তিনি বাঘ ছিলেন একজন

তিনি টেস্ট খেলতেন ওয়ানডের মত। ওয়ানডে খেলতেন টি-টোয়েন্টির মত। টি-টোয়েন্টি খেলতেন সুপার ওভারের মত। আর এখনো তিনি তাঁর ‘উড়নচন্ডী মেজাজ’দেখিয়ে যান ১৪০ শব্দের ঘেরা টোপে, তার ট্যুইটগুলিতে। স্লগওভারের ব্যাটিংয়ের দীপ্তি ছুঁয়ে থাকে এখন তাঁর ট্যুইটগুলিতে। তিনি বাঘ ছিলেন একজন।

মার, মার, আরও মার, আবার মার। এই ছিল তাঁর ক্রিকেট দর্শন। তিনি অবসর ঘোষণা করেছিলেন ২০১৫ সালে, ৬ বছর আগের জন্মদিনে। ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আর ২০১১ সালের বিশ্বকাপ জয়ী ভারতীয় দলের সদস্য ছিলেন তিনি।

২০০৩ আর ২০০৭ বিশ্বকাপেও ভারতের হয়ে খেলেছিলেন তিনি। ২০০৭ বিশ্বকাপে বারমুডার বিরুদ্ধে ১১৪ আর ২০১১ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ১৭৫ ছিল তার। তিনি বাঘ ছিলেন একজন। ক্রিকেট বলটার জন্মই হয়েছে পেটানোর জন্য – এই ধারণার সেরা সাধকদের একজন এই বীরেন্দ্র শেবাগ।

১০৪ টি টেস্টের ৮৫৮৬ রান, ২৫১ টি ওয়ানডে ম্যাচের ৮২৭৩ রান, ১৯ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের ৩৯৪ রান আর ১০৪ টি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) ম্যাচের ২৭২৮ রানের চেয়ে অনেক বড়, প্রায় কয়েক বছর আগের দেশপ্রিয় পার্কের প্রতিমার মাপেই বড় ছিল তাঁর ব্যাটিং প্রতিভা।

ও হ্যাঁ, বোলিংয়েও তার দখলে ছিল ৪০ টি টেস্ট উইকেট, ৯৬ টি ওয়ানডে উইকেট আর ছয়টি আইপিএল উইকেট। টেস্টে ২টি ৩০০+ আর ছয়টি ২০০+ সহ মোট ২৩ টি ১০০+ ছিল তাঁর। আর ওয়ানডেতে ছিল একটি ২০০+ সহ ১৫টি ১০০+। তিনি বাঘ ছিলেন একজন।

টেস্টে একদিনে ২৮৪ বা ২৭৮ বলে ৩০০ তো ছিল হিমশৈলের চূড়া। খেলা ছাড়ার সাত বছর পরেও অনেকগুলি আন্তর্জাতিক আর ভারতীয় জাতীয় রেকর্ড আজও তাঁর দখলে। কোনদিন ব্যাটিংকে সিরিয়াস চোখে না দেখে ‘বিন্দাস মোডে’ ব্যাট করে যাওয়া তিনি ভারতীয় দলে ছিলেন এক ঝলক তাজা হাওয়ার মত। যা থেকে সোল্লাসে অক্সিজেন নিয়ে চাঙ্গা হয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট।

ইনিংসের প্রথম বলে ছয় মারতেন তিনি প্রায় নিয়মিতই। ৩০০’র প্রাক মুহূর্তে ছয় মারতেন তিনি, ৩০০-তে পৌঁছবার জন্য। জয়ের গন্ধ বা হারের ভ্রুকূটি, সব পরিস্থিতেই তাঁর ব্যাট ‘চলত’ তার মত করেই, নিরুদ্বেগ আর বিন্দাস। তিনি বাঘ ছিলেন একজন।

‘মারার জন্য ব্যাট আর মার খাওয়ার জন্য বল’- এই ক্রিকেট দর্শনেই মোট ১৪ বছর তিনি ব্যাট করে গেছেন ভারতীয় ক্রিকেটে। কেউ কেউ তাঁর টেকনিক নিয়ে প্রশ্ন তুলতেন এই বলে যে ফুটওয়ার্ক আর আইসাইট-ই তাঁর সাফল্যের কারণ। এ সব প্রশ্নকে বাউন্ডারি সীমানার বাইরে উড়িয়ে দিত তার পরিসংখ্যান আর নির্বিকার স্কোরিং শটগুলি। তিনি বাঘ ছিলেন একজন।

তিনি টেস্ট খেলতেন ওয়ানডের মত। ওয়ানডে খেলতেন টি-টোয়েন্টির মত। টি-টোয়েন্টি খেলতেন সুপার ওভারের মত। আর এখনো তিনি তাঁর ‘উড়নচন্ডী মেজাজ’দেখিয়ে যান ১৪০ শব্দের ঘেরা টোপে, তার ট্যুইটগুলিতে। স্লগওভারের ব্যাটিংয়ের দীপ্তি ছুঁয়ে থাকে এখন তাঁর ট্যুইটগুলিতে। তিনি বাঘ ছিলেন একজন।

একবার জন্মদিনেই করেছিলেন ক্যুইট, আজ তিনি ভারতের কিং অফ ট্যুইট। ভালো থাকুন তিনি, তার আনন্দদায়ক ব্যাটিংয়ের মতই।সৌরভ না, রাহুল না, শচীন না, তিনি বাঘ ছিলেন একজন, ভারতীয় ক্রিকেটে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...