৩১-৪, ৪৯-৪, ২৫-৪, ৬৩-৪, ২৬-৪, ১৩-৪, ৪৪-৪, ৩৫-৪।
জটিল কোনো গানিতিক সমীকরণ বলে মনে হচ্ছে? কিংবা রহস্যময় কোনো গুপ্ত সংস্থার কোড?
না, এসব ভেবে মাথার চুল ছিড়ে লাভ নেই। খোলসা করে বলা যাক। গত বছর দুই সময়ে বাংলাদেশের খেলা কয়েকটা টেস্ট ইনিংসের শুরুটা এমন ছিলো। সংখ্যাগুলো দেখেই বুঝতে পারছেন, এই সময়ে বেশিরভাগ টেস্ট ইনিংসে আমরা ৫০ রানের আশেপাশে, কখনো কখনো ২০ রানের কাছে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলেছি।
টেস্ট ক্রিকেট মানে টপ অর্ডারের বড় রানের ভিত তৈরি করে দেওয়া। কিন্তু বাংলাদেশের চিত্র বলছে, তারা টপ অর্ডারের ওপর সেভাবে ভরসাই করতে পারছে না। বেশিরভাগ সময় মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের উইকেটে আসতে হচ্ছে বল নতুন থাকতেই।
পরিসংখ্যান থেকে খোজ নেওয়া যাক। ২০১৯ সালের শুরু থেকে এই পর্যন্ত বাংলাদেশ ১৪টা টেস্ট খেলেছে। এর মধ্যে ১৩ ইনিংসেই বাংলাদেশ ৬০ রানের নিচে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলেছে। সোজা কথায়, বেশিরভাগ সময় টপ অর্ডার থেকে আমরা এক শ রানও পাইনি। কিন্তু কেনো এমন হচ্ছে?
ব্যাটসম্যানদের টেকনিক্যাল ত্রুটির কথা অস্বীকার করলেন না নাজমুল আবেদীন ফাহিম। দেশের শীর্ষ এই কোচ বলছিলেন, কিছু দুর্বলতা তো আছেই, ‘আমি অস্বীকার করছি না যে, আমাদের ব্যাটসম্যানদের নতুন বলের সুইং খেলতে সমস্যা হয়। এটা অনেক পুরোনো সমস্যা। ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা বল চকচকে থাকতে থাকতেই টপ অর্ডার হারিয়ে ফেলছি। কিন্তু এটাই একমাত্র বা প্রধাণ কারণ নয়। কারণ, পাকিস্তানের বিপক্ষে আজই আপনি দেখেছেন যে, আমরা স্পিনের বিপক্ষেও দ্রুত ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলেছি। ফলে সমস্যাটা কেবল সুইং খেলতে না পারার নয়। টার্ন খেলতেও সমস্যা হচ্ছে।’
তাহলে সমস্যার গোড়াটা কোথায়?
ফাহিম আবার সেই পুরোনো জায়গায় ফিরে গেলেন। তিনি বলছেন, ঘরোয়া ক্রিকেট প্রতিদ্বন্ধীতাহীন ও অনেক ক্ষেত্রেই ফলাফল আগে থেকে ঠিক করে ফেলার ফলে ব্যাটসম্যানদের কোয়ালিটিতে প্রভাব পড়ছে। ব্যাটসম্যানরা একটা ফলস কনফিডেন্স নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট খেলছেন। একটু কোয়ালিটি বোলিং হলেই তাই তারা ধ্বসে পড়ছেন।
প্রথমত ফাহিম বলছিলেন, ঘরোয়া ও আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটের মানে যে বিশাল পার্থক্য, সেই কথা, ‘অনেক বড় পার্থক্য। ব্যাটসম্যানরা ওখানে যেসব শট করে পার পেয়ে যায়, তা আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে করে আউট হয়ে যায়। যে মানের বোলিং ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলে বড় ইনিংস খেলতে পারে তারা, সেটা আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে খুজে পাওয়া যায় না। ফলে সব ব্যাটসম্যানের পারফরম্যান্সেই এর প্রভাব পড়ে। টপ অর্ডারকে যেহেতু তুলনামূলক কঠিন বোলিং খেলতে হয়, তাই তারা এখানে বেশি বিপাকে পড়ছে।’
আরেকটা ব্যাপারের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন ফাহিম। তিনি বলছিলে, ঘরোয়া ক্রিকেটে পাতানো খেলার একটা খুব বাজে প্রভাব পড়েছে ব্যাটসম্যানদের ওপরে। একটু ব্যাখ্যা করে বলছিলেন, ‘আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে অনেক ব্যাটসম্যানই একটা সুরক্ষা পায়। তারা বারবার ইনিংস চলাকালীন আউট হওয়া থেকে বেচে যায়। এখন জাতীয় দলে তো বড় দলের খেলোয়াড়ই বেশি। তারাই ঘরোয়া ক্রিকেটে এই সুরক্ষাটা বেশি পায়। ফলে তারা একটা ফলস কনফিডেন্স নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল খেলতে আসে। ওই অভ্যাস ত্যাগ করতে পারে না। ফলে তারা ভুল শট করে এবং আউট হয়ে যায়।’
এর সাথে আরেকটা বড় সমস্যা হলো, আমাদের অস্থিতিশীল টপ অর্ডার। তামিম ইকবাল না থাকায় আমাদের টপ অর্ডার একেবারেই কচিকাচার আসর হয়ে গেছে। খেলোয়াড়রা আসছেন এবং বাদ পড়ছেন। গত দু বছরে ডজনেরও বেশি খেলোয়াড় বাংলাদেশের সেরা চারে খেলেছেন। ফলে এরা কেউ মানিয়ে নেওয়ারই সুযোগ পাচ্ছেন না। যার কারণে খুব বেশি ভঙুর হয়ে উঠেছে টপ অর্ডার।
সমস্যাগুলো পরিষ্কার। এখন কথা হচ্ছে, আমরা সমাধাণ চাই কিন না। সমাধাণ চাইলে এসব সমস্যা দূর করা নিশ্চয়ই খুব কঠিন কাজ হবে না।
তবে খুব আশার কথা শোনাতে পারেন না ফাহিম। এই সব ক্রিকেটারের বেশিরভাগের গুরু ফাহিম বড় বিমর্ষ হয়ে বলছিলেন, ‘রান করা, উইকেট নেওয়া, উইকেটে থাকা; এসব তো একটা যুদ্ধ। আমার কেনো যেনো মনে হয়, খেলোয়াড়দের সেই যুদ্ধ করার পরিবেশটাই আর নেই। যুদ্ধ করতে একটা আবহ তো লাগে। সেটাই যেনো হারিয়ে গেছে।’
এই আবহটা কে ফিরিয়ে আনবে?