েই বিশ্ববিখ্যাত সাময়িকী ফোর্বস এবার প্রকাশ করেছে ‘Billion Dollars Ballers’ নামের একটি চমকপ্রদ প্রতিবেদন। সেখানে বলা হয়েছে এমন কয়েকজন ক্রীড়াবিদদের কথা, যাদের সবার একাউন্টেই রয়েছে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চেয়ে বেশি অর্থ। বাংলাদেশী মুদ্রায় যার পরিমান প্রায় দশ হাজার কোটি টাকা।
অবশ্য আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, ফোর্বসের এই প্রতিবেদনে জায়গা পাননি কোন ধনী ক্রিকেটার। আমেরিকান ফুটবলের পরেই বিশ্বের সবচেয়ে দামী স্পোর্টস ইভেন্ট ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ। তা সত্ত্বেও বিরাট কোহলি, মহেন্দ্র সিং ধোনিদের মত বিত্তবান ক্রিকেটারদের তালিকায় জায়গা না পাওয়াটা অবাক করার মতই।
ফোর্বসের করা ধনী অ্যাথলেটদের এই প্রতিবেদনে রয়েছেন একজন গলফার, দুইজন ফুটবলার, একজন বাস্কেটবল খেলোয়াড়, একজন টেনিস তারকা এবং একজন বক্সার-এর নাম।
আর এই তালিকায় সবার উপরে অবস্থান করছেন গলফার টাইগার উডস। অবশ্য নারী কেলেঙ্কারি, ড্রাগস আর ইনজুরি ছোবলে পূর্নতা পায়নি এই কিংবদন্তির ক্যারিয়ার। মাত্র বিশ বছর বয়সে গলফ দুনিয়ায় পা রাখা টাইগার লম্বা সময় ধরেই আছেন সবচেয়ে ধনী অ্যাথলেটের তালিকায়।
গলফ খেলার পাশাপাশি স্পন্সরশীপ, ব্যবসায় থেকে প্রতি বছর ১০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করেন তিনি৷ তার বর্তমান অ্যাকাউন্টে ১.৭২ বিলিয়ন ইউএস ডলার আছে বলে জানিয়েছে ফোর্বস। আর বাংলাদেশী মুদ্রায় এই অর্থের পরিমান পনেরো হাজার নয়শত উননব্বই কোটি টাকা।
টাইগার উডসের পরের স্থানেই আছেন ফুটবল ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। তবে ফুটবলারদের মধ্যে তিনিই সবার শীর্ষে। ফুটবল দুনিয়ায় সবচেয়ে সফলতম খেলোয়াড়দের একজন তিনি, অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্রেও কোন কার্পন্য নেই তার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে রোনালদোর ফলোয়ার মিলিয়ন মিলিয়ন।
আর তাই নাইকি, হারবালাইফ এবং ক্লিয়ার শ্যাম্পুর মতো কোম্পানিগুলো তাকে উচ্চমূল্যেই ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে নির্বাচন করেছে। এছাড়া ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এই ফুটবলারের নিজস্ব রেস্তোরাঁ এবং ব্যবসায় রয়েছে। সবমিলিয়ে পর্তুগিজ সেনসেশনের অ্যাকাউন্টে আছে ১.২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশী হিসেবে এগারো হাজার পাঁচশ সাতাশ কোটি টাকা।
সর্বোচ্চ ধনী ক্রীড়াবিদের তালিকায় তিন নম্বরে নাম আছে বাস্কেটবল খেলোয়াড় লেব্রোন জেমস-এর। নাইকির সাথে তার আজীবন মেয়াদের একটি চুক্তি রয়েছে এবং এর পাশাপাশি লস অ্যাঞ্জেলেস লেকার্সের সাথে রয়েছে ৪১.৫ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি। এছাড়া জেমসের নিজস্ব প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানি। আমেরিকান এই সুপারস্টারের বর্তমান নেট সম্পদের পরিমান ১.১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা দশ হাজার সাতশ আশি কোটি টাকা।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর মতই তালিকায় আছেন আরেক ফুটবল গ্রেট লিওনেল মেসি। এক সময় অবশ্য মেসি ছিলেন পুরো বিশ্বের সর্বোচ্চ উপার্জনকারী ক্রীড়াবিদ। অ্যাডিডাস, পেপসি এর মত নামীদামী কোম্পানির ব্র্যান্ড এম্বাসেডর তিনি।
ফুটবল ছাড়াও এসব খাত থেকে বেশ ভাল আয় হয় এই পিএসজি তারকার। আর্জেন্টাইন এই ফুটবলারের অ্যাকাউন্টে আছে ১.১৫ বিলিয়ন ইউএস ডলার, যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় দশ হাজার পাঁচশ কোটি টাকা।
তালিকার পাঁচ নম্বরে জায়গা পেয়েছেন টেনিস খেলোয়াড় রজার ফেদেরার। এই স্প্যানিশ তারকা অনেকদিন থেকেই আন্তজার্তিক টুর্নামেন্টে অংশ নেননি। তবু মাঠের বাইরের বিভিন্ন খাত থেকে মোটা অংকের টাকা উপার্জন করে যাচ্ছেন তিনি। গত এক বছরে বিশ্বের যেকোনো অ্যাথলেটের চেয়ে ফেদেরারের আয় বেশি। রোলেক্স এবং Uniqlo এর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডরও তিনি। সবমিলিয়ে ফেদেরারের অ্যাকউন্টে রয়েছে ১.০৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ফোর্বসের প্রতিবেদনে সবার শেষে আছেন বক্সার ফ্লয়েড ম্যাওয়েথার। এই আমেরিকান তারকা নিজস্ব কোম্পানি থেকে প্রতিবছর বড় অংকের অর্থ আয় করে থাকেন৷ ফোর্বসের তথ্যমতে, ১.০৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা দশ হাজার কোটি টাকার চেয়ে বেশি অর্থ রয়েছে তার অ্যাকাউন্টে।
আমেরিকান ম্যাগাজিন ফোর্বস যে কয়েকজনের কথা উল্লেখ করেছে তাদের মোট সম্পদের পরিমান ৮.৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এই অর্থ আসলে কতটা বেশি, তার একটি বাস্তব ধারনা পাওয়া যায় পদ্মা সেতুর এই বছরের বাজেটের দিকে তাকালে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে পদ্মা সেতুর বাজেট প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা অর্থাৎ ফোর্বসের তালিকায় থাকা তারকা’রা চাইলে একাই কয়েকটি পদ্মা সেতু তৈরি করতে পারেন৷