মুম্বাই টেস্টের সুরতহাল

অসাধারণ বোলিংয়ে আজাজ নিজের নামটি লিখিয়ে নিলেন ইতিহাসের পাতায়। ভারতের মুম্বাইয়ে ওয়াংকেড়ে স্টেডিয়ামে ভারত বনাম নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় টেস্টটি হতে পারতো শুধুই নিউজিল্যান্ড কিংবা আজাজ প্যাটেলের। তবে ভারতীয় ব্যাটার এবং বোলারদের অনবদ্য পারফর্মেন্সে টেস্টটিকে পুরোপুরি নিজের করে পেলেন না আজাজ কিংবা নিউজিল্যান্ড কেউই । মুম্বাইয়ের দ্বিতীয় টেস্টের গুরুত্বপূর্ণ পারফর্মেন্স এবং টার্নিং পয়েন্টগুলো সংক্ষিপ্ত আলোচনায় আপনাকে স্বাগতম।

প্রথম ইনিংসে ১০৯.৫ তম বল। স্ট্যাম্প বরাবর বল করলেন নিউজিল্যান্ডের বা-হাতি স্পিনার আজাজ প্যাটেল। তাতে ক্রস ব্যাটে স্লগ করার চেষ্টা ভারতের টেল-এন্ডার মোহাম্মদ সিরাজের। কিন্তু ঠিক মতো ব্যাটে বলে সংযোগ না ঘটায় বল উড়লো সোজা আকাশ বরাবর।

তারপর যখন নেমে এলো নিউজিল্যান্ডের রাচিন রবীন্দ্রের হাতে তখন সৃষ্টি হলো এক নতুন ইতিহাসের। ক্রিকেট ইতিহাসের অনন্য এক রেকর্ডের তৃতীয় ভাগিদারে পরিণত হলেন আজাজ প্যাটেল। কিংবদন্তি বোলার জিম লেকার ও অনিল কুম্বলের পর তিনি তৃতীয় বোলার যিনি কিনা টেস্টের এক ইনিংসে সব ক’টি উইকেট নেওয়ার গৌরব অর্জন করলেন।

অসাধারণ বোলিংয়ে আজাজ নিজের নামটি লিখিয়ে নিলেন ইতিহাসের পাতায়। ভারতের মুম্বাইয়ে ওয়াংকেড়ে স্টেডিয়ামে ভারত বনাম নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় টেস্টটি হতে পারতো শুধুই নিউজিল্যান্ড কিংবা আজাজ প্যাটেলের। তবে ভারতীয় ব্যাটার এবং বোলারদের অনবদ্য পারফর্মেন্সে টেস্টটিকে পুরোপুরি নিজের করে পেলেন না আজাজ কিংবা নিউজিল্যান্ড কেউই । মুম্বাইয়ের দ্বিতীয় টেস্টের গুরুত্বপূর্ণ পারফর্মেন্স এবং টার্নিং পয়েন্টগুলো সংক্ষিপ্ত আলোচনায় আপনাকে স্বাগতম।

  • মায়াঙ্ক আগারওয়াল ও অক্ষর প্যাটেলের ব্যাটিং 

প্রথম ইনিংসে জয়জয়কার যখন আজাজ প্যাটেলের ঠিক তখন তাঁর উল্টো চিত্রের রচনাও করেছেন ভারতীয় দুই ব্যাটার মায়াঙ্ক আগারওয়াল ও অক্ষর প্যাটেল। তাঁদের সাথে সঙ্গ দিয়েছেন শুভমন গিল। ওপেনিং এ ব্যাট করতে নেমে নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারের চতুর্থ শতক তুলে নেন মায়াঙ্ক। শতকেই থেমে যাননি মায়াঙ্ক। তা টেনে নিয়ে গিয়েছেন ১৫০ অবধি।

অন্যদিকে শুরু থেকে তাঁকে সঙ্গ দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৪৪ রান সংগ্রহ করেছেন সুভমন গিল। শেষের দিকে ১২৮ বলে অক্ষর প্যাটেলে ৫২ রান ভারতের জন্যে স্বস্তিদায়ক এক স্কোর দাঁড়ায়। কেননা ভারতীয় বাকি ব্যাটারদের মোট রান সংখ্যা মোটে ৬১।

  • আজাজ প্যাটেলের ইতিহাস সৃষ্টি

৩৩ বছর বয়সে এসে এমন এক দূর্ভেদ্য রেকর্ডে ভাগ বসালেন নিউজিল্যান্ডের বা-হাতি স্পিনার আজাজ প্যাটেল তা অধিকাংশ বোলারদেরই এক স্বপ্ন। কেননা ইতিহাসে প্যাটেল তৃতীয় এমন বোলার যে কিনা নিয়েছেন একটি ব্যাটিং লাইনআপের সব কয়েকটি উইকেট। ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি স্পিনার জিম লেকার প্রথম এই রেকর্ডটি করেন ১৯৫৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।

