অপ্রত্যাশিত অতি মূল্যায়ন

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) পাগলাটে এক নিলাম হয়েছে দু’দিন ব্যাপী। হুট করে চড়া দাম হাঁকাচ্ছেন ফ্রাঞ্চাইজিগুলো। পরক্ষণেই আবার হাঁকডাক একেবারেই নেই। প্রত্যাশার বাইরে  অনেক খেলোয়াড়কে কড়া মূল্যে কিনেছে ফ্রাঞ্চাইজিগুলো। মূলত মেগা অকশন খেলোয়াড়দের রেখে দেওয়া যাবে দুই-তিন মেয়াদে কিংবা তারও বেশি সময়। সেই পরিকল্পনা থেকেই অপ্রত্যাশিত পারিশ্রমিকে বিক্রি হয়েছেন অনেক খেলোয়াড়। তাঁদের একটা ছোট্ট তালিকা নিয়ে হাজির খেলা ৭১।

  • ওডেয়ান স্মিথ (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

এর আগে ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগের সবচেয়ে বড় আসর আইপিএলে খেলার সুযোগ হয়নি ওডেয়ান স্মিথের। তবে ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ ও পাকিস্তান সুপার লিগের মতো ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি আটটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর।

মূলত একজন বোলিং অলরাউন্ডার হওয়ায় তিনি বেশ চড়া দামেই বিক্রি হয়েছেন। তাঁকে দলে নিয়েছে পাঞ্জাব কিংস ছয় কোটি রুপিতে। আইপিএলে নবাগত একজন খেলোয়াড়ের পেছনে এত অর্থ ব্যয় অপ্রত্যাশিত।

  • ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা (শ্রীলঙ্কা)

২০২১ সালে অনুষ্ঠিত হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বল হাতে ছড়ি ঘুরিয়ে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা হয়েছিলেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। ব্যাটিং প্রদর্শন খুব একটা ভাল না হলেও। যুতসই ব্যাটিংই করেছিলেন হাসারাঙ্গা। তবে তাঁর জন্যে ১০.৭৫ কোটি রুপি খরচ করা কতটা যুক্তিযুক্ত প্রশ্ন থেকেই যায়।

কেননা ২০২১ সালে প্রথমবারের মতো আইপিএলে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। দ্বিতীয়ভাগে যুক্ত হয়েছিলেন রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুতে। সেখানে দুই ম্যাচ খেলে ছিলেন উইকেট শূন্য। তবে চারজন বিদেশি খেলোয়াড়দের ভীড়ে ঠিক কতটুকু সুযোগ পাবেন হাসারাঙ্গা তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। তবে দীর্ঘ পরিকল্পনার অংশ হিসেবেও ব্যাঙ্গালুরু অপ্রত্যাশিত এক মূল্যে দলে ভিরিয়েছেন হাসারাঙ্গাকে।

  • নিকোলাস পুরান (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

হার্ড-হিটার ব্যাটার হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটারদের বেশ একটা কদর রয়েছে ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটে। সেই দিক বিবেচনায় হয়ত ১০.৭৫ কোটি রুপিতে নিকোলাস পুরানকে দলে নিয়েছে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ। তবে বিগত বছরের পারফর্মেন্স ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স নিশ্চয়ই এত চড়া দামের স্বপক্ষে কথা বলে না।

গেলো আসরে ১২ ম্যাচ খেলেছেন পুরান করেছেন কেবল মাত্র ৮৫ রান। নিজের নামের প্রতি সুবিচার তিনি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও করতে পারেননি। সেখানেও ব্যর্থ তিনি। এসব কিছু মিলিয়ে নিকোলাস পুরানের পেছনের ১০ কোটি ৭৫ লাখ রুপি খরচ করা নেহাৎ অপচয় মনে হতেই পারে।

  •  রাহুল তেওয়াতিয়া (ভারত)

জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক ঘটেনি। ঘরোয়া টি-টোয়েন্টিতেও আশানুরুপ পারফর্মেন্স নেই। তবুও প্রায় নয় কোটি টাকা পারিশ্রমিক পেতে চলেছেন রাহুল তেওয়াতিয়া। গত আইপিএলেও এই বোলিং অলরাউন্ডারের হাইলাইট করার মতো কোন পারফর্মেন্স নেই।

১৪ ম্যাচ খেলে করেছিলেন কেবল ১৫৫ রান। স্ট্রাইক রেট ছিলো ১০৫ এর আশেপাশে। তাছাড়া এই ১৪ ম্যাচে ৪২.৫০ গড়ে উইকেট নিয়েছিলেন মাত্র আটটি। ২৮ বছর বয়সী এই খেলোয়াড়কে এত বেশি অর্থমূল্যে কেনার যৌক্তিকতা হয়ত আইপিএলের নবাগত ফ্রাঞ্চাইজি গুজরাট টাইটান্সেরও জানা নেই।

  • শাহরুখ খান (ভারত)

তরুণ, গায়ে জাতীয় দলের জার্সিও ওঠেনি এখন অবধি। অথচ সেই খেলোয়াড়ের দাম উঠেছে নয় কোটি রুপি। পাঞ্জাব কিংসের গেলো আসরের নিয়মিত মুখ ছিলেন শাহরুখ। মূলত একজন অলরাউন্ডার হিসেবেই বিক্রি হয়েছেন তিনি। তবে গত আইপিএলে তাঁর বোলিং দক্ষতার দেখা মেলেনি।

ব্যাট হাতেও যে খুব বিধ্বংসী কিছু করে ফেলেছিলেন তিনি তাও নয়। প্রায় ২২ গড়ে ১১ ম্যাচে রান করেছেন মোটে ১৫৩। হয়ত তাঁর মধ্যে থাকা প্রতিভা আন্দাজ করেই পাঞ্জাব নয় কোটি রুপি খরচে কার্পণ্য করেনি। তবুও এত মূল্য যে অপ্রত্যাশিত তা বলে দেওয়াই যায়।

  • রোমারিও শেফার্ড (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

সেই যে ক্যারিবিয়ানদের পেশির জোড়। সেই বিবেচনায় অখ্যাত রোমারিও শেফার্ড জায়গা করে নিয়েছেন সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ দলে। ৭.৭৫ কোটি রুপি খরচ করেছে ফ্রাঞ্চাইজিটি। এর আগে আইপিএল খেলার অভিজ্ঞতা নেই রোমারিও শেফার্ডের।

তবে ১৪টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলে তিনি ১২টি উইকেট নিয়েছিলেন। ব্যাট হাতে প্রায় ১৬০ এর কাছাকাছি স্ট্রাইকরেটে রানও তুলতে জানেন শেফার্ড। এছাড়াও গেলো বছর হওয়া ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে তিনি ছিলেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। নিয়েছিলেন ১৮ উইকেট নয় ম্যাচে। সেদিক বিবেচনায় হয়ত একটা জুয়া খেলে ফেললেন হায়দ্রাবাদ ফ্রাঞ্চাইজি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link