টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের বয়স নেহায়েৎ কম নয়। এই ফরম্যাটে দলটাকে আর নবীন বলারও উপায় নেই। লম্বা এই সময়ে প্রায় ১০০’র কাছাকাছি সংখ্যক ক্রিকেটার পেয়েছেন টেস্ট ক্যাপ। বলাই বাহুল্য, তার মধ্য থেকে সত্যিকারের টেস্ট ক্রিকেটার হতে পেয়েছেন হাতে গোটা কয়েকজন।
আবার এমন কয়েকজন ক্রিকেটার বাংলাদেশ সাদা পোশাকে পেয়েছে, যারা আদৌ খেলার এই প্রাচীন ও অভিজাত সংস্করণের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারেননি। খুব কম সংখ্যক টেস্ট খেলার পরই বোঝা হয়ে গেছে, টেস্ট তো বটেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটটা তাঁদের জন্য নয়। ইতিহাসের পাতা থেকেই হারিয়ে গেছেন তাঁরা।
- আলমগীর কবির
রাজশাহীর এই পেসার ২০০২ থেকে ২০০৪ – এই সময়ে তিনটি টেস্ট খেলেছেন। যদিও, তিনি উইকেটের খাতাই খুলতে পারেননি। রান করেছিলেন আটটি। ওয়ানডে ক্রিকেট খেলেননি কখনো।
তবে, ঘরোয়া ক্রিকেটে তিনি বড় ব্যাপার ছিলেন। ৫৪ টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে পেয়েছেন ১৮২ টি উইকেট। ২০০৯ সাল অবধি প্রতিযোগীতামূলক ক্রিকেট খেলে তিনি যোগ দেন কোচিংয়ে। এখনো তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) কোচের চাকরি করেন।
- রফিকুল খান
রাজশাহীর আরেক ক্রিকেটার। ওই সময়টাতে জাতীয় দলে রাজশাহীর ক্রিকেটারদের আধিক্য ছিল। ২০০২ সালে পচেফস্ট্রমে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয় রফিকুল খান। সেই টেস্টে দুই ইনিংস মিলিয়ে মিডল অর্ডারের এই ব্যাটসম্যান করেন মাত্র সাত রান। দু’বারই আউট হন জ্যাক ক্যালিসের বলে। অভিষেক টেস্টটা তাঁর শেষ টেস্টও বটে।
সেবারই একটা ওয়ানডে খেলেছিলেন, সেখানে রানের খাতা খোলার আগেই আউট হন। ঘরোয়া ক্রিকেটেও খুব বড় কিছু তিনি ছিলেন না। ৪৬ টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ২১৬৪ রান করা ব্যাটসম্যানকে টেস্ট খেলার সুযোগ কেন দেওয়া হয়েছিল, সেটাই বিরাট প্রশ্ন।
- আনোয়ার হোসেন
উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান, পুরান ঢাকার ছেলে। তাঁকে এক সময় মনে করা হত খালেদ মাসুদ পাইলটের উত্তরসুরী। ২০০২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বাংলাদেশ সফরে একটা করে টেস্ট আর ওয়ানডে খেলার সুযোগ হয়। টেস্টে সর্বসাকুল্যে ১৪ রান করেছিলেন এই ওপেনার।
তবে, একমাত্র ওয়ানডেতে করেন ৪২ রান। অভিষেক ওয়ানডেতেই এই রান করা বাংলাদেশের জন্য তখন বিশাল ব্যাপার। তারপরও কেন সেটা তাঁর শেষ ওয়ানডে? কারণ, ৪২ রান করতে তিনি খেলেছিলেন ১০৭ বল! উইকেটরক্ষক হিসেবে অবশ্য তরুণদের মধ্যে সেরাই ছিলেন, তবে তাতে কি লাভ! স্বয়ং খালেদ মাসুদ পাইলট যে তখনও বহাল তবিয়তে খেলে যাচ্ছেন।
- মোহাম্মদ সেলিম
স্রেফ ভাগ্যগুনে আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছিল মোহাম্মদ সেলিমের। ২০০৩ বিশ্বকাপের বাজে পারফরম্যান্সের জের ধরে সরিয়ে দেওয়া হয় অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক খালেদ মাসুদ পাইলটকে। নির্বাচকরা তখন আনেন মোহাম্মদ সেলিমকে, যার উইকেট কিপিং চলনসই হলেও ব্যাটিংটা মোটেও আন্তর্জাতিক মানের নয়।
দক্ষি আফ্রিকা দলের বাংলাদেশ সফরে দুই টেস্ট আর এক ওয়ানডে খেলার সুযোগ হয় তার। তাতে, টেস্টে সর্বোচ্চ ২৬ রানের এক ইনিংস-সহ করেন ৪৬ রান। আর একমাত্র ওয়ানডেতে করেন নয় রান। খালেদ মাসুদ ফিরলেই প্রয়োজন ফুরায় খুলনার ক্রিকেটার সেলিমের। যদিও, ২০১৪ সাল অবধি তিনি ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেছেন।
- আনোয়ার হোসেন মনির
মুন্সিগঞ্জের এই ছেলে ছিলেন ফাস্ট বোলার। ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়ান কন্ডিশনে অভিষেক। উইকেটশূণ্য ছিলেন। দুই বছর পর আবার গেলেন ইংল্যান্ড সফরে। পেস বোলারদের আরেক স্বর্গরাজ্য। এবার দুই টেস্ট খেলে আবারো উইকেটশূণ্য।
ওয়ানডে অভিষেক হয় ২০০২ সালে, দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে। সেখানে একটা ওয়ানডে খেলে কোনো উইকেট পাননি।