অসম্ভাব্য অধিকার

নিউজিল্যান্ডকে উড়িয়ে দিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা নিজেদের করেছে অস্ট্রেলিয়া। ১৬ বছরের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে সপ্তম আসরে এসে শিরোপা জয়ের অধরা স্বপ্ন পূরন করলো পাঁচ বারের ওয়ানডে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। বিশ্বকাপের আগে টানা পাঁচ সিরিজ হারের পর ব্যাকফুটেই ছিলো অজিরা। বিশ্বকাপের ফেবারিটদের তালিকায় অনেকেই গুনায় ধরেনি অজিদের। তাই শিরোপা জিতে সবাইকে আরেকবার মনে করিয়ে দিলেন বিশ্বকাপের রঙ যে হলুদ!

এক বছর আগেও দলে থিতু ছিলেননা ফাইনালের ম্যাচ সেরা মিশেল মার্শ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ছিলেন চরম অধারাবাহিক। ২০১১ থেকে ২০২০ পর্যন্ত খেলেছেন মাত্র ২০ টি-টোয়েন্টি। তবে বিশ্বমঞ্চে সুযোগ পেয়েই ১৪৫ স্ট্রাইক রেটে ৬১.৬৬ গড়ে রান করেছেন তিনি। এমনকি অস্ট্রেলিয়ার হয়ে চলতি বছর টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও তিনি। ফাইনালে দলের প্রয়োজনে খেললেন ৫০ বলে ৭৭ রানের হার না মানা ইনিংস। ৪ ছক্কা ও ১০ বাউন্ডারিতে দলকে জয় এনে দেন ৩১ বছর বয়সী এই ব্যাটার।

মিশেল মার্শ কখনোই অস্ট্রেলিয়ার দর্শকদের কাছে আদরের কেউ ছিলেন না। বরং তিনি নিজেই একবার বলেছিলেন, ‘বেশিরভাগ অস্ট্রেলিয়ানই আমাকে ঘৃণা করে। আমি তাঁদের জন্যই জিততে চাই।’ ফলে, খেলাধুলার দুনিয়ায় মার্শের মত এভাবে দায়মুক্ত আর খুব বেশি লোক যে হতে পারেননি – সেটা চোখ বুজে বলা যায়। নি:সন্দেহে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে এটা তাঁর ক্যারিয়ারেরই সেরা মুহূর্ত।

নিজের খেলা প্রথম বলেই অ্যাডাম মিলনের বলকে সীমানা ছাড়া করে ছক্কা হাঁকান মার্শ। পরের দুই বলে মারেন দুই চার। একই ভাবে জিমি নিশাম ও মিচেল স্যান্টনারের প্রথম বলেই ছক্কা মারেন তিনি। মার্শের তাণ্ডবে কোনো পাত্তাই পায়নি নিউজিল্যান্ডের বোলাররা।

অজি অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ বলেন, ‘আমরা মার্শকে তিনে খেলাবো লম্বা সময় – এমনটাই কথা দিয়েছিলাম। মাঝে মাঝে সবার থেকেই আপনার আত্মবিশ্বাসের প্রয়োজন হয়।’

পুরো টুর্নামেন্টেই দুর্দান্ত বোলিং করেছেন পেসার জশ হ্যাজেলউড। ফাইনালে করেছেন নজরকাঁড়া বোলিং। ৪ ওভারে মাত্র ১৬ রানের বিনিময়ে শিকার করেন ৩ উইকেট। পাওয়ারপ্লেতে তিন ওভার বোলিং করে ১৪ টি ডট বল দেন এই পেসার! তবে মিশেল স্টার্কের বলে বাউন্ডারিতে ক্যাচ মিস করে মুহূর্তের মাঝেই বনে গিয়েছিলেন ভিলেন। ওই ওভারেই ২১ রান আদায় করেন উইলিয়ামসন। ওই ক্যাচ মিসের কারণে ২১ বলে ২১ থেকে ইনিংস শেষে ৪৮ বলে ৮৫ রানের অসাধারণ এক ইনিংস উপহার দেন উইলিয়ামসন।

চার ওভার বোলিং করে কোনো উইকেট না শিকার করে ৬০ রান দেন পেসার মিশেল স্টার্ক। যার মধ্যে উইলিয়ামসনই নেন ১২ বলে ৩৯ রান! হ্যাজেলউডের ক্যাচ মিসের মাশুলটা গুনতে হয়েছিলো স্টার্ককে।

বিশ্বকাপের আগে অস্ট্রেলিয়া দলকে নিয়ে অনেক সমালোচনা হলেও বিশ্বমঞ্চে নিজেদের সেরাটা দিয়ে ট্রফি জিতে নিলো ওয়ার্নার-মার্শরা। ফিঞ্চ বলেন, ‘এটা অসাধারণ, সত্যি। অস্ট্রেলিয়া দলকে নিয়ে অনেক কথাই হয়েছে। সত্যি বলতে আমরা খুব ভালো পারফরম করছিলাম না বিশ্বকাপের আগে। আমাদের বেশ কিছু টিম ছিলো এর আগে তবে এই দলটা সত্যি দারুণ। যেভাবে একে অপরের পাশে ছিলো এটা সত্যি খুব স্পেশাল। এটা দেখে খুবই ভালো লাগছে। ‘

দলের অধারাবাহিক এক মুখ যে কি’না এক বছর আগেও ছিলেন দলে আসা যাওয়ার মধ্যে সেই মার্শই কিনা ফাইনালে ম্যাচ জয়ের অন্যতম নায়ক। আইপিএলে ডাগ আউটে বসে থাকা ডেভিড ওয়ার্নার জিতলেন টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার। বোলিংয়ে হ্যাজেলউড-জাম্পাদের নজরকাড়া বোলিং দল হিসেবে অজিদের গড়ে তুলেছে শক্তিশালী। আর সেই শক্তিমত্তা দেখিয়েই দাপুটে জয়ে শিরোপা জিতলো অজিরা।

অস্ট্রেলিয়ার এই সাফল্য খুবই ‘অসম্ভাব্য’ ছিল এবার। এমনকি সেটা ১৯৮৭ সালের চেয়েও। কারণ, নিজেদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে সময় কাটাচ্ছিল দলটি। বিশ্বকাপে আসার আগে তাঁরা টানা পাঁচটি সিরিজ হেরেছে। তাঁরাই আজ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। আর সেই জয়টাও আসলো আরো বড় এক ‘অসম্ভাব্য’ নায়কের কাছ থেকে। নিয়তি কখন কিভাবে পাল্টে যায় – সেটা শুধু নিয়তিই জানে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link