মিরপুর, কোহলি ও মুগ্ধতা!

মিরপুরে ভারত দলের অনুশীলন শুরু হবার কথা ছিল দুপুর দেড়টা থেকে। যদিও তাঁর খানিকক্ষন আগেই মাঠে নেমেছেন বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মারা। শুরুতে ভলিবল খেলে নিজেদের গাঁ গরম করেছেন। তখন থেকেই হোম ক্রিকেটে একটা শব্দ বারবার ঘুরে ফিরে শোনা যাচ্ছে।

মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে ঢোকার গেটটায় একদল লোক ভীর করেছে। তাঁদের মনে প্রশ্ন কোহলি আসে নাই? মাঠের ভিতরেও নানাজনের মুখে নামটা শোনা যাচ্ছিল। কখনো সাংবাদিকরা তাঁর ব্যাটিং দেখার আগ্রহ প্রকাশ করছেন। কখনো আবার নিরাপত্তাকর্মীরা নিজেদের কাজের ফাঁকে একবার কোহলির দিকে তাকাচ্ছেন।

প্রায় শ খানেক ক্যামেরা তাক করা মাঠটার দিকে। মাঠে তারকার অভাব নেই। তবে প্রতিটা লেন্স যেন একটা মানুষকেই খুঁজছে। এমন সময়েই মিরপুরের অ্যাকাডেমী মাঠের নেটের দিকে হাতে দুটা ব্যাট নিয়ে এগিয়ে যেতে দেখা গেল তাঁকে। তখনই মাঠের পাশের ক্রীড়াপল্লীর জানালা থেকে ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের চিৎকার। ওদের মুখেও একটাই শব্দ কোহলি, কোহলি।

এরপর ধীরে ধীরে নেটের দিকে এগিয়ে গেলেন। নিজের গার্ডটা ঠিক করলেন। বাংলাদেশের এসে অনুশীলনে নিজের প্রথম বলটা খেলবেন। শুরুতে কোহলি কী একটু শেকি থাকবেন? নাহ, শেকিনেস ব্যাপারটার সাথেই হয়তো পরিচয় নেই এই ব্যাটারের। প্রথম বলেই কোহলির ট্রেডমার্ক কাভার ড্রাইভ।

অনুশীলন করতে আসলে শুরুর দিকে সাধারণত ব্যাটাররা সময় নেন। নিজেকে একটা হৃদমে নিয়ে আসেন। তবে কোহলি যেন অন্য ধাতুতে গড়া। নিজের প্রথম বল থেকেই তিনি টু দ্য স্পট। আপনার মনে প্রশ্নটা আসতেই পারে। কোহলির কাছে কী প্রথম বল বলে আদৌ কিছু আছে? নাকি এমন ব্যাট, গ্লাভস পরেই ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। পরদিন সকালে আবার একই জায়গা থেকে শুরু করেন।

এইযে এতগুলো মানুষ, এত সাংবাদিক কিংবা ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের ঘন্টাখানেকের অপেক্ষা। এসবকিছুই যে বৃথা নয়, সেটাই প্রমাণ করলেন বিরাট কোহলি। প্রথম বলে কাভার ড্রাইভের পর পরের বলটায় ডিফেন্স করেছেন তবে মাঝ ব্যাটে। আর তৃতীয় বলটায় আবারো চোখ জুড়ানো এক কাভার ড্রাইভ। বুঝি এইসবকিছু একটা চিত্রনাট্য, সব লেখাই ছিল, কোহলি শুধু নিজের রোলটা প্লে করছেন।

এরপর কোহলি বেশখানিক্ষণ নিজের মত করে অনুশীলন করেছেন। তবে প্রথম তিন বলে খেলা তাঁর শটগুলোই এই অসংখ্য মানুষের মনের ক্ষুধা মিটিয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ দলও নিশ্চয়ই একটা সতর্কবার্তা পেল। ভারতের সাথে ঘরের মাঠে এই সিরিজে বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠতে পারেন এই বিরাট কোহলিই।

অথচ কিছুদিন আগেও একটা রব উঠেছিল। বিরাট কোহলি যুগের বুঝি অবসান ঘটলো। লম্বা একটা সময় নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারছিলেন না। সেঞ্চুরির দেখা পাননি লম্বা একটা সময়। সেই দুঃসময় কোহলি কাটিয়ে উঠছেন। এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরি পাওয়ার পর থেকে নিজের আত্মবিশ্বাসটাও যেন ফিরে পেয়েছেন।

অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও দারুণ সময় কাটিয়েছেন। বাংলাদেশের সাথে খেলা ম্যাচটাতেও তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ৬৪ রানের অপরাজিত ইনিংস। ফলে চার তারিখ নিজেদের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে মাঠে নামার আগে বাংলাদেশের বোলারদের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা তিনিই।

ওদিকে মাঠে নামার আগেই বড় দুঃসংবাদ বাংলাদেশ শিবিরে। অধিনায়ক তামিম ইকবাল ইনজুরির কারণে ওয়ানডে সিরিজ থেকেই ছিটকে গিয়েছেন। এছাড়া এই মুহূর্তে দেশ সেরা পেসার তাসকিন আহমেদও খেলছেন না প্রথম ওয়ানডেতে। ফলে মাঠে নামার আগে নিজেদের দল সাজাতেও বেশ হিমশিম খেতে হবে বাংলাদেশ দলকে।

এছাড়া তামিম ইকবাল ছিটকে যাওয়ায় ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশের অধিনায়ক কে হবেন সেটাও এখনো অনিশ্চিত। অধিনায়ক হিসেবে এই সিরিজে দেখা যেতে পারে লিটন দাসকে। এছাড়া সিনিয়র হিসেবে সাকিব আল হাসানের নামটাও শোনা যাচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত অধিনায়ক কে হবেন সেটা এখনো জানা যায়নি।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link