দিনে ম্যাড়ম্যাড়ে ম্যাচ, রাতের ম্যাচে সে দৃশ্য বদলে হয়ে যায় দুর্দান্ত এক ম্যাচ। ধুমধাড়াক্কা ক্রিকেটে পারফর্মারও চোখে প্রশান্তি জোগায় রাতের ম্যাচে। বিপিএলের প্রথম দিনে নজর কেড়েছিলেন রনি তালুকদার।
আজকের ম্যাচে সেই রেশটা দেখা গিয়েছিল সাকিবের ব্যাটে। কিন্তু তারুণ্যের জয়গান নিয়ে গল্প বলার মতো পারফর্মার বিপিএলে দেখা যায় বেশ কম। অবশেষে সেই আক্ষেপ মিটলো তৌহিদ হৃদয়ের ব্যাটে। সাকিবের খেলা দুর্দান্ত ৬৭ রানের ইনিংসের দিনে বেশ ভাল জবাব দিয়েছেন ২০২০ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী তরুণ এ ব্যাটার।
৭ চার ও ১ ছক্কা ৩৪ বলে ৫৫ রানের দুর্দান্ত একটি ইনিংস খেলেছেন তৌহিদ হৃদয়। সাকিবের বরিশালের দেওয়া ১৯৫ রানের লক্ষ্যটা সিলেটের জন্য সম্ভবপর হয়েছে তৌহিদের এই ইনিংসের কারণেই।
সিলেটের ব্যাটিং ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেছিলেন কলিন অ্যাকারম্যান। বড় টার্গেট। একটা উড়ন্ত শুরুর প্রয়োজন ছিল সে সময়ে। আর সেই চাওয়া ঠিক সময়েই মিটিয়েছেন তিনে নামা তৌহিদ হৃদয়।
ব্যাটিং পাওয়ার প্লে’র ফায়দা তুলেছেন। নজরকাড়া সব শট দিয়ে সিলেটে স্কোরবোর্ড সচল রেখেছেন। সবচেয়ে বড় কথা উইকেট আগলে রেখে নাজমুল হোসেন শান্তর সাথে শতরানের লম্বা একটা জুটি গড়ে ইনিংস পাড়ি দিয়েছেন।
ঘরোয়া ক্রিকেটে বরাবরই পরীক্ষিত পারফর্মার ছিলেন তৌহিদ হৃদয়। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা টপ অর্ডার ব্যাটার হতে পারেন- এই ভবিষ্যতদ্বাণীও দেন অনেক ক্রিকেট বিশ্লেষক। তরুণদের মধ্যে ব্যাটিংয়ে অন্যতম টেকনিক্যালি সলিড ব্যাটার বিবেচনা করা হয় তাঁকে। অল্প সময়ের ঘরোয়া ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত বেশ ভাল কিছুরই আভাস দিয়েছেন ২২ বছর বয়সী এ ক্রিকেটার।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট, লিস্ট এ কিংবা টি-টোয়েন্টি- সব ফরম্যাটেই ব্যাটিং পারফরম্যান্সে বেশ ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন তিনি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট এবং লিস্ট এ- দুই ক্রিকেটেই গড়টা ধরে রেখেছেন চল্লিশের উপরে।
একই সাথে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন তিনটি। আবার স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও তাঁর ক্যারিয়ার গ্রাফ বেশ চলনসই। প্রায় ২৭ গড়ে ব্যাটিং করেছেন। একই সাথে টপ অর্ডার থেকে দলের বড় ইনিংসের যে চাওয়াটা থাকে সেটাও তিনি মিটিয়েছেন। ৩৪ ইনিংসের ক্যারিয়ারে এরই মধ্যে হাঁকিয়েছেন ৪ টি অর্ধশতক।
এবারের বিপিএল শুরুর আগে ভবিষ্যৎ ক্রিকেট তারকা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের সামনে মাশরাফি তৌহিদ হৃদয় নামটা আলাদা করে বলেছিলেন। হয়তো তাঁর মধ্যে দারুণ কিছুর সম্ভাবনা আঁচ করতে পেরেছিলেন বলেই মাশরাফি জাতীয় দলে এখন পর্যন্ত আনক্যাপড তৌহিদ হৃদয়ের নাম বলেছিলেন।
এমনিতে তৌহিদ হৃদয় সেই ২০২০ থেকেই ছিলেন বেশ আলোচিত। আকবর আলীর নেতৃত্বে সে বছরে বাংলাদেশ যে যুব বিশ্বকাপ জিতেছিল সেই দলটার প্রথম দিকের অধিনায়ক ছিলেন এই তৌহিদ হৃদয়। তবে শেষদিকে এসে তিনি সেই নেতৃত্বটা হারিয়ে ফেলেন। কিন্তু সেই দলটার অন্যতম নির্ভরযোগ্য ব্যাটার হয়ে পুরো আসরেই খেলেছিলেন তৌহিদ।
বিশ্বকাপ অভিযানের পর ঘরোয়া ক্রিকেটে শুরু থেকেই দ্যুতি ছড়িয়েছেন। আর সেখান থেকেই আবারো লাইমলাইটে ফেরা। তবে এবার বোধহয় আলোটা আরো তীব্রভাবে নিজের করে নিলেন তৌহিদ। হাইস্কোরিং ম্যাচ। এমন সব ক্রাঞ্চ ম্যাচে নজর থাকে সবার। আর সেই নজরটা নিজের দিকে নেওয়ার জন্য যা প্রয়োজন তার সবটাই তৌহিদ হৃদয় করে দেখিয়েছেন তাঁর এই ইনিংসের মাধ্যমে।
নিজে দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছেন। সেই ইনিংসের সুবাদে তাঁর দল সিলেটও জিতেছে। সবচেয়ে বড় কথা বহুদিন বাদে, বড় তারকা পূর্ণ বিপিএলের এক ম্যাচে নায়ক বনে গেলেন একজন তরুণ ক্রিকেটার।
এটা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য যতটা স্বস্তিদায়ক, ঠিক ততটা বিপিএলের জন্য দায়মুক্তিরও একটা প্রভাবক। কারণ এই তৌহিদ হৃদয়রাই তো পরবর্তী বাংলাদেশ ক্রিকেট। তাদের দারুণ সব ইনিংসই তো বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিতব্য পথ চলার ক্ষেত্রে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার রসদ জোগায়।