এগারো মাস, চার ফাইনাল, এক শিরোপা

এগারো মাসে চারটি ফাইনালে অংশ নিয়েছেন একজন খেলোয়াড়। চারটি ভিন্ন টুর্নামেন্টের ফাইনালে। তিনটিতে দেখেছেন হার এবং একটিতে পেয়েছেন শিরোপার স্বাদ। বিচিত্র ঘটনা মনে হচ্ছে না? বিচিত্র বটেই। এমন এক বিচিত্র ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন পাকিস্তানের বা-হাতি পেসার ওয়াহাব রিয়াজ।

ওয়াহাব রিয়াজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পাকিস্তানের হয় এখন অবধি খেলেছেন সর্বোমোট ১৫৪টি ম্যাচ। ২৩৭ তাঁর উইকেট সংখ্যা। ২০২০ সালে পাকিস্তানের সবুজ জার্সিটি গায়ে জড়িয়েছিলেন তিনি। তারপর আর তাঁকে পাকিস্তানের জার্সি গায়ে মাঠে নামতে দেখা যায়নি। তবে ২০২১ এর পুরো বছর জুড়েই তিনি ছিলেন দারুণভাবে ব্যস্ত।

রিয়াজ ব্যস্ত ছিলেন ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগগুলোতে। পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (সিপিএল) ও টি-টেন লিগের মতো ক্রিকেট লিগগুলোতে বছরের একটা বড় সময় জুড়েই তিনি ছিলেন মাঠে। তবে সবচেয়ে আশ্চর্য্যজনকভাবে বছরের যে কয়েকটি ফ্রাঞ্চাইজি ভিত্তিক কিংবা ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগ ওয়াহাব খেলেছেন তাঁর সবগুলোর ফাইনাল অবধি উঠেছেন তিনি এবং তাঁর দল।

প্রথম ফাইনালটা ওয়াহাব খেলেছিলেন পিএসএলে। সেখানে পেশওয়ার জালমির হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন ওয়াহাব। তাঁর দল পেশওয়ার জালমি তৃতীয় স্থানে থেকে পার করেছিল প্রথম রাউন্ড। পুরো পিএসএল জুড়ে ওয়াহাব ছিলেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী। ১২ ম্যাচে তাঁর উইকেট সংখ্যা ছিল ১৮টি।

তবে মুলতান সুলতানের বিপক্ষে খেলা ফাইনালে তিনি ছিলেন যৌথভাবে সর্বোচ্চ রান দাতা। নিজের চার ওভারে দিয়েছিলেন ৫২রান। ছিলেন উইকেটে শূন্য। ব্যাট হাতেও ফিরেছিলান ডাক মেরে। মুলতান সুলতানের ২০৬ রানের বিপরীতে ৪৭ রানে হেরেছিল ওয়াহাবের পেশোয়ার জালমি। ওয়াহাবের বছরের প্রথম ফাইনাল হার। 

 দ্বিতীয় ফাইনালটা ওয়াহাব রিয়াজ খেলেছেন ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট লিগের ফাইনালে। তিনি ছিলেন সেইন্ট লুসিয়া দলে। ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগের ফাইনাল খেলা ওয়াহাব মোট দশটি ম্যাচ খেলেছিলেন ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ কেন্দ্রিক ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের ২০২১ আসরে। নিয়েছিলেন ১১ উইকেট। 

অভিজ্ঞতার ফলশ্রুতিতে তিনি জায়গা পেয়েছিলেন ফাইনালের একাদশে। ফাইনালে তাঁর দল আগে ব্যাটিং করে রান সংগ্রহ করে ১৫৯। সেখানে ওয়াহাবের অবদান এক বলে দুই। বল হাতে অবদান রাখতে আবার ব্যর্থ হন ওয়াহাব। চার ওভারে দিয়েছিলেন ৩৬ রান। অবশ্য এ দফা দুইটি উইকেট তিনি নিতে পেরেছিলেন। তবে শেষমেশ হার এড়াতে পারেনি তাঁর দল।

তৃতীয় ফাইনালের হার তিনি দেখেছেন ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগে। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড আয়োজিত ন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি লিগে ওয়াহাব ছিলেন সেন্ট্রাল পাঞ্জাবে। ১২ ম্যাচে উইকেট ১২। খায়বার পাখতুনেরখোয়া বিপক্ষে খেলা ফাইনালে ওয়াহাবের দল সেন্ট্রাল পাঞ্জাব হেরেছিল সাত উইকেটে। আগে ব্যাট করে পাঞ্জাব ১৪৮ রানে অলআউট হয়। জবাবে খুব অনায়াসে জয় পেয়ে যায় খায়বার পাখতুনখোয়া। সে ম্যাচে ওয়াহাব রিয়াজ দুই ওভারে দিয়েছিলেন আট রান। বাকি বোলারদের নির্বিষ বোলিং-এ জয় পেতে ব্যর্থ হয় পাঞ্জাব। তিন ফাইনাল হারের হ্যাট্রিক পূরণ হয় ওয়াহাব রিয়াজের।

অবশেষে এলো ওয়াহাবের দিন। পেলো বছরের প্রথম এবং শেষ শিরোপার স্বাদ। আরব আমিরাতের আবুধাবিতে আয়োজিত টি-টেন লিগে ওয়াহাব রিয়াজ খেলেছেন ডেকান গ্ল্যাডিয়েটর্স দলে। টি-টেনে তাঁর দল শুরু থেকেই খুব দাপটের সাথেই খেলেছে। প্রথম রাউন্ড পেরিয়েছিলো টেবিল টপ করেই।

ফাইনালে তাঁর দুই সতীর্থ টম কোহলার-ক্যাডমোর এবং আন্দ্রে রাসেলের ব্যাটিং তাণ্ডবে দশ ওভারে ১৫৯ রান সংগ্রহ করে। দিল্লী বুলস ওয়াহাব রিয়াজ, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, রাসেলদের নিয়ন্ত্রিত বোলিং মাত্র ১০৩ রান সংগ্রহ করতে পারে। আর এতেই অভাগা ওয়াহাবের ভাগ্য তাঁর দিকে ফিরে চাইলো।

অবশেষে তিন ফাইনাল হারার পর ওয়াহাব তাঁর চতুর্থ ফাইনাল জিতলেন।রাজা রবার্ট ব্রুসের ন্যায় তাঁকে আর অপেক্ষা করতো হলো না সপ্তমবারের জন্যে। অবশ্য একটি পঞ্জিকাবর্ষে সাতটি ফাইনাল খেলাও খানিক অসম্ভব। তবে হয়ত সময় কিংবা সুযোগ পেলে ওয়াহাব হেলায় হারিয়ে যেতে দিতেন না। আরো কিছু ফাইনাল হয়ত জিততে চাইতে কিংবা হেরে যেতেন ওয়াহাব রিয়াজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link