ভারতের আহমেদাবাদ এখন রীতিমত উৎসবের নগরী। নীল রাঙা শহর বললেও কোন অংশেও ভুল বলা হয় না। বিশ্বকাপের দোরগোড়ায় যে ভারত। ঘরের ছেলেদের উৎসাহ দিতে লাখ দেড়েক দর্শক থাকবে নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে।
আর প্রায় তিন লাখ চোখ তাকিয়ে রইবে বিরাট কোহলির দিকে। ভারতের এবারের বিশ্বকাপ যাত্রায় বিরাটই যে দলের ব্যাটিংটা সামলে নিচ্ছেন নিউক্লিয়াস হয়ে। ৭১১ রান রয়েছে এই ব্যাটারের নামের পাশে। বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।
১০১.৫৭ গড়ে তিনি রান করে গেছেন টুর্নামেন্টের ফাইনালের আগ অবধি। স্বাভাবিকভাবে তিনিই ভারতের শিরোপা জয়ের অন্যতম চাবিকাঠি। তবে দুশ্চিন্তা কিঞ্চিৎ রয়েছে বটে। নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে বিরাটের অতীত ইতিহাস যে মোটেও সুখকর নয়।
এখন অবধি ৮টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন তিনি গুজরাটের সেই স্টেডিয়ামে। তাতে সুখস্মৃতি বলতে কেবল একটি অর্ধশতক। এছাড়া এই ব্যাটারের ব্যাট হাসেনি আহমেদাবাদে। সর্বসাকুল্যে রান করেছেন ১৯২ রান। গড়টা কেবল ২৪। এমনকি এবারের বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষেও কেবল ১৬ রান করেছেন তিনি এই মাঠে। এমন হতশ্রী পারফরমেন্স বিরাটের নামের পাশে বড্ড বেমানান।
শঙ্কাটা ঠিক সেখানটায়। আহমেদাবাদের স্টেডিয়াম বিরাটের জন্যে বড্ড অপয়া বলা যায়। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে যার ৫০টি সেঞ্চুরি, সেই বিরাটের কোন শতক নেই সুবিশাল এই স্টেডিয়ামে। এমন এক বিপরীতমুখী পরিসংখ্যান নিশ্চয়ই বিরাট মুছে ফেলতে চাইবেন।
আর বিশ্বকাপের ফাইনালে তেমনটি করতে পারলে নিশ্চিতরুপেই ‘অপয়া’ ভেন্যুই হয়ে উঠবে মধুর স্মৃতির জায়গা। বিরাট অবশ্য সে প্রস্তুতিই নিয়েছেন। এটা যে স্রেফ শিরোপা জয়ের একটি ম্যাচেই সীমাবদ্ধ নয়। এই ম্যাচে অন্তর্নিহিত আছে প্রতিশোধ।
বছর কুড়ি আগের এক ফাইনাল হারের প্রতিশোধ। বিরাটের কাছে যথেষ্ট জ্বালানি রয়েছে নিজের নামের পাশে আরও একটি সেঞ্চুরি যুক্ত করে নেওয়ার। পাশাপাশি নিজেকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগও বটে।
বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় বিরাট অবস্থান করছেন তৃতীয় অবস্থানে। তার উপরে রয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক রিকি পন্টিং। তবে এই দুইজনের মাঝে রানের ফারাক স্রেফ দুই। ম্যাচের বিচারে ৩৭ ম্যাচেই বিরাট পৌঁছে যাবেন দ্বিতীয় স্থানে।
এছাড়াও বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরি করার হাতছানি রয়েছে তার সামনে। আর একটি সেঞ্চুরিই তাকে যৌথভাবে বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির মালিক বানাবে বিরাট কোহলি। ইতোমধ্যেই তো তিনি ওয়ানডে ফরম্যাটে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির মালিক।
সেঞ্চুরির হাফ সেঞ্চুরি পেরিয়ে তখন ৫১ হবে সংখ্যা। তবে এসব কিছু করতে হলে বিরাটকে তার অপয়া ভেন্যুকেই বসে আনতে হবে। অতীতের সকল স্মৃতি মুছে ফেলে লিখতে হবে নতুন ইতিহাস। সে কাজটা বিরাট করতে জানেন দারুণভাবে।
দলকে খাদের কিনারা থেকে তুলে ইতিহাস গড়া, নিজের সামর্থ্যের সর্বোচ্চটুকু নিঙড়ে দিয়ে ব্যক্তিগত অর্জনের ঝুলি আরও সমৃদ্ধ করার ইতিহাস তো তিনি লিখে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
আরও একবার বিশ্বসেরা লিখবেন ইতিহাস। এক শিরোপা জয়ের রঙিন ইতিহাস। এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রানের ইতিহাস। আহমেদাবাদের ইতিহাস পালটে লেখা হবে ‘বিরাট’ ইতিহাস।