পরবর্তীতে ভারতীয় কিংবদন্তি অনিল কুম্বলে ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এই রেকর্ড ছুঁয়ে দেখেন। আজাজ ভারতের দশটি উইকেট নিতে খরচ করছেন ১১৯ রান। বল করেছন ৪৭.৫ ওভার। নিউজিল্যান্ডের বাকি বোলারদের সম্মিলিতভাবে বল করেছেন ৬২ ওভার। 

  • নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং ধসে ভারতীয় বোলারদের শিকার উৎসব 

আজাজ প্যাটেলের দশ উইকেট শিকারে ভারতকে তূলনামূলক কম রানেই আটকে ফেলতে পেরেছিল নিউজিল্যান্ড। ব্যাকক্যাপস ব্যাটাররা নিশ্চয়ই পরিকল্পনা করেছিল ভারতের সংগ্রগ টপকে মোটামুটি মানের একটা লিড নিয়ে নিতে পারবে অনায়াসে। কিন্তু না! ব্ল্যাকপসদের প্রত্যাশা আর পূরণ হলো না।

একমাত্র উমেশ যাদব ছাড়া বাকি সব বোলারদের উইকেট নেওয়ার উৎসবের মাঝে একেবারে তাসের ঘরের ন্যায় লুটিয়ে পড়ে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপ। মোহাম্মদ সিরাজের তিনটি, অক্ষরের দুইটি, রবিচন্দ্রন অশ্বিনের চারটি ও জয়ন্ত যাদবের একটি উইকেটের বিপরীতে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সর্বোচ্চ রান করেছেন তাঁদের পেস বোলার কাইল জেমিসন। তিনি করেছেন সতেরোটি রান। বাকিরা আশা-যাওয়ার মাঝে স্কোরবোর্ডে রান তুলেছে সর্বমোট ৬২।

  • ভারতের ব্যাটিং দৃঢ়তা

ফলোঅনে নিউজিল্যান্ড। ভারত কোন প্রকার ঝুঁকি না নিয়ে সিরিজ জয়ের আশায় দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যাট করতে নামে। তাঁদের ব্যাটিং অর্ডারকে আবার নেতৃত্ব দেন মায়াঙ্ক। তিনি করেন ৬৬ রান। তাঁর সাথে নামা ওপেনার সুভমন গিল করেন ৪৭, সমান সংখ্যক রান করেন চেতেশ্বর পুজারা। অধিনায়ক বিরাট কোহলিও রানের সন্ধান খুঁজে পান, করেন ৩৬ রান।

ইনিংস ঘোষণা দেওয়ার আগ মুহূর্তে অক্ষর প্যাটেল আবার নিজের ব্যাটিং স্কিল প্রদর্শন করে দ্রুততার সাথে ২৬ বলে ৪১ রান যোগ করেন স্কোরবোর্ডে। ২৭৬ রানে ইনিংস ঘোষণা করে ভারত। যার ফলে নিউজিল্যান্ডকে এভারেস্ট উচ্চতার এক টার্গেটে ব্যাট করতে নামতে হয় চতুর্থ ইনিংসে। ৫৪০ রানের টার্গেট টপকে যাবার ইতিহাস ক্রিকেটে বিরল।

  • ভারতীয় বোলারদের তাণ্ডবের দ্বিতীয় পর্ব

ভারত মোটামুটি নিশ্চিত যে তাঁরা জয় চায়। তাঁদের কাছে ছিল সূবর্ণ সুযোগ। নিউজিল্যান্ড যখন চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিং করতে নামে তখন কেবল টেস্টের তৃতীয় দিন চলমান। ভারতীয় বোলারদের হাতে পর্যাপ্ত সময় ছিলো নিউজিল্যান্ডকে অলআউট করে ম্যাচ সহ সিরিজ জিতে নেওয়ার। টার্নিং উইকেটে খুব একটা ভুল করলেন না ভারতীয় বোলাররা। তৃতীয় দিনের খেলার শেষ হওয়ার আগেই পাঁচ ব্ল্যাকক্যাপ ব্যাটারকে সাজঘরের ফেরান অশ্বিন ও অক্ষর জুঁটি।

মাঝের একটি রান আউট। চতুর্থ দিন সকাল বেলায় একেবারে চেপে ধরে নিউজিল্যান্ডকে ভারতীয় বোলাররা। অশ্বিন শেষ উইকেট হিসেবে হেনরি নিকলসকে তুলে নেওয়ার আগে বাকি চারটি উইকেট নিজের পকেটে পুরে নেন নিজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের পঞ্চম টেস্ট ম্যাচ খেলতে নামা জয়ন্ত যাদব। তাতে ১৬৭ রানে অলআউট হয়ে যায় নিউজিল্যান্ড।

ব্যাটিং এবং বোলিং উভয় ডিপার্মেন্টে নিউজিল্যান্ডের তুলনায় ঢের ভাল করে ভারত নিজেদের টেস্টে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয়টি তুলে নেয়। রান বিবেচনায় ৩৭৭ রানের এক ইতিহাস গড়া জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বিরাট কোহলির দল এবং ১-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ জিতে নিয়েছে তাঁর দল। তাছাড়া র‍্যাংকিং-এ নিউজিল্যান্ডকে পেছনে ফেলে শীর্ষস্থান দখল করে নিয়েছে ভারত।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...