সৌরভ ও রাজনীতির ময়দান

ক্রিকেট মাঠে না হলেও তিনি ব্যক্তিগত জীবনে সত্যিকারের এক অলরাউন্ডার। ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষে ধারাভাষ্যকার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি। বেশ কিছু সময় ধারাভাষ্যকার হিসেবে কাজ করার পর দায়িত্ব পান বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়ার (বিসিসিআই) সভাপতি হিসেবে। তবে বিসিসিআই সভাপতি যেন এবার খানিকটা ভিন্ন পথেই হাঁটছেন। সম্প্রতি রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সাথেও হরদম ওঠাবসা দেখা যাচ্ছে সৌরভের।

এইত গেল ক’দিন আগেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে নিজ বাড়িতে দাওয়াত করে আপ্যায়ন করেন তিনি। এর একদিন বাদেই আবার বেসরকারি হাসপাতালের এক অনুষ্ঠানে তৃণমূলের মন্ত্রী ও কলকাতার বর্তমান মেয়র ফিরহাদ হাকিমের সাথে দেখা মিলল সৌরভের। সেই অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকেও প্রশংসায় ভাসান সাবেক এই ভারতীয় অধিনায়ক।

অমিত শাহের সাথে সাক্ষাতের ব্যাপারে সৌরভ বলেন, ‘ওনার সঙ্গে আমার ২০০৮ সাল থেকে পরিচয়। খেলার সময়ে তাঁর সঙ্গে প্রায়ই দেখা হত। এর থেকে আর বেশি কিছু না। আমি ফিরহাদ হাকিমের বেশ কাছের একজন। প্ৰথম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে সে আমাকে দেখে আসছে। উনি আমাদের পারিবারিক বন্ধুর মত। অনেকেই ওনার সঙ্গে সাহায্যের জন্য যোগাযোগ করেন। আমিও বেশ কয়েকবার তাঁকে ফোন করেছি।’

মমতা ব্যানার্জিকে উদ্দেশ্যে করে সৌরভ বলেছেন, ‘আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি আমার খুব কাছের। এই প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে ওনার সাহায্য চেয়েছিলাম।’

সৌরভ কিংবা তাঁর স্ত্রী ডোনা গাঙ্গুলি এবার রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে ভোটে দাঁড়াতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। সৌরভের জনপ্রিয়তা কোনো অংশেই কম নয়। সেই জনপ্রিয়তাকেই যেন কাজে লাগাতে চাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো।

একসময় বুদ্ধদেব ব্যানার্জির বেশ প্রিয় মানুষ ছিলেন সৌরভ। ২০০৮ সালে বামদের সাথে মিলে টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যানকে সৌরভ অনুরোধ জানিয়েছিলেন যাতে টাটা ন্যানো তৈরির কারখানা ওই রাজ্যের বাইরে না নেওয়া হয়; যার বিরোধী ছিলেন মমতা। এরপর ২০১৫ সালে জগমোহন ডালমিয়ার মৃত্যুর পর মমতা ব্যানার্জির সাথে সাক্ষাত হয় সৌরভের। এরপর ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙলের (সিএসবি) সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি। এরপর গুঞ্জন ছিল জয় শাহের সাথে সাক্ষাতের পর বিসিসিআই সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান সৌরভ।

সৌরভের এমন কান্ডে যেন বেশ কিছু প্রশ্ন উঠছে সবার সামনে। রাজনীতির সাথে কি সৌরভ ফ্লার্ট করছেন তাহলে? গেল বছর বিধানসভা ভোটের সমত গুঞ্জন শোনা গেল বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দাঁড়াতে পারেন ৪৯ বছর বয়সী সাবেক এই ভারতীয় অধিনায়ক। এরপর অবশ্য হঠাৎ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় সেদিক থেকে সরে আসেন সৌরভ।

বাম নেতা অশোক ভট্টাচার্য তখন বলেছিলেন, ‘অনেকেই সৌরভকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে চাইছে। এতে হয়ত তাঁর ওপর মানসিক চাপ হয়ে যাচ্ছিল। সে মোটেও রাজনীতি করার মত মানুষ নয়। ক্রীড়াঙ্গনের আইকন হিসেবেই তাকে মনে রাখা উচিত। আমরা বলেছি, সৌরভের ওপর যেন কোনো চাপ না দেওয়া হয়। সৌরভকেও বলেছি, ও যেন রাজনীতিতে না যোগ দেয়। ও না করেনি।’

কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সৌরভ আদৌ যোগ দিচ্ছেন কি-না এমন কিছু নিশ্চিত নয়। তবে সৌরভের ঘনিষ্ঠ একজনের ভাষ্যমতে, ‘সৌরভ প্রিন্স অব কলকাতা। কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়ে ভক্তদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করবেন বলে মনে হচ্ছে না। সব রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সাথে তার পরিচয় আছে; যোগাযোগ পর্যন্তই থাকতে চান।’

লম্বা সময় ভারতের জার্সি গায়ে তিনি মাঠ মাতিয়েছেন। মুখ থুবড়ে পড়া ভারত দলটাকে আবার টেনে তুলেছিলেন। ২২ গজ মাতিয়ে রেখেছিলেন এক যুগেরও বেশি সময়। বিসিসিআই সভাপতি হিসেবে কাজ করে চলেছেন। ক্রিকেটের বাইরে জনপ্রিয় টিভি শো ‘দাদাগিরি’ ছাড়া এখন অবধি কিছু ভাবতে দেখা যায়নি সৌরভকে। তবে ২২ গজের পর রাজনীতির মাঠে লড়তে দেখা যাবে কিনা সাবেক এই ভারতীয় ক্রিকেটারকে – সেটা সময়ই বলে দিবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link