বিরাট কোহলি, দ্য সেঞ্চুরিয়ান

৮ টা বছর! জানেন কি, বিশ্বকাপের মঞ্চে ৮ বছর বাদে আবারো শতকের  ছোঁয়া পেলেন বিরাট কোহলি! শতকের যার এত সখ্যতা, অন্তরঙ্গতা, সেই কোহলি কিনা বৈশ্বিক আসরে সেঞ্চুরি পাননি ৮ বছর! বিস্ময়ে ডুব দিতেই হয়।

২০১১ বিশ্বকাপ দিয়ে বিশ্ব আসরে পা রাখা কোহলি প্রথম ম্যাচেই তুলে নিয়েছিলেন সেঞ্চুরি। সেই সেঞ্চুরির সাথে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশ আর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের নাম। বিরেন্দ্র শেবাগের ১৭৫ রানের বিধ্বংসী ইনিংসের দিনে কোহলিও করেছিলেন সেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ১০০ রানে।

এক যুগ বাদে, আবারো সেই একই প্রতিপক্ষ; বাংলাদেশ। কোহলি এবারও সেঞ্চুরি হাঁকালেন। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকলেন। এক যুগের সময়কালে পরিবর্তনটা শুধু ভেন্যুতে। মিরপুর থেকে বদলে গিয়ে দৃশ্যপটের দৃশ্যায়ন এবার পুনেতে।

তবে সেই সেঞ্চুরি নিয়েও কত জলঘোলা। জয়ের জন্য ভারতের দরকার তখন ২ রান। আর সেঞ্চুরির জন্য কোহলির দরকার ৩। এমতাবস্থায় প্রথম বলটি ডাউন দ্য লেগে করে বসেন নাসুম। অনুমিত ভাবেই বলটা ওয়াইড হওয়ার কথা। কিন্তু কোহলির পা এবং ব্যাট থেকে বেশ দূর দিয়ে বল গেলেও আম্পায়ার রিচার্ড ক্যাটলবরো আর ওয়াইড দেননি।

ব্যাস! সেই সুযোগটাই কাজে লাগালেন কোহলি। নাসুমের তৃতীয় বলে লং অন দিয়ে ছক্কা মেরে তিন অঙ্কের ম্যাজিক্যাল ফিগারে পৌঁছে যান কোহলি। আর এ সেঞ্চুরির পরেই মাঠেই নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে শুরু করেন ভারতীয় এ ব্যাটার। বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে সেঞ্চুরি যার কাছে রীতিমত অভ্যাস নামক এক বস্ত, সেই সেঞ্চুরিতেই কিনা কোহলির এমন প্রাণবন্ত উচ্ছ্বাস! কারণটা কী?

একদিনের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ৪৮ টা সেঞ্চুরি নিয়ে শচীন টেন্ডুলকারের ঘাড়ে তিনি নিঃশ্বাস ফেলতে পারেন। তবে বিশ্বকাপে এটি যে কেবল তাঁর তৃতীয় সেঞ্চুরি। সেই ২০১৫ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে এডিলেডে সেঞ্চুরি করেছিলেন। এরপরের আসরে তো তিনি ছিলেন সেঞ্চুরিশূন্য। এক আসরের সেই শূন্যতায় কোহলি তৃষ্ণার্ত করে তুলেছিল।

তাই তো বাংলাদেশের সঙ্গে এমন একপেশে ম্যাচেও অন্যতম আগ্রহের বিষয় ছিল কোহলির সেঞ্চুরি যাত্রা। বারবার সিঙ্গেল রানের সুযোগ থাকলেও নাকচ করেছেন কোহলি। তিনি যে সেঞ্চুরিটা চান, সেটি বারবার ফুটে উঠেছে মাঠে। বিরাট কোহলির সেই সেঞ্চুরিক্ষুধাই শেষ পর্যন্ত তাঁকে শতকের ছোঁয়া দিয়েছে। এক বিশ্বকাপ পর আবারো বিশ্বকাপের মঞ্চে শতক দিয়ে রাঙালেন তিনি।

তবে কোহলি সেঞ্চুরি করবেন, আর তাতে রেকর্ড হবে না, তা কী করে হয়! রানতাড়ায় এ নিয়ে ৬৬ বার পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেললেন কোহলি। যার মধ্যে রয়েছে সেঞ্চুরি ২৬টি, ফিফটি ৪০টি। কোহলির চেয়ে এ রেকর্ডে এগিয়ে আছেন শুধু একজনই; শচীন টেন্ডুলকার। ১৭ সেঞ্চুরি আর ৫২ ফিফটিতে রানতাড়ায় তিনি খেলেছেন ৬৯ টি ইনিংস।

ছক্কা মেরে নিজের সেঞ্চুরি আর দলের জয়। একটা ম্যাচের অন্তিম চিত্রায়ণ তো বুঝি এমন নায়কোচিত ভাবেই হয়। যেখানে ছক্কার সাথে ফেটে পড়ে পুরো গ্যালারি। ফুটতে শুরু করে বাজি। বিরাটের সেঞ্চুরির দিনে পুনের গ্যালারিটা ছিল ঠিক এমনই। যেন এক নীল সমুদ্র জলরাশিতে নৃত্য শুরু করেছে। যে আয়োজনের মধ্যমণি, বিরাট কোহলি, দ্য সেঞ্চুরিয়ান।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link