না পাওয়া এক টেস্ট ক্যাপের গল্প

জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করা যে কোন ক্রিকেটারের জন্যই এক পরম আরাধ্য ব্যাপার। আর তা যদি হয় টেস্ট ম্যাচের মত ক্রিকেটের সবচেয়ে অভিজাত সংস্করণ, তাহলে আর কথাই নেই। কিন্তু, এমন যদি হয়, টেস্টে প্রতিনিধিত্ব করার পরেও যদি কোনো কারণে সেই স্বীকৃতি না পান, তাহলে?

জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করা যে কোন ক্রিকেটারের জন্যই এক পরম আরাধ্য ব্যাপার। আর তা যদি হয় টেস্ট ম্যাচের মত ক্রিকেটের সবচেয়ে অভিজাত সংস্করণ, তাহলে আর কথাই নেই। কিন্তু, এমন যদি হয়, টেস্টে প্রতিনিধিত্ব করার পরেও যদি কোনো কারণে সেই স্বীকৃতি না পান, তাহলে?

ভাগ্যদেবতার এমনই এক নিষ্ঠুরতম পরিহাসের স্বীকার হয়েছিলেন এক ক্রিকেটার।

তিনি হলেন কনর সের্সিল উইলিয়ামস। ক্রিকেটের তেমন পরিচিত নাম নয়, নাম শুনে হয়ত ভাববেন তিনি এই উপমহাদেশের কেউ নন। যদিও, তিনি আসলে উপমহাদেশেরই একজন ক্রিকেটার। ভারতীয় এই ক্রিকেটার ২০০১ সালের ইরানি কাপের ফাইনালে জোড়া সেঞ্চুরি করে নির্বাচকদের নজরে আসেন। অনেকদিন ধরেই ছিলেন আলোচনায়, কারণ বারোদার হয়ে রঞ্জি ট্রফিতে তিনি বিস্তর রান করে ফেলেছেন ততদিনে।

এমন সময় এল ২০০১ সালের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর। দলে নির্বাচিত হন কনর। মুলত বিকল্প ওপেনার হিসেবেই তাকে দলে রাখা হয়। স্বপ্ন পূরণ হবে, প্রচণ্ড রোমাঞ্চিত ছিলেন কনর।

ভারতীয় ক্রিকেটে তখন নতুনত্বের হাওয়া। সৌরভ গাঙ্গুলির নেতৃত্বে একটু একটু করে ক্রিকেটের পরাশক্তি হয়ে উঠতে শুরু করেছে ভারত। যদিও, তিন টেস্ট সিরিজের প্রথমটি স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা জিতে নেয়।

পোর্ট এলিজাবেথে হয় দ্বিতীয় টেস্ট। ঐতিহাসিক এক আলোচিত ও বিতর্কিত ম্যাচ। ব্রিটিশ ম্যাচ রেফারি মাইক ডেনিস অতিরিক্ত আবেদন ও মাঠের শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য ভারতের ছয় ক্রিকেটারকে নিষিদ্ধ করেন। এদের মধ্যে শচীন টেন্ডুলাকারের বিরুদ্ধে বল টেম্পারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়।

বীরেন্দ শেবাগ, দীপ দাসগুপ্তা, শিবসুন্দর দাস , হরভজন সিংকে অতিরিক্ত আবেদনের জন্য এক ম্যাচ করে নিষিদ্ধ করা হয়। দলের খেলোয়াড়দের নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় দলের অধিনায়ক গাঙ্গুলিকে দুই ওয়ানডে আর এক টেস্টের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়।

ব্যস, এই নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়। পুরো ভারত ফুসে উঠে। বোর্ড অব কনট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই) তখন প্রভাবশালী হওয়া শুরু করেছে। বোর্ডের সভাপতি আবার স্বয়ং জগমোহন ডালমিয়া। তিনি আইসিসির কাছে নালিশ করেন। কোনো ভাবেই যেন শেষ টেস্টে মাইক ডেনিস না থাকেন, সেই সুপারিশ করেন।

আইসিসি এখানে অন্যরকম একটা চাল চেলে বসে। তারা কাউকেই নিরাশ করে না। শেবাগ ছাড়া বাকি সবার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। শেবাগের বদলী হয়ে শেষ টেস্টে ওপেন করতে নামেন কনর উইলিয়ামস। তবে, মাইক ডেনিসকে ম্যাচ রেফারি হিসেবে মানতে ভারত অস্বীকৃতি জানানোয় আইসিসির নির্দেশে ম্যাচটার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি কেড়ে নেওয়া হয়।

কনর প্রথম ইনিংসে পাঁচ রানে ফিরে যান। কিন্ত ‍দ্বিতীয় ইনিংসে শন পোলক, জ্যাক ক্যালিস, মাখায়া এনটিনি, ও ল্যান্স ক্লুজনারদের পেস আক্রমণের বিপক্ষে ৮৩ বলে ৪২ রানের এক দারুণ ইনিংস খেলেন। যদিও, তাতেও কোনো লাভ হয় নি। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আর কখনোই জাতীয় দলে সুযোগ হয়নি কনর উইলিয়ামেসের।

পরবর্তী ইংল্যান্ড সিরিজে তিনি দলে থাকলেও একাদশে সুযোগ পাননি। এরপর আর তিনি দলে ডাকই পাননি। ভারতের ২৪০ তম টেস্ট ক্রিকেটার হওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু, ম্যাচের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বাতিলের ঘোষণা আসার পর সেটা আর হয়নি। পরবর্তীতে সঞ্জয় ব্যাঙ্গার হন ভারতের ২৪০ তম টেস্ট ক্রিকেটার। টেস্ট ক্রিকেটের এত কাছ থেকে কোনো ক্রিকেটারই সম্ভবত ফেরত আসেননি।

বারোদা রঞ্জি দলের অধিনায়কত্ব করা কনরের তারপরও আক্ষেপের চেয়ে গর্বটাই বেশি। তিনি টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, ‘ভারতীয় দলে ডাক পাওয়াটাই আমার জন্য বিরাট সম্মানের ব্যাপার ছিল। সেই টেস্টের আগেই সবাই জানতো যে, ম্যাচটা আন্তর্জাতিক ম্যাচের স্বীকৃতি পাবে না। তবে, যাই হোক সেদিন দেশের হয়ে খেলতে নেমেছিলাম। আমি খুব খুশি ছিলাম।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link