বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাওয়া উমেশ যাদব

ভারত গত ১২ বছর ধরে ভারতের মাটিতে সিরিজ হারেনি। রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজা জুটির উত্থান যেমন এর একটা অন্যতম কারণ, তেমনই এসজি বলে অন্যতম সেরা পেস বোলার উমেশ যাদবের পারফরম্যান্সটাও গুরুত্বপূর্ণ।

ভারত গত ১২ বছর ধরে ভারতের মাটিতে সিরিজ হারেনি। রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজা জুটির উত্থান যেমন এর একটা অন্যতম কারণ, তেমনই এসজি বলে অন্যতম সেরা পেস বোলার উমেশ যাদবের পারফরম্যান্সটাও গুরুত্বপূর্ণ।

উমেশ যাদব। ১০০ উইকেট না পাওয়া অথচ সত্তর-আশির নস্টালজিয়া মদন লাল, কার্সন ঘাউড়ি, রজার বিনি এমন কি মনোজ প্রভাকর, চেতন শর্মা বা ভেঙ্কটেশ প্রসাদদের নিয়ে সামান্য কিছু আলোচনা হলেও, সাম্প্রতিকতম অতীতের উমেশ যাদবকে আলোচনায় আনি না। ১৭০টা টেস্ট উইকেট নিয়েও।

উমেশ বিদেশের মাটিতে সফল নন, কিন্তু দেশের মাটিতে ঝুড়ি ঝুড়ি উইকেট পেয়েছেন। সেটা কি এসজি বলের উত্থিত সিম, রিভার্সে সুবিধা ইত্যাদি কারণে? সেটা নিয়ে একটু নাড়াঘাঁটা করি আসুন। প্রথমেই বলে রাখি স্ট্যাটস নিয়ে ঘেঁটে আপনাদের সামনে তথ্য রাখার সময় নেই বলে রাখতে পারছি না।

তবুও বক্তব্যের সমর্থনে প্রয়োজন পড়লে নিয়ে আসব। ওঁর দু একটা ইন্টারভিউ পড়লে আমরা দেখতে পাই, উমেশ ভরত অরুণের হাতে পড়ে চোট আঘাত সামলাবার জন্য সামান্য অ্যাকশনে পরিবর্তন করেছিলেন। শুরুতে উমেশের হাত কানের পাশ দিয়ে আসত। তাতে আউটস্যুইংটা সহজাত ছিল। কিন্তু কাঁধের চোট সামলাতে পরে সামান্য ‘রাউন্ড আর্ম’ অ্যাকশনে চলে যান। এখানেই পরিবর্তনটা লক্ষণীয়।

উমেশের দুর্বলতা যদি দেখতে হয়, তাহলে আমরা বলতে পারি লাইন এবং লেন্থ নিয়ে সমস্যা। ঠিক এই কারণেই, বেশ কিছু ভালো ইনিংস বোলিং থাকলেও ইশান্ত-শামির আগে উমেশকে ভাবা হয়নি। আর তারপর বুমরাহ চলে আসার পর তো আরই না।

আসলে উমেশ ইম্প্যাক্ট বোলার। উইকেটের চৌহদ্দীর মধ্যে টার্গেট করে বল রাখবেন, সহজাত আউট স্যুইং এবং পরবর্তীকালে ইনস্যুইং রপ্ত করে তা দিয়ে ব্যাটারদের কবর খুঁড়বেন। এটাই ভবিতব্য। কিন্তু প্রচুর রানও দেবেন। কারণ, এক জায়গায় বল রাখতে পারবেন না।

যে বোলার জায়গা রাখতে পারেন না, তাঁর জায়গাও তো নিশ্চিত হবার কথা নয়। তা হলে দেশের মাটি, ১৭০ উইকেট ইত্যাদি?

দেখুন, এক, উমেশ প্রথম দিকে ১৪০এর উপর গতি নিয়ে আউটস্যুইং অফকাট দারুণ বোলার হলেও, পরে একটু স্লিঙ্গিং রাউন্ড আর্ম অ্যাকশনে বল সামান্য ট্যারছা ছাড়া শুরু করলেন, অজিত আগারকার, মালিঙ্গা মনে করুন।

এখানেই ভরত অরুণের কাজ, উমেশের বল, সিমে না পড়ে সিমের পাশে পড়তে শুরু করল আর একটা উটকো সিম মুভমেন্ট পেতে থাকলেন। রিভার্স তো রয়েইছিল। নতুন বলেও বল স্যুইং করছে, কিন্তু পিচ পড়ার পর সিম করছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে বিপরীত দিকে। এ বল সামলাতে দাঁত কপাটি লেগে যায় ব্যাটারের।

তাহলে দেশের মাটিতে যে বোলার সফল বাইরে নন কেন? বিশেষত দক্ষিন আফ্রিকা, ইংল্যন্ড, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ায়? অস্ট্রেলিয়ায় পার্থে সেই ০-৪এর সিরিজে একটা পাঁচ উইকেট আছে উমেশের। সেই সিরিজে সত্যিই ভালো বল করেছিলেন। কিন্তু তা ছাড়া? আসলে উমেশ বরাবরই রান প্রচুর দিয়ে এসেছেন।

প্রথম সারির ভারতীয় বোলারদের মধ্যে স্ট্রাইক রেট উন্নত হলেও রানরেট সবথেকে বেশি। আর সেনা দেশগুলিতে ভারতের ব্যাটারদের গড় রান ভারতে বা এশিয়ায় করা গড় রানের প্রায় অর্ধেক। ফলে ভারতীয় ব্যাটাররা উমেশের মতো স্ট্রাইক বোলারকে কুশন দিতে পারেননি। ফল স্বরূপ উইকেট পেলেও চাপ রাখতে না পারার জন্য পিছনে চলে যান।

তার উপর বুম্ররাহ আর সিরাজের উত্থানের পর বয়স হয়ে যাওয়া উমেশের জায়গা হত না। এভাবেই উমেশ যাদব ভারতীয় দলে ব্রাত্য হয়ে গেলেন দ্রুত। অথচ যে সময়টায় খেলা শুরু করেছিলেন, তখন শামিও মার্কেটে আসেননি। বুমরাহ তো নয়ই, ইশান্ত শর্মা ২.০ও আসেনি।

ভারতের মূল বোলার হিসাবে উমেশ সেনা দেশগুলোয় যদি টেস্ট জেতাতে না পারেন তাহলে তাঁকে নিয়ে মাতামাতি করবই বা কেন! শ্রীলঙ্কা বা ভারতে ব্যাটাররা রানের কুশন দিয়েছেন আর উমেশ ফসল তুলেছেন। বর্তমানে রঞ্জি বা কাউন্টিতেও ভালো বল করছেন, কিন্তু ৩৬ বছরে ভারতের টেস্ট দলের দরজা একবার বন্ধ হলে আর খোলে না। কিছু না, ঋদ্ধিমান সাহাকে জিজ্ঞাসা করুন।

উমেশ যাদব। কোলিয়ারি থেকে উত্থান না হলেও কোথায় যেন হ্যারল্ড লারউডের সঙ্গে মিল পাই, বোলিং অ্যাকশন লারউডের মতো ড্র্যাগ করা না হলেও গতিতে বেশ ভয় ধরানো ছিল। কিন্তু বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাওয়াটা? ভারতের পরের পর টেস্ট সিরিজ জেতায় অশ্বিন-জাদেজার সঙ্গে উমেশের কথাটাও মনে পড়ে যায়, তাই না?

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